বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২৭ March ২০১৯

স্বাধীনতাবিরোধীদের জন্য হচ্ছে ঘৃণাস্তম্ভ

# মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখতে আরো পাঁচ প্রকল্প # মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ডিজিটাল আর্কাইভ

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সংগৃহীত ছবি


নয় মাসের স্বাধীনতা সংগ্রামে এসেছিল একটি নতুন পতাকা আর মুক্তির নতুন সূর্য। এ সংগ্রামে মুক্তিযোদ্ধাদের গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার পাশাপাশি ছিল রাজাকার, আলবদর, আলশামসসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের ঘৃণ্য ভূমিকা। মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানীদের অবদান পরবর্তী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দিতে তাদের কথা ও কার্যক্রম অডিও ও ভিডিও আকারে ধরে রাখা হবে। স্থাপন করা হবে ডিজিটাল আর্কাইভ। এরই অংশ হিসেবে গড়ে তোলা হবে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্যানোরমা। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

অন্যদিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে প্রত্যক্ষ বিরোধীদের ঘৃণা জানাতে রাজধানীতে একটি ঘৃণাস্তম্ভ ও প্রতীকী নির্যাতন কেন্দ্র স্থাপন করা হবে। এ বিষয়ে ঢাকায় একটি ঘৃণাস্তম্ভ ও টর্চার সেলের রেপ্লিকা নির্মাণ শীর্ষক প্রকল্প প্রস্তাব করছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। দুটি প্রকল্পই চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) বরাদ্দ ও অনুমোদন ছাড়া অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২১ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এ দুই প্রকল্প বাস্তবায়ন করার লক্ষ্য রয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের আরএডিপিতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মোট ১১টি প্রকল্প রয়েছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৫ হাজার ১০৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে আবাসন ও অন্যান্য কল্যাণমূলক প্রকল্প বাদে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা জাগ্রত এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সামনে তুলে ধরতে নেওয়া হয়েছে ছয়টি প্রকল্প। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ব্যয় হবে ১ হাজার ১২ কোটি ১৫ লাখ টাকা।

এর মধ্যে রয়েছে শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থল সংরক্ষণ ও উন্নয়ন প্রকল্প, মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থানসমূহ সংরক্ষণ ও স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ, ঢাকাস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতার স্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়), নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধকরণ, মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্থাপনা সংরক্ষণ ও পুনর্নির্মাণ এবং মুক্তিযুদ্ধকালে শহীদ মিত্রবাহিনীর সদস্যদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্প। তবে বাস্তবায়নে ধীরগতির কারণে নির্ধারিত সময়ে এসব প্রকল্পের অধিকাংশেরই কাজ শেষ না হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এ অবস্থায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধরে রাখতে আরো পাঁচটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে চায় সরকার। ঘৃণাস্তম্ভ ও প্যানোরমা নির্মাণ ছাড়াও এ তালিকায় রয়েছে মুজিবনগর মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতিকেন্দ্র স্থাপন প্রকল্প। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে স্মৃতিসৌধ নির্মাণে পৃথক প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে। বিভাগীয় পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণ করা হবে অন্য একটি প্রকল্পের আওতায়।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্র জানায়, শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থল সংরক্ষণ ও উন্নয়ন শীর্ষক চলমান প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৬০ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। এর আওতায় সারা দেশে ২০ হাজার মুক্তিযোদ্ধার সমাধি সংরক্ষণ করা হবে। গত বছরের ৩০ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এর অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০২১ সালের জুনের মধ্যে এর কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

১৭৮ কোটি ৯৮ লাখ ৪৪ হাজার টাকা ব্যয় ধরে নেওয়া মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক স্থান সংরক্ষণ ও স্মৃতি জাদুঘর নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ চলছে ২০১৭ সালের জুলাই থেকে। এর আওতায় দেশের সব জেলার ২৯৩ উপজেলায় ৩৬০টি স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হচ্ছে। আগামী বছরের জুন মাসে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এতে এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে মাত্র ৬ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। এ প্রকল্পটির পরিচালক আবদুল হাকিম জানান, জমি না পাওয়ায় কিছু এলাকায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সমস্যা হচ্ছে। যেসব স্থানে জমি পাওয়া যায়নি সেসব স্থানের ডিসি ও ইউএনও সরকারি খাস জমি অথবা বেসরকারি জমি অধিগ্রহণ করবেন।

ঢাকাস্থ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতাস্তম্ভ নির্মাণ (তৃতীয় পর্যায়) প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৬৫ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। ঐতিহাসিক ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাষণ, দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর পরাজয়, আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষরের স্মৃতি সংরক্ষণ, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ভাষণের স্মৃতি সংরক্ষণসহ বিভিন্ন সময়ের নানা আন্দোলনের ঘটনা এবং মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে এ প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের শেষ দিনে এর কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধকরণ প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় হবে ৪৯ কোটি ২০ লাখ টাকা। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে জানাতে ভ্রাম্যমাণ জাদুঘর বাসের মাধ্যমে সারা দেশে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। ২০২২ সালের জুনের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি স্থাপনা সংরক্ষণ ও পুনর্নির্মাণ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৪১ কোটি ২৬ লাখ টাকা। প্রকল্পের আওতায় ৫৬টি জেলার ১৮৮টি উপজেলার ৩৪২টি স্থানে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে। আগামী জুনে মেয়াদ শেষ হতে যাওয়া প্রকল্পে এ পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে মাত্র ৫ কোটি ৯৮ লাখ টাকা।

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ মিত্রবাহিনীর সদস্যদের স্মরণে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ প্রকল্পেরও মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী জুনের মধ্যে। মুক্তিযুদ্ধে জীবন উৎসর্গকারী মিত্রবাহিনীর ভারতীয় ১ হাজার ৬৬১ জন শহীদ সৈনিকের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হবে। এ লক্ষ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হবে। একই সঙ্গে থাকবে শিশুদের জন্য বিনোদন পার্ক। ১৬ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে নেওয়া প্রকল্পটির প্রত্যাশিত অগ্রগতি না থাকায় সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১