আপডেট : ২২ March ২০১৯
বুড়িগঙ্গা ও তুরাগ নদের দুই তীরের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের ২৯ তারিখ থেকে অভিযান শুরু হয়েছে। নদী খরস্রোতা করে তুলতে চলতি মাসের ২৮ তারিখ পর্যন্ত এই অভিযান চলবে। গতকাল বৃহস্পতিবার মিরপুরের জহুরাবাদ, পালপাড়া, কাউনিয়া এলাকায় তুরাগ নদের উভয় তীরে উচ্ছেদ অভিযান চালায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। এদিন গাবতলী সেতু থেকে দিয়াবাড়ি জোহরাবাদ পর্যন্ত নদীতীরের ১৭৩টি অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এর মধ্যে তিনতলা দুটি, দোতাল ৭টি, একতলা ২৩টিসহ ৩২টি পাকা ভবন উচ্ছেদ করা হয়েছে। পাশাপাশি আধাপাকা ৩৮টি, ১০৩টি টিনের ঘর রয়েছে। অভিযানে অংশ নেওয়া বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্ম পরিচালক একেএম আরিফ উদ্দিন বলেন, কিছুদিন আগে উচ্চ আদালত তুরাগ নদকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা করেছেন। এখন নদের প্রাণ বাঁচানোর জন্য নির্দয় হলেও আমাদের সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। এই এলাকায় কিন্তু আগেও উচ্ছেদ অভিযান হয়েছে। আবার লোকজন এসে বসতি করেছে। এবার আর তেমনটা হবে না। কারণ আমরা এবার কোনো মানবিকতা দেখাব না। নদীরক্ষার প্রয়োজনে নির্দয় হতে হবে আমাদের। তিনি বলেন, এক পাশে বেড়িবাঁধ, এক পাশে নদী। মাঝখানে লোকজন বসতি বানাল কীভাবে? বাঁধ তো নদীর পাড়েই দেওয়া হয়েছিল! এখানে যারা বাড়িঘর বানিয়েছে, তারা জলসীমা ভরাট করে নদীকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে। তারা বলছে, এটা তাদের পৈতৃক ভিটা। এই দাবি মোটেও সত্য নয়। পৈতৃক ভিটা এমন বালি দিয়ে ভরাট থাকে! তিনি আরো বলেন, এই বালি কিসের বালি, সেটা সবাই জানে। কয়েক দিন আগে নদীর জমি ভরাট করে এখনো ভবন নির্মাণ করছে! দখলদারদের কারণে নদীর সৌন্দর্য কেউ দেখতে পারছে না। এরা দুই পাশ থেকে ভরাট করতে করতে জীবন্ত একটা নদীকে মেরে ফেলেছে। এটা চলতে দেওয়া যায় না। ঢাকার চারপাশের নদী দখলমুক্ত করতে চলমান অভিযানে নদীর সীমানা পিলারের বাইরেও অনেক স্থাপনা ভেঙে দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে বিআইডব্লিউটিএ বলছে, রাতের অন্ধকারে দখলদাররা নদীর মধ্যে সীমানা পিলার পুনঃস্থাপন করেছে। সরকারি ম্যাপ দেখেই উচ্ছেদ চালানো হচ্ছে। তুরাগ তীরের উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলোর বেশ কয়েকজন সদস্য জানিয়েছেন, পৈতৃক ভিটা থেকে তাদের সরিয়ে দিচ্ছে বিআইডব্লিউটিএ। তারা অভিযোগ করে বলেন, আমরা ব্রিটিশদের সময় থেকে এখানে বসবাস করছি। যে জমিতে আমরা আছি, সেই জমির জন্য নিয়মিত খাজনাও পরিশোধ করছি। তারপরও বিনা নোটিশে আমাদের এখান থেকে তুলে দিচ্ছে তারা। এমনকি কোনো ক্ষতিপূরণও দেয়নি। আমরা এখন কোথায় যাব? রাস্তায় বসা ছাড়া আমাদের কোনো উপায় নেই। এ সময় নিজেদের দাবির পক্ষে জমির দলিলসহ বিভিন্ন কাগজপত্রও দেখান অভিযোগকারীরা। ২০০০ সালের জলাধার সংরক্ষণ আইনে নদীতীরের প্রাকৃতিক জলাশয় বা নিম্নভূমি ভরাট করাকে আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। রাখা হয়েছে এক থেকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করার বিধানও। এই আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই গাবতলী এলাকার জোহরাবাদ, বড়বাজার, পালপাড়া, আমিনবাজার থেকে দিয়াবাড়ি আশুলিয়া পর্যন্ত নদের মাঝ পর্যন্ত দখল করা হয়েছে। গতকাল কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই জোহরাবাদ মৌজা থেকে আশুলিয়ার আগ পর্যন্ত কয়েকটি বহুতল ভবনসহ অসংখ্য স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রয়োজন পড়লে আমরা অবশ্যই আইনের আশ্রয় নেব। তবে এখনো আমরা সেটা নিয়ে ভাবছি না। যদি বাধা আসে কিংবা আবার নতুন করে এই স্থান দখলের পাঁয়তারা করা হয়, তখন আমরা অবশ্যই জলাধার সংরক্ষণ আইনে ব্যবস্থা নেব। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একনেক বৈঠকে ঢাকার চারপাশের নদী ও চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর দূষণ বন্ধ ও নাব্য ফিরিয়ে এনে নদীরক্ষায় টাস্কফোর্স গঠন করে দেন। তারই ধারাবাহিকতায় এ উচ্ছেদ কার্যক্রম চলছে। এই উচ্ছেদ অভিযানের ২১টি কার্যদিবসে বুড়িগঙ্গার কামরাঙ্গীরচর এলাকা থেকে শুরু করে ধারাবাহিকভাবে মিরপুরের বেড়িবাঁধ এলাকায় জহুরাবাদ, পালপাড়া পর্যন্ত তুরাগ নদের উভয় তীরে মোট ৩৪১টি পাকা স্থাপনা, আধাপাকা ৪০৩টি, পাকা বাউন্ডারি ওয়াল ১৬৬টি, অন্যান্য ১৮০১টিসহ ২৭১১টি অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। অবমুক্ত করা হয়েছে ৫৮ একর জায়গা, জরিমানা করা হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার টাকা।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১