বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ১৮ March ২০১৯

সংশোধিত এডিপিতে ঘাটতি ২৫ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা

এডিপি প্রতীকী ছবি


১ হাজার ৪৫১ প্রকল্প বাস্তবায়নে চলতি অর্থবছরের জন্য ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রণয়ন করে সরকার। এর মধ্যে ৪৩০ প্রকল্পের কাজ করার লক্ষ্য থাকলেও তা পূরণ হচ্ছে না। উল্টো বছরজুড়ে অনুমোদন দেওয়া ৪৩১ প্রকল্প যোগ হচ্ছে এডিপিতে। প্রকল্পের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো ১ লাখ ৮৯ হাজার ৪৭৬ কোটি ৬২ লাখ টাকা চাইলেও ১ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ধরে সংশোধিত এডিপি (আরএডিপি) চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। এর ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নে ঘাটতি দাঁড়াবে ২৫ হাজার ৪৭৬ কোটি ৬২ লাখ টাকা। এর ফলে অর্থবছরের বাকি সময়ে উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে অর্থের সঙ্কট হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, আগামীকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সভায় চলতি অর্থবছরের আরএডিপি উপস্থাপন করা হচ্ছে। রাজধানীর এনইসি সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিতব্য সভায় ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার আরএডিপি প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। বছরের শুরুতে সরকারের নিজস্ব তহবিল ও বিদেশি সহায়তা মিলে ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকার এডিপি প্রণয়ন করা হয়েছিল। এ হিসাবে সংশোধিত এডিপির আকার কমছে সাড়ে ৪ শতাংশের বেশি।

সংশোধিত এডিপিতে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকা। প্রকল্প সহায়তা হিসেবে বিদেশি উৎস থেকে বরাদ্দ দেওয়া হবে ৫১ হাজার কোটি টাকা। বছরের শুরুতে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ ছিল ১ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। আর বিদেশি সহায়তা হিসেবে বরাদ্দ ছিল ৬০ হাজার কোটি টাকা। এ হিসাবে সরকারি তহবিলের বরাদ্দ ১ হাজার কোটি টাকা বাড়লেও বিদেশি বরাদ্দ কমছে ৯ হাজার কোটি টাকা। সব মিলে এডিপির আকার কমছে ৮ হাজার কোটি টাকা।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, এনইসি বৈঠকে বরাদ্দে ঘাটতির বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর সামনে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা হবে। বেশ কিছু মন্ত্রণালয় ও বিভাগের পক্ষ থেকে বাড়তি বরাদ্দের চাহিদা রয়েছে। চাহিদার বিপরীতে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকেই বরাদ্দের ঘাটতি রয়েছে ২৬ হাজার ১৫৭ কোটি ৬০ লাখ টাকা। এ অবস্থায় সংশোধিত এডিপিতে শেষ পর্যায়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাড়তি কিছু অর্থ যোগ করতে পারেন বলে আশা করছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, এডিপিতে ছোট আকারের অনেক প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। রাজনৈতিক বিবেচনায় অনেক প্রকল্প নেওয়া হলেও বাস্তবায়নে গুরুত্ব থাকে কম। এ ছাড়া বেশি প্রকল্প থাকলে অর্থায়নেও সমস্যা হয়ে থাকে। ফলে বছরের পর বছর ঝুলে থাকা প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে যায়। তিনি আরো বলেন, ছোট আকারের বিপুলসংখ্যক প্রকল্প না নিয়ে মৌলিক অবকাঠামোর পরিবর্তনে সক্ষম বড় প্রকল্প নিতে হবে। সড়ক, রেল, বিদ্যুৎ খাতের প্রকল্পে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, সংশোধিত এডিপিতে এবার সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাচ্ছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এ বিভাগের অনুকূলে দেওয়া হচ্ছে ২৪ হাজার ৪৪১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। মূল এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ২৩ হাজার ৪৩৮ কোটি ১৯ লাখ টাকা। এ হিসাবে বাড়তি বরাদ্দ পেয়েছে ১ হাজার ৩ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এ ছাড়া দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে বিদ্যুৎ বিভাগ, এ বিভাগের অনুকূলে বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ২৩ হাজার ৪২০ কোটি টাকা। মূল এডিপিতে বরাদ্দ ছিল ২২ হাজার ৮৯২ কোটি ৬০ লাখ টাকা। বেড়েছে ৫২৭ কোটি টাকা। মূল বরাদ্দ থেকে ১ হাজার ১৭৪ কোটি টাকা কমলেও তৃতীয় অবস্থানে থাকা সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ পাচ্ছে ১৯ হাজার ৬৪৩ কোটি টাকা। মূল বরাদ্দ ছিল ২০ হাজার ৮১৭ কোটি টাকা।

খাতভিত্তিক বরাদ্দে এবার সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পেয়েছে পরিবহন খাত। এ খাতে দেওয়া হয়েছে মোট ৩৭ হাজার ৮৪০ কোটি টাকা।  দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ বিদ্যুৎ খাতে ২৩ হাজার ৪৬৯ কোটি ৪৮ লাখ এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ ২০ হাজার ৮৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ভৌত, পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন খাতে।

সর্বমোট আরএডিপি ১ লাখ ৭৪ হাজার ৬১৭ কোটি টাকা : কয়েক বছর ধরে সরকারের বিভিন্ন সংস্থার নিজস্ব তহবিলের প্রকল্প ব্যয় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির অন্তর্ভুক্ত দেখানো হচ্ছে। সংশোধিত এডিপিতে এ খাতে ৯ হাজার ৬১৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে। সরকারের নিজস্ব তহবিল ও বিদেশি সহায়তার ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার সঙ্গে এ অর্থ যোগ হলে আরএডিপির মোট আকার দাঁড়াবে ১ লাখ ৭৪ হাজার ৬১৬ কোটি ৭১ লাখ টাকা। বছরের শুরুতে প্রণয়ন করা এডিপিতে সংস্থার অর্থায়ন ছিল ৭ হাজার ৮৬৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এ খাতে বরাদ্দ বাড়ছে ১ হাজার ৭৪৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। শতকরা হিসাবে সংস্থার বরাদ্দ বাড়বে ২২ ভাগের বেশি। অবশ্য সংস্থার অর্থায়নসহ মূল এডিপির আকার ছিল ১ লাখ ৮০ হাজার ৮৬৯ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এ হিসাবে বরাদ্দ কমছে ৬ হাজার ২৫২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।

এনইসিতে উপস্থাপনের অপেক্ষায় থাকা পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশজ সম্পদ, বৈদেশিক অর্থায়ন ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা প্রাধান্য পাবে সংশোধিত এডিপিতে। এছাড়া সম্পদের লভ্যতা ও বরাদ্দের ব্যবহারও থাকবে বিবেচনায়। কৃষি, কৃষিভিত্তিক শিল্প, বিদ্যুৎ উৎপাদন, যোগাযোগ, আইসিটি শিক্ষার প্রসার ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতি পুনর্বাসন প্রকল্পেও থাকছে অগ্রাধিকার। পিপিপি অবকাঠামোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রকল্প, বিদেশি সহায়তার সুনির্দিষ্ট অঙ্গীকার রয়েছে এমন প্রকল্প এবং আঞ্চলিক বৈষম্য হ্রাসের প্রকল্পে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হবে। ধীরগতির প্রকল্পের বরাদ্দ কমিয়ে দ্রুতগতির প্রকল্পে বাড়ানো হবে। চলতি অর্থবছরে শেষ হবে এমন প্রকল্পে প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান নিশ্চিত করা হবে সংশোধিত এডিপিতে।

 


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১