আপডেট : ১৬ March ২০১৯
দেশের প্রায় ত্রিশ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে আর্থিক খাতে বিশাল ভূমিকা রাখছে পোল্ট্রি শিল্প। দেশে গার্মেন্ট শিল্পের পরই বিশাল সম্ভাবনাময় খাত হচ্ছে পোল্ট্রি। ’৮০-এর দশকে গুটিকয়েক মানুষ এ ব্যবসা শুরু করে। বর্তমানে এ শিল্প দেশবাসীর মাংস আর ডিমের চাহিদা মেটাতে অপরিহার্য এক খাতে পরিণত হয়েছে। এ খাতে কর্মরত আছে প্রায় ৩০ লাখ মানুষ, যাদের ৪০ শতাংশই নারী। নারীর ক্ষমতায়নেও এ শিল্প অনন্য ভূমিকা রাখছে। পোল্ট্রি শিল্পে বিনিয়োগের পরিমাণ ৩৫ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ২০৩০ সাল নাগাদ এ খাতে কর্মসংস্থান হবে ৫০ থেকে ৬০ লাখ মানুষের। মাথাপিছু আয় বাড়াতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এ খাত। জাতীয় অর্থনীতিতে এ শিল্পের অবদান ২ দশমিক ৪ শতাংশ। পোল্ট্রি শিল্পের বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশের পোল্ট্রি শিল্পে সরাসরি ২৫-৩০ লাখ লোকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা এ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল। এ শিল্পে বিনিয়োগ যত বাড়বে কর্মসংস্থানও তত বাড়বে। বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের মতে ২০৩০ সালে এ শিল্পের ওপর নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা এক কোটি ছাড়িয়ে যাবে। আবার পোল্ট্রি শিল্পে নিয়োজিত জনশক্তির শতকরা ৪০ ভাগই নারী। ফলে পরিবারে নারীদের স্বাবলম্বী হিসেবে প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি নারীর ক্ষমতায়নে বিশেষভাবে অবদান রাখছে এই শিল্প। বর্তমানে জাতীয় অর্থনীতিতে বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিল (বিপিআইসিসি) জানিয়েছে, সারা দেশে প্রায় ৬৫-৭০ হাজার ছোটবড় খামার আছে। বর্তমানে দেশে মুরগির মাংসের দৈনিক উৎপাদন প্রায় ১ হাজার ৮৫১ টন। প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ থেকে ২ কোটি ২৫ লাখ ডিম উৎপাদিত হচ্ছে। বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের সভাপতি মসিউর রহমান বলেন, ‘২০২১ সাল নাগাদ এ খাতে ৫৫ থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রয়োজন হবে। ২০১৪ সালে দেশে বার্ষিক ডিম উৎপাদন ছিল ৬৩৯ কোটি, ২০১৫ সালে ৭১২ কোটি এবং ২০১৬ সালে ডিম উৎপাদন ছিল ৮২১ কোটি। ২০২১ সাল নাগাদ বার্ষিক ডিমের চাহিদা দাঁড়াবে প্রায় ১ হাজার ৪৮০ কোটি। দেশীয় পুঁজি এবং দেশীয় উদ্যোগে তিলে তিলে গড়ে ওঠা পোল্ট্রি শিল্পটি দেশের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা রাখছে।’ এফএওর মতে জনপ্রতি ন্যূনতম ডিম খাওয়া উচিত বছরে ১০৪টি। উন্নত দেশগুলোতে জনপ্রতি গড়ে প্রায় ২২০টির মতো ডিম খাওয়া হয়। জাপানে জনপ্রতি ডিম খাওয়ার পরিমাণ বছরে প্রায় ৬০০টি। অথচ বাংলাদেশে বছরে মাথাপিছু ডিম খাওয়ার হার বর্তমানে প্রায় ৭০টি। অনুরূপভাবে, মাছ ও মাংস মিলে বছরে প্রাণিজ আমিষ খাওয়া দরকার বছরে অন্তত ২৫ থেকে ৩০ কেজি। কিন্তু বাংলাদেশে এর হার প্রায় ২৩ কেজি (মাংস ৮ কেজি, ১৫ মাছ)। সুষম খাদ্যের মধ্যে ডিম প্রথম সারির একটি খাদ্য। ডিম রক্তে লোহিত কণিকা তৈরি করে। ডিমে আছে ভিটামিন এ, ই, বি৬, বি১২, ফোলেট, ফসফরাস, প্রায় সব ধরনের ক্যালসিয়াম, আয়রন, জিংক, ম্যাঙ্গানিজ, সেলিনিয়াম, থিয়াসিন, এমিনো অ্যাসিড ইত্যাদি। একটি সিদ্ধ ডিম থেকে প্রায় ৮০ ক্যালোরি শক্তি পাওয়া যায়। বর্তমানে সাধারণ দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের জন্য কম দামে প্রাণিজ আমিষের জোগান দিচ্ছে এ শিল্প। শিশুর পেশি গঠন ও মেধার বিকাশ, শ্রমজীবী মানুষের শক্তির জোগান দেওয়াসহ সর্বোপরি স্বাস্থ্যবান জাতি গঠনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পোল্ট্রি শিল্প উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। মানুষের আয় বৃদ্ধি ও জীবনমানের উন্নয়নের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আগামীতে পোল্ট্রির চাহিদা আরো বৃদ্ধি পাবে। সেই চাহিদা মেটানোর জন্য পোল্ট্রি উৎপাদনে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন করা দরকার। এর জন্য দরকার পোল্ট্রি শিল্পের সমস্যাগুলো সমাধান করা। এজন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা থাকা দরকার। ডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি ফজলে রহিম খান শাহরিয়ার জানান, দেশে বর্তমানে মুরগির মাংসের দৈনিক উৎপাদন প্রায় ১ হাজার ৭০০ টন। প্রতিদিন ডিম উৎপাদিত হচ্ছে প্রায় দুই থেকে সোয়া দুই কোটি। পোল্ট্রি ফিডের বার্ষিক উৎপাদন ২৭ লাখ টন। এর মধ্যে বাণিজ্যিক ফিড মিলে উৎপাদিত হচ্ছে প্রায় ২৫ দশমিক ৫০ লাখ টন এবং লোকাল উৎপাদন প্রায় ১ দশমিক ৫০ লাখ। তিনি বলেন, বর্তমান বাজারে মুরগির মাংস ও ডিম সবচেয়ে নিরাপদ খাবার। জানা যায়, মাত্র তিন দশক আগেও পোল্ট্রি একটি শতভাগ আমদানিনির্ভর খাত ছিল। কয়েক বছর আগে সরকার এ শিল্প খাতটিকে কর অব্যাহতি সুবিধা প্রদান করে। সরকার প্রদত্ত এ সুবিধার কারণেই ২০০৭, ২০০৯ এবং ২০১১ সালে বার্ড ফ্লুর ভয়াবহ সংক্রমণে এ শিল্পের প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি এবং প্রায় ৫০ শতাংশ খামার বন্ধ হওয়ার পরও এ শিল্পের অগ্রগতি থেমে থাকেনি। জানা গেছে, ২০২১ সাল নাগাদ জনপ্রতি বার্ষিক ডিম খাওয়ার গড় পরিমাণ ১০৪টিতে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করেছে বর্তমান সরকার। প্রাণিজ আমিষের চাহিদা পূরণে সরকারের এ লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে হলে ২০২১ সাল নাগাদ দৈনিক প্রায় সাড়ে ৪ কোটি ডিম এবং দৈনিক প্রায় ৩ দশমিক ৫ থেকে ৪ হাজার টন মুরগির মাংস উৎপাদনের প্রয়োজন হবে। বিনিয়োগ দরকার হবে প্রায় ৫০-৬০ হাজার কোটি টাকা। প্রাসঙ্গিক কারণেই বাস্তবসম্মত স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বিদ্যমান আইন ও নীতিমালা সংশোধনের প্রয়োজন হবে। তা ছাড়া নিরাপদ খাদ্য ও ভোক্তার অধিকার নিশ্চিত করতে হলে সামগ্রিকভাবে পোল্ট্রি খাতে আরো বেশি আধুনিকায়ন এবং মানোন্নয়ন প্রয়োজন হবে।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১