আপডেট : ১৪ March ২০১৯
বিনোদনের প্রারম্ভিকে প্রথমে এলো রেডিও। তারপর এলো টেলিভিশন। যুক্ত হলো বিনোদনের নানা আয়োজন। কয়েক দশকের পালাবদলে টেলিভিশনের জন্যই নির্মিত হতে লাগল নাটক। বাংলাদেশে এক সময় নাটক মানেই ছিল বিটিভির অন্ধকার সেটে শুটিং, যেখানে দিন-রাতকে আলাদা করার উপায় ছিল না, একই সেটে হতো অনেক নাটকের দৃশ্যায়ন। তবু মানুষ প্রিয় নাটকের জন্য আগ্রহ নিয়ে বসে থাকত। সেই নাটকগুলোর গল্প দর্শকদের মন ছুঁয়ে যেত। দর্শক নাটকের মাঝে খুঁজে পেতেন নিজের জীবনের কাহিনি। আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত ভারতের দর্শক বাংলাদেশের নাটক দেখার জন্য অ্যান্টেনা তাক করে থাকতেন। আমাদের নাটক আরো সমৃদ্ধ করার জন্য বানানো হলো প্যাকেজ নাটক। এরপর নাটকের পালাবদল হলেও দর্শক এখন টিভি নাটক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। নানা কারণে আজ দর্শক টিভির বিনোদন নাটক নিয়ে আর উৎসাহ দেখাচ্ছেন না। তাই বলে যে তারা নাটক দেখেন না, তা কিন্তু নয়। সবাই এখন নাটক দেখেন ইউটিউবে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের টিভি চ্যানেলগুলো তাদের বৈশিষ্ট্য, কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখলেও আমাদের দেশের টিভি চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত নাটকগুলোর জনপ্রিয়তা যেন দিন দিন তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। প্রশ্ন আসে, কেন টিভি থেকে মুখ ফিরয়ে নিচ্ছেন দর্শক? এর পেছনে রয়েছে অনেক কারণ। দর্শক যেভাবে প্রত্যাশা করেন নাটকগুলো সেই প্রত্যাশা পূরণের ধারেকাছেও যায় না। বরং বর্তমান টিভি নাটকের শিল্পীদের বাচনভঙ্গি ও ভাষার বিকৃতি দেখে উল্টো বিরক্তি চলে আসে বলে মন্তব্য করেছেন অনেক দর্শক। অভিযোগের সুরে তারা বলেন, কোন চরিত্রে কীভাবে কথা বলতে হবে এটাও অভিনয়ের একটি বড় শিক্ষা। অথচ নতুনরা অনেকেই বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে না। ভাষার ক্ষেত্রে আঞ্চলিকতার নামে যাচ্ছে, তাই ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে। অথচ এক সময় নাটকের ভাষার প্রতি সবার আগে জোর দেওয়া হতো। বেশিরভাগ দর্শকের বক্তব্য হচ্ছে, নাটকের ভালো গল্প নেই। একই ঘরানার গল্প একই ধরনের ভাঁড়ামি দেখে দেখে ক্লান্ত তারা। নাটকের গল্প যদি ভালো না হয়। তাহলে সে নাটক প্রথমেই দর্শক গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। নাটকের অনেক পরিচালক আছেন যারা এই বিষয়টিকে গুরুত্ব না দিয়ে নামি তারকাদের দিয়ে অভিনয় করান। ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটকের বাকের ভাইয়ের কথা মনে আছে নিশ্চয়। বাকের ভাইয়ের যখন ফাঁসি হয় তখন পুরো জাতি কেঁদেছিল। সেখানে কোনো অতিরিক্ত গ্ল্যামার ছিল না। নাটকের চলমান পরিবেশ নিয়ে দর্শকের পাশাপাশি কথা হয় চলমান সময়ের বেশ কয়েকজন ব্যস্ত নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পীর সঙ্গে। পরিচালক মাসুদ সেজান বলেন, ‘নাটকের মান নিয়ে দর্শকরা অভিযোগ করছেন। মানহীন নাটকগুলো তারা খুব সহজেই এড়িয়ে যেতে পারছেন ইউটিউবে। এ ব্যাপারটি নির্ভর করছে চ্যানেল, নির্মাতা ও অভিনয়শিল্পীর ওপর। চ্যানেল যদি মানহীন নাটক না প্রচার করে, তাহলে নির্মাতা সেটি নির্মাণের চেষ্টা করবেন না। ইন্টারনেটের কারণে আমরা সহজেই মান যাচাই করতে পারছি। আমরা টিভি দর্শকের জন্যই নাটক নির্মাণ করি। সেটা যদি তাদের মনঃপূত না হয় তাহলে ব্যর্থতার দায় আমাদেরকেই নিতে হবে।’ এ বিষয়ে সালাউদ্দিন লাভলু বলেন, ‘আজ একটি নতুন কাজ করতে গেলে ভয় পাই। কারণ লগ্নিকারকরা আমাদের যে পরিমাণ টাকা দেন তা দিয়ে ভালো একটি নাটক তৈরি করা কঠিন হয়ে যায়। তার মধ্যে আবার টিভি চ্যানেলগুলো সময়মতো টাকা দেয় না। আমি মনে করি, টিভি চ্যানেলগুলোর আমাদের ওপর আরো নজর দেওয়া দরকার। এত প্রতিকূলতা পাড়ি দিয়ে একটা নাটক দর্শকের কাছে এসে পৌঁছায়। তবে নাটক দেখার সেই ‘ক্রেজি দর্শক’ কমে গেছে ইদানীং। এসব অভিযোগ নীরবে হজম করে যাওয়া ছাড়া কোনো পথ খোলা নেই নাট্যকার আর পরিচালকদের সামনে।’ তৌকীর আহমেদ বলেন, ‘গল্প, লোকেশনে ভিন্নতা, শিল্পীরা মন দিয়ে কাজ করছেন না— এসব কারণে টিভি নাটক থেকে দর্শকরা সরে যাচ্ছেন। নাটকের এসব সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে বাজেট স্বল্পতার সমস্যাকে উপড়ে ফেলতে হবে।’ এদিকে ইউটিউবে নাটক দেখা অনেকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন। এখানে কোনো বিজ্ঞাপন ভীতি থাকে না। সময় অপচয়ের কোনো বিষয় থাকে না। আরো সুবিধা হলো যখন ইচ্ছা তখন নাটকটি দেখা যায়। তারকারাও অভিনয় করে যারপরনাই খুশি। কারণ এসব নাটকে অভিনয় করলে তারকাদের অর্থপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে কোনো ভেজাল থাকে না। যখন একটি নাটক দর্শকপ্রিয়তা পায় তখন ভিউয়াসের্র সংখ্যা বেড়ে যায়। এতে করে সেই তারকাও জনপ্রিয়তা পায়। এ বিষয়ে মোস্তফা সারোয়ার ফারুকী বলেন, ‘এটা খুবই ভালো, অনলাইনে প্রডাকশন প্রদর্শনী নিয়ে আমি খুব আশাবাদী। কারণ এখানে নতুন কিছু দেখানোর সুযোগ থাকে। যেটা চ্যানেলে থাকে না। ফলে চ্যানেল বুঝতে শিখবে, যেনতেন প্রডাকশন দেখিয়ে এখন আর পার পাওয়া যায় না।’ বিদেশি চ্যানেল, বিদেশি সিরিয়াল সর্বশেষ ইউটিউবের কল্যাণে দেশি টিভি নাটক আস্তে আস্তে ডুবতে বসেছে। এ বিষয় থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে পরিচালকদের বাণিজ্যিক চিন্তা বাদ দিতে হবে। পাশাপাশি সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাও জরুরি। সেই সঙ্গে সৃজনশীল মানুষকে যুক্ত করতে হবে এই পেশায়। তবেই টিভি নাটক দর্শকের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠবে, এমন প্রত্যাশা সবার।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১