বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ০৮ March ২০১৯

পারমাণবিক অস্ত্রের ঝুঁকিমুক্ত পৃথিবী চাই

পারমাণবিক অস্ত্র সংগৃহীত ছবি


পরমাণু অস্ত্র ধ্বংস ক্ষমতার দিক থেকে অন্য সব অস্ত্রের চেয়ে অনেক বেশি ধ্বংসাত্মক। অন্য অস্ত্রের চেয়ে পরমাণু অস্ত্র নিয়ে বিশ্বের মাথাব্যথা বেশি। সারা বিশ্বে পরমাণু অস্ত্রসমৃদ্ধ দেশের সংখ্যাও কম নয়। মাঝে মাঝেই বিভিন্ন দেশের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হলে পরমাণু অস্ত্র প্রয়োগের বিষয়টি উঠে আসে। এতে বিশ্বের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়ে। ছোট এই পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার জন্য যেটুকু অস্ত্র দরকার, তার থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র পৃথিবীতে মজুত রয়েছে।

বিজ্ঞানের আশীর্বাদে মানবসভ্যতা আজ বহুদূর অগ্রসর হয়েছে। একবিংশ শতাব্দীর দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আমরা যেমন পৃথিবীকে উন্নত করতে পেরেছি, তেমনি নিত্যনতুন অত্যাধুনিক অস্ত্রে নিজেদের সজ্জিত করে সভ্যতাকেই হুমকির মুখোমুখি দাঁড় করিয়েছি। এটা আমাদের সফলতা না ব্যর্থতা তা এক বাক্যে স্বীকার করার সময় আমাদের এখনই আসেনি। তবে একবাক্যে একথা বলতে দ্বিধা নেই আমাদের এই সুন্দর ধরণির অস্তিত্ব হুমকিতেই রয়েছে। বিশ্বের পরাশক্তিগুলো একের পর এক মারণাস্ত্র বানিয়ে পৃথিবীকে হুমকির মুখে ফেলছে। নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে রেখেই যে এটা করছে তা নিশ্চিত। কিন্তু কেবল নিরাপত্তার অজুহাতে একের পর এক আধুনিক মারণাস্ত্র দিয়ে পৃথিবী ভরে ফেলছে এ কথা পুরোপুরি হয়তো সত্যি নয়। কোনোদিন যদি এই নিরাপত্তার অজুহাতই বুমেরাং হয়ে আমাদের ওপর চেপে বসে, তখন মানবজাতি কোথায় আশ্রয় নেবে? এক দেশ নতুন কোনো অস্ত্র বানাচ্ছে তো আরেক দেশ তার থেকেও ভয়ঙ্কর কোনো অস্ত্র বানিয়ে তাক লাগিয়ে দিচ্ছে। এসব অস্ত্রের ভয়াবহতা এতই যে, এই সুন্দর সবুজ শ্যামল পৃথিবী তার অস্তিত্ব হারাতে পারে। বহুবার এ ধরণি আধুনিক মারণাস্ত্রের আঘাতে কেঁপে উঠেছে। জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকির কথাই উদাহরণ হিসেবে টানা যেতে পারে। মুহূর্তের মধ্যে লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু ঘটে। সেই মৃত্যু এত ভয়ঙ্কর ছিল যে, কোনো ধ্বংসের সঙ্গেই এর তুলনা হয় না। এরপর শান্তি প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। তবে শেষ পর্যন্ত কি বিশ্বে শান্তি বিরাজ করছে? বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই উত্তেজনা। পেশিশক্তি দেখানোর প্রবণতা বিশ্বের মোড়ল দেশগুলোর মধ্যে। ভালো কাজের উদ্দেশ্যে ডিনামাইট আবিষ্কার করা হলেও সেই ডিনামাইট আজ মানুষের জীবন নেওয়ার কাজে ব্যবহূত হচ্ছে। 

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, উত্তর কোরিয়া, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স- এসব উন্নত দেশ প্রতিনিয়তই নতুন নতুন প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে অত্যাধুনিক অস্ত্র তৈরি করছে। ভিয়েতনামে দ্বিতীয়বারের মতো বৈঠকে বসেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং উন। মার্কিন ক্ষমতার মসনদে বসার পর থেকেই উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্র নিয়ে দুজনের মধ্যে একাধিকবার বাদানুবাদ হয়েছে। হুমকি পাল্টা হুমকি দিয়েছেন। তবে শেষ পর্যন্ত উভয় নেতাই আলোচনার টেবিলে বসার ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছেন। ফলে বিশ্ব স্বস্তি পেয়েছে। তবে নিরস্ত্রীকরণের রূপরেখা সুনির্দিষ্ট না হওয়ায় দুই দেশের মধ্যে দরকষাকষি চলছে। তবু একে বিশ্বের দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে বড় একটি অগ্রগতি বলা যায়। ট্রাম্প মনে করছেন পারমাণবিক অস্ত্র বাদ দিলে উত্তর কোরিয়া একটি বৃহৎ অর্থনৈতিক শক্তির দেশ হতে পারে।

চীনের তৈরি অস্ত্র পেছনে ফেলছে পশ্চিমা বিশ্বের তৈরি অস্ত্রকে। অস্ত্রের বাজারেও তাই চীনের আধিপত্য। আইআইএসএসের গবেষকরা বলছেন, চীনের অস্ত্র পশ্চিমা অস্ত্রের তুলনায় অন্তত ৭৫ ভাগ সক্ষমতাসম্পন্ন। কিন্তু দামে প্রায় অর্ধেক। সাম্প্রতিক সময়ে চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যযুদ্ধে দু’দেশেরই কিছু ক্ষতি হয়েছে। ক্ষমতাশালী অস্ত্রে রাশিয়া সমান তালে এগিয়ে চলেছে। সম্প্রতি রাশিয়া সব থেকে শক্তিশালী পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন ৫৮৬ ফুট লম্বা বরফভেদী জাহাজ সাগরে ভাসিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মেরুপ্রদেশ সামরিক দখলে নেওয়া এর একটা অন্যতম লক্ষ্য। এর সঙ্গে সঙ্গে চলছে চীন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।

দুই দেশই এমন জাহাজ আনার কথা ঘোষণা দিয়েছে। কেউ কারো থেকে পিছিয়ে নেই। কী মাটিতে, কী আকাশে বা মহাসাগরে। মহাশূন্যও দখলে নেওয়ার প্রতিযোগিতা চলছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সম্প্রতি নতুন একটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার তথ্য প্রকাশ করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী মহাকাশে সেন্সর বসানো হবে শত্রুর ছোঁড়া ক্ষেপণাস্ত্র চিহ্নিত করার জন্য। সেই ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করার জন্য মহাকাশেই স্থাপন করা হবে অস্ত্র। রাশিয়ার মতে, এতে মহাকাশে বিপজ্জনক অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু হতে পারে। তারা বিষয়টিকে স্নায়ুযুদ্ধকালীন সময়ের দিকে ইঙ্গিত করেন। এসব থেকে বোঝা যায় বিশ্ব অত্যাধুনিক সব সমরাস্ত্রে ভরে যাচ্ছে। এসব অত্যাধুনিক অস্ত্রের ভারে পৃথিবী কি সত্যিই করুণ কোনো পরিণতির দিকে হাঁটছে, তা সময়ই বলে দেবে।

অস্ত্রের ব্যবহার এবং তার ঝুঁকি অত্যন্ত মারাত্মক এবং দীর্ঘস্থায়ী। বিশ্বের অস্তিত্বের জন্য হুমকিস্বরূপ। সম্প্রতি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। ভারতে জঙ্গি হামলায় সেনাসদস্যের মৃত্যুর পর থেকেই দুই দেশের মধ্যে চরম এই উত্তেজনা বিরাজ করছে। নিজের ভূখণ্ড ছাড়িয়ে আরেক দেশে বিমান হামলার মতো ঘটনাও ঘটেছে। দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ দুটি দেশ ভারত ও পাকিস্তান। এই অঞ্চলের সামগ্রিক শান্তির জন্য দুই দেশের শান্ত থাকা আবশ্যক। কারণ দুটি দেশই পারমাণবিক ক্ষমতাসম্পন্ন দেশ। এখন দুই দেশ যদি নিজেদের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে না পারে, তবে দক্ষিণ এশিয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিশ্বও নিরাপত্তাজনিত হুমকিতে পড়ে যাবে। আর পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে গোটা এশিয়াকে। এমনকি আমাদের বাংলাদেশও এর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকতে পারবে না। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক— সবদিক থেকেই অস্থিতিশীল হয়ে উঠবে বিশ্ব। তাছাড়া দুই দেশের যুদ্ধাবস্থাকে কেন্দ্র করে বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার ইতিহাস রয়েছে। বিভিন্ন দেশ পক্ষ-বিপক্ষে ভাগ হয়ে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে অতীতেও। বলা হচ্ছে, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলে তা বিশ্বের অস্তিত্বই ধ্বংস করে দেবে। কেননা সামরিক দিক থেকে শক্তিশালী দেশগুলোর হাতে পৃথিবীবিনাশী মারাত্মক সব অস্ত্র রয়েছে। সুতরাং এ মুহূর্তে পৃথিবীর মানুষের শুধু একটিই চাওয়া— বিশ্ব পারমাণবিক অস্ত্র শঙ্কামুক্ত এবং নিরাপদ হোক।

 

লেখক : সাংবাদিক

ংড়ঢ়হরষ.ৎড়ু—মসধরষ.পড়স

 


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১