আপডেট : ০৭ March ২০১৯
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ উদ্বোধন হয়েছে আজ। তবে সিন্ডিকেটে আপত্তি থাকা সত্ত্বেও এ পদের দায়িত্ব নিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বঙ্গবন্ধু চেয়ারের নীতিমালা এখনও সম্পূর্ণ তৈরি হয়নি। তবে কিসের ভিত্তিতে এই নিয়োগ দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে নেই কোন সুস্পষ্ট নির্দেশনা। এ নিয়ে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫২০ তম সিন্ডিকেটে দুই সদস্য দ্বিমত পোষণ করেন। এর মধ্যে উপ উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার নোট অফ ডিসেন্ট দেন। জানা যায়, বিশিষ্টজনদের নামে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে 'চেয়ার অধ্যাপক' পদ রয়েছে। শিক্ষা ও গবেষণার প্রসারে এসব পদে সম্মানিত ব্যক্তিরা নিয়োগ পান। নিয়োগপ্রাপ্ত অধ্যাপক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষণা করে থাকেন। বাংলাদেশের উন্নয়ন, রাজনীতি, ইতিহাস প্রভৃতি বিষয়ে অধ্যাপক সমমর্যাদা সম্পন্ন একজন বিশিষ্ট গবেষক এ চেয়ারে নিয়োগ পেয়ে থাকেন। তিনি অধ্যাপকের সমান বেতন-ভাতা ও বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকার সুবিধা পান। এক বছরের মেয়াদ হলেও ক্ষেত্র বিশেষে তা দু'বছর করার সুযোগ রয়েছে। সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ২৭ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫১০ তম সিন্ডিকেট সভায় বঙ্গবন্ধু চেয়ারের অনুমোদন দেওয়া হয়। একই সভায় ওই চেয়ারের সৃষ্টি এবং প্রবর্তনের ব্যাপারে পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা তৈরি করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যকে প্রধান এবং বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রারকে সদস্য সচিব করে সাত সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি করা হয়। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীণ আখতার, কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. সেকান্দর চৌধুরী, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. মহীবুল আজিজ, নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক মাইনুল হাসান চৌধুরী। নির্দেশনা অনুযায়ী গঠিত কমিটি ২০১৮ সালের ৭ মে ও ৩ সেপ্টেম্বর এবং চলতি বছরের ৩ জানুয়ারী তিন দফা বৈঠকে মিলিত হন। সেই সাথে সর্বশেষ অনুষ্ঠিত ৩ জানুয়ারির সভায় সর্বসম্মতিক্রমে একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা সিন্ডিকেটে অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়। একই তারিখে উপাচার্যকে এই চেয়ারের জন্য সুপারিশ করা হয়। তবে ওই সভায় উপ উপাচার্য অনুপস্থিত ছিলেন। বিষয়টি যথাযথ প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়নি বলে সিন্ডিকেট সদস্য ও আওয়ামী বামপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন হলুদ দলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. সুলতান আহমেদ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, সিন্ডিকেটে বঙ্গবন্ধু চেয়ারে কারো নিয়োগের ব্যাপারে আলোচনা হয়নি। শুধুমাত্র এ পদ পরিচালনার জন্য যে নীতিমালা প্রয়োজন তা অনুমোদন করা হয়েছিল। যেহেতু বিষয়টি রিপোর্ট আকারে সিন্ডিকেটে আনা হয়েছে সেহেতু এ বিষয়ে বিশদ আলোচনা করা সম্ভব হয়নি। তবে বিষয়টি এজেন্ডা না করে সিন্ডিকেটে রিপোর্ট হিসেবে আনায় দুই সিন্ডিকেট সদস্য নোট অফ ডিসেন্ট দেন। আর বঙ্গবন্ধু চেয়ারের অনুমোদনের ব্যাপারে একাডেমিক কাউন্সিল সুপারিশ করেছিল কিন্তু নীতিমালা তৈরি হওয়ার পর একাডেমিক কাউন্সিলের কোন মতামত না নিয়ে সরাসরি সিন্ডিকেটে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে সিনেট সদস্য ও চবি শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. কাজী এস. এম. আলম কুদ্দুসী বলেন, বঙ্গবন্ধু চেয়ারের জন্য প্রণীত নীতিমালার প্রধান দুটি শর্ত হচ্ছে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলার ইতিহাস নিয়ে একাধারে ২০ বছর গবেষণা ও স্বীকৃত জার্নালে অন্তত ১০টি প্রকাশনা। কিন্তু এই চেয়ারের জন্য তিনি এই প্রধান শর্তগুলি পূরণ করেননি। তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমদ কোন কথা বলতে রাজি হননি। এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ইফতেখার উদ্দীন চৌধুরী বলেন, , ‘ছাত্রজীবন থেকেই আমি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে একজন নেতা/কর্মী হিসেবে বঙ্গবন্ধুর জীবন দর্শন লালন করে আসছি। বিশেষ করে ‘মুজিববাদ’ প্রতিষ্ঠার লক্ষে একজন নিবেদিত আদর্শিক কর্মী হিসেবে শিশু শেখ মুজিব থেকে শুরু করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পর্যন্ত তার জীবনকর্ম ও কীর্তি নিয়ে এবং একটি কঠিন সময়ে যখন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোনো গবেষণা ও লেখালেখি করতে মানুষ সাহস করতো না বরং ভয় পেতো; সে কঠিন সময়ে আমি মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে সকল রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে বাঁধা বিপত্তি অতিক্রম করে সম্পূর্ণ নিজ উদ্যোগে এবং আগ্রহে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু, প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা, শহীদ শেখ কামাল এবং বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শতাধিক গবেষণা প্রবন্ধ রচনা করেছি। তিনি আরও বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় বঙ্গবন্ধু চেয়ার নির্বাহী কমিটি আমাকে ‘বঙ্গবন্ধু চেয়ার’ পদে দায়িত্ব নেওয়ার সুপারিশ করেছে। নীতিমালায় উল্লিখিত বেতন-ভাতাসহ যে সকল সুযোগ-সুবিধার কথা বলা হয়েছে আমি তা ব্যতিরেকে এ গুরু দায়িত্ব গ্রহণের জন্য সম্মত হয়েছি। কারণ যে ব্যক্তি স্বপরিবারে আত্মবিসর্জনের মধ্যে দিয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছেন, তার জীবন-কীর্তি নিয়ে গবেষণা করতে কোনো ধরণের আর্থিক বা সংশ্লিষ্ট সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করা আমার কাছে একধরণের অপরাধ মনে হচ্ছে।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১