আপডেট : ০৭ March ২০১৯
আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করার কথা রয়েছে। অন্যদিকে ব্যবসা-বাণিজ্যে কর অব্যাহতি চাইবেন ব্যবসায়ীরা। এমন পরিস্থিতির মধ্যেও আগামী বাজেটে রেকর্ড রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হচ্ছে, যার বড় অংশই আসবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয় থেকে। সূত্র বলছে, সরকারের উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন ব্যয় থামবে না। বরং নতুন সরকার উন্নয়ন কর্মকাণ্ড আরো বেশি হাতে নেবে। ঋণ ও ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় ধারাবাহিকভাবে চলছে। এসব বিবেচনায় বড় আকারের রাজস্ব আহরণ করতে চায় সরকার। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, এই লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি হবে। আর বাজেটের আকার দাঁড়াতে পারে ৫ লাখ কোটি টাকা। হিসাব মতে, রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রা বাড়তে পারে প্রায় ২৭ শতাংশ। তবে এই হিসাব এখনো চূড়ান্ত নয়। অর্থনীতিতে নানা সঙ্কট চলছে। নগদ টাকার টানাটানি, ডলার সঙ্কট, বিনিয়োগে মন্দা, খেলাপি ঋণ, ব্যাংক খাতে সুশাসন ঘাটতি অর্থনীতিকে চেপে ধরেছে। এর মধ্যে বড় আকারের রাজস্ব আহরণ অতিরিক্ত চাপ তৈরি করবে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট দিয়ে গেছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকার বাজেট দেন তিনি, যার মধ্যে রাজস্ব আয় ধরা হয় ৩ লাখ ৫ হাজার ৯২৮ কোটি টাকা। এই লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে এনবিআর নিয়ন্ত্রিত কর থেকে সরকার আদায় করতে চায় ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা। বাকি ৯ হাজার ৭২৭ কোটি টাকা আদায় হবে এনবিআর-বহির্ভূত কর ব্যবস্থা থেকে। এনবিআর নিয়ন্ত্রিত করের ৩৭ দশমিক ৩ শতাংশ আসবে ভ্যাট থেকে, আমদানি শুল্ক থেকে আদায় হবে ১১ শতাংশ, আয়কর থেকে চলতি অর্থবছরে সরকার আদায় করতে চায় ৩৪ শতাংশ। সম্পূরক শুল্ক থেকে আদায় হবে ১৬ দশমিক ৫ শতাংশ। আর অন্যান্য উৎস থেকে রাজস্ব আসবে ১ দশমিক ২ শতাংশ। কিন্তু এনবিআরের সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য বলছে, ডিসেম্বর পর্যন্ত কর আদায় হয়েছে ৯৮ হাজার ২৭ কোটি টাকা। এই সময় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১ লাখ ২৬ হাজার ২৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ আদায় হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। আর রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৩৬ শতাংশ। অথচ বিগত ৫ অর্থবছরের আহরণ প্রবৃদ্ধির গড় হার ছিল ১৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ। জানা যায়, ২০১২ সালে সরকার ভ্যাট আইন প্রণয়ন করে। তারপর এটি কার্যকর করতে উদ্যোগ নিলেও ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে সেখান থেকে সরে আসে সরকার। এটি সংশোধন করে চলতি অর্থবছর থেকে কার্যকর করার কথা রয়েছে। ফলে রাজস্ব আহরণ কিছুটা কমে যাবে। অন্যদিকে, ব্যবসায়ীরা এবারো করপোরেট করহার কমানোর জন্য একাট্টা হচ্ছেন। শেষ পর্যন্ত তারা সফল হলে সরকারের রাজস্ব আহরণ আরো কমে যাবে। এনবিআরের কর্মকর্তা বলছেন, বিদ্যমান কর ব্যবস্থার মধ্যে বড় আকারের রাজস্ব আহরণ করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। রাজস্ব বাড়াতে চাইলে কর কাঠামোতে সংস্কার দরকার। বিশেষ করে করের আওতা বাড়াতে হবে। নতুন নতুন কর ক্ষেত্র খুঁজে বের করতে হবে। জানা গেছে, নতুন অর্থবছর থেকে ঢাকায় বাড়ি ও ফ্ল্যাটের মালিকদের প্রত্যেককে করের আওতায় আনতে চায় এনবিআর। এজন্য এরই মধ্যে এনবিআর একটি জরিপ পরিচালনা শুরু করেছে। জরিপের সুপারিশের ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেওয়া হবে। এ ছাড়া পরিবহন খাত থেকে রাজস্ব আহরণ বাড়াতে চায় এনবিআর। এজন্য সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। আওয়ামী লীগ সরকার টানা তৃতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট হবে প্রথম বাজেট। এই মেয়াদে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সরকারের দ্বিতীয় মেয়াদে পরিকল্পনা মন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে। তিনি দেশে ও বিদেশে হিসাববিদ হিসেবে পরিচত। এর আগে আবুল মাল আবদুল মুহিত টানা বাজেট দিয়ে ইতিহাস তৈরি করে গেছেন। আগামী রোববার থেকে কামাল নতুন বাজেট নিয়ে আলোচনা শুরু করছেন। প্রথম দিন তিনি বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা পরিষদ (বিআইডিএস), পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই), বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতিসহ দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় আয়োজন করা হয়েছে প্রথম প্রাক-বাজেট আলোচনা। এরপর ধারাবাহিকভাবে পেশাজীবী ও ব্যবসায়ীদের মতামত নেওয়া হবে। এনবিআরও আলাদাভাবে বাজেট আলোচনার আয়োজন করে থাকে। জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা গতকাল বুধবার বলেন, এরই মধ্যে অভ্যন্তরীণভাবে বাজেট শাখার কাজ শুরু হয়েছে। অর্থমন্ত্রীও কাজ করছেন। আশা করা যায়, এবার বাজেটে কিছুটা ভিন্নতা আসবে। রাজস্ব আহরণ ও ব্যয় সবকিছুতেই তীক্ষ নজর রাখবেন নতুন অর্থমন্ত্রী।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১