বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২৮ February ২০১৯

বইমেলা প্রতিদিন

বৃষ্টিস্নাত এক দিন

বাংলা একাডেমিতে গতকাল সোনাগাজী উপজেলা চেয়ারম্যান জেড এম কামরুল আনামের লেখা ‘শ্রমিকের বঙ্গবন্ধু’ কাব্যগ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান এমপি ছবি : বাংলাদেশের খবর


কয়েক দিন ধরেই বৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছিল। অবশেষে সেই আশঙ্কাই সত্যি হলো। প্রচণ্ড বৃষ্টিতে ভেসে গেছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। বৃষ্টির কারণে গতকাল নির্ধারিত সময়ের আগেই সন্ধ্যা ৬টায় গ্রন্থমেলা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বৃষ্টির কারণে মেলায় দর্শনার্থীদের আগমনও ছিল না তেমন। প্রকাশকরা সারা দিন বৃষ্টির কবল থেকে বই রক্ষার জন্য সংগ্রাম করেছেন। সেই অর্থে এদিন গ্রন্থমেলায় তেমন বেচাকেনাও হয়নি। সব মিলিয়ে শেষের দিকের এই বৃষ্টি গ্রন্থমেলাকে ফ্লপদিন উপহার দিয়েছে গতকাল। বাংলা একাডেমির দেওয়া তথ্যমতে গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ২৪৮টি। গল্পগ্রন্থ ২৪, উপন্যাস ৩০, প্রবন্ধ ১২, কাব্যগ্রন্থ ১০২ ও অন্যান্য বিষয়ক গ্রন্থ ৬২টি। এদিন বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘বইমেলা : উদ্যোগ ও অর্জন’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন শাহিদা খাতুন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ওসমান গনি, রেজানুর রহমান, ফরিদ আহমদ দুলাল এবং জালাল আহমেদ। সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম।

প্রাবন্ধিক বলেন, গ্রন্থমেলার প্রাপ্তি ও অর্জনের বিষয়টি কিছুটা আপেক্ষিক। এর অনেক প্রশংসনীয় উদ্যোগের পাশাপাশি রয়েছে অনেক সীমাবদ্ধতা, অতৃপ্তি আর অপূর্ণতা। বাংলা একাডেমি বাঙালি জাতির আত্মপরিচয় আর আত্মবিশ্বাসের স্রোতস্বিনী একটি প্রতিষ্ঠান। তাই জাতির মানস গঠন ও বিকাশের ক্ষেত্রে বাংলা একাডেমির ভূমিকা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। একুশের যে প্রেরণা নিয়ে বাংলা একাডেমিতে গ্রন্থমেলা সূচিত হয়েছিল আজ পর্যন্ত সেই প্রেরণাতেই অমর একুশে গ্রন্থমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মহান ভাষা আন্দোলন আর মুক্তিযুদ্ধের সফলতা থেকে অর্জিত বাঙালিত্ব ও স্বাধীনতা এবং এ থেকে সৃজনশীল কর্মকাণ্ড এবং ক্রমান্বয়ে তা প্রতিষ্ঠিত হয়ে বিস্তার ঘটেছে একুশের গ্রন্থমেলায়। সামগ্রিক অর্থে এখানেই গ্রন্থমেলার সার্থকতা আর এসবই গ্রন্থমেলার অর্জন। বাংলাদেশের জনগণের হূদয়ে মহান একুশে আর মুক্তিযুদ্ধের যে চেতনা গভীরভাবে প্রোথিত আছে তারই প্রতিফলন সবসময় গ্রন্থমেলায় প্রতিফলিত হবে— এই প্রত্যাশা সবার।

আলোচকরা বলেন, প্রায় চার দশক ধরে চলমান একুশের গ্রন্থমেলা এখন বিশ্বের দীর্ঘ সময়ব্যাপ্ত গ্রন্থমেলার মর্যাদাপ্রাপ্ত। এই গ্রন্থমেলার অর্থনৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক এবং সাংস্কৃতিক গুরুত্ব অসাধারণ। তবে যেনতেনভাবে গ্রন্থমেলায় বই প্রকাশের তাগাদায় প্রকাশনা ক্ষেত্রে নেতিবাচক পরিস্থিতিরও অবতারণা হয়। এ বিষয়টির দিকে লক্ষ রেখে বই প্রকাশনাকে একটি বাৎসরিক রেওয়াজে পরিণত করতে হবে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে সারাবছর গ্রন্থমেলা পরিচালনার মাধ্যমে প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে হবে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গঠনের বার্তা।

সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের একুশে গ্রন্থমেলা এখন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত ও আদৃত। তবে গ্রন্থমেলায় বই প্রকাশের সংখ্যাগত দিকটির চেয়ে গুণগত মানের বিষয়টি নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।

লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন প্রকাশিত গ্রন্থ বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন রশিদ আসকারী, মাহবুব রেজা, সুমনকুমার দাশ, শাহেদ ইকবাল এবং শোয়েব সর্বনাম। 

 

হুমায়ুন আজাদকে স্মরণ

বহুমাত্রিক লেখক হুমায়ুন আজাদের ওপর মৌলবাদী চক্রের সন্ত্রাসী হামলার বার্ষিকীতে একুশে গ্রন্থমেলায় গতকাল বিকালে তাকে স্মরণ করা হয়। লেখক-পাঠক-প্রকাশকদের যৌথ উদ্যোগে বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউসের তথ্যকেন্দ্রের সামনে আয়োজিত এ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। এ ছাড়া আরো বক্তব্য রাখেন কবি মুহাম্মদ সামাদ, সংগঠক কামাল পাশা চৌধুরী, প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন প্রকাশক ওসমান গনি। বক্তারা বলেন, হুমায়ুন আজাদের হত্যাচেষ্টার বিচার অবিলম্বে বাস্তবায়ন এবং তার আদর্শে মৌলবাদ-জঙ্গিবাদ এবং সাম্প্রদায়িকতামুক্ত সমাজ-রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমেই তাকে যথাযোগ্যভাবে স্মরণ করা হবে। 

কবিকণ্ঠে কবিতা পাঠ করেন কবি আনিসুল হক, শাহজাদী আঞ্জুমান আরা, বিমল গুহ, মানিক মোহাম্মদ রাজ্জাক, আশরাফ জুয়েল, মাসুদ পথিক, নওশাদ জামিল। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী জিএম মোর্শেদ এবং সিদ্দিকুর রহমান পারভেজ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী অদিতি মহসিন, কামাল আহমেদ, মো. রেজাউল করিম, অসীম দত্ত, সেমন্তী মঞ্জরী এবং ডালিয়া সুলতানা।

 

আজকের অনুষ্ঠান

আজ বৃহস্পতিবার মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলার শেষ দিন। আজ সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে সমাপনী অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ প্রদান করবেন একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী। প্রতিবেদন উপস্থাপন করবেন ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯’-এর সদস্য-সচিব ড. জালাল আহমেদ। প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ এমপি। বিশেষ অতিথি থাকবেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব ড. মো. আবু হেনা মোস্তফা কামাল এনডিসি। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান।

অনুষ্ঠানে কবি নির্মলেন্দু গুণকে ‘কবি জসীমউদ্দীন সাহিত্য পুরস্কার ২০১৯’ প্রদান করা হবে। এছাড়া অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯ উপলক্ষে বাংলা একাডেমি পরিচালিত চারটি গুণীজন স্মৃতি পুরস্কার— চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার-২০১৯, মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার-২০১৯, রোকনুুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার-২০১৯, শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০১৯ প্রদান করা হবে।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১