আপডেট : ২৫ February ২০১৯
সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অপরাধীরা বদলাচ্ছে অপরাধের ধরন। এক একটি অপরাধের চিত্র আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে আসার পর অপরাধীরা আবারো তাদের অপরাধের ধরন বদলায়। এমন অপরাধের নতুন কৌশল নিয়ে দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর প্রতিবেদন তৈরি করেছেন আমাদের খণ্ডকালীন প্রতিবেদক আরিফুল ইসলাম এক সময় মোবাইল ফোনে লটারি পাওয়া কিংবা জিনের বাদশা পরিচয়ে ধনী করে দেওয়ার লোভ দেখিয়ে গ্রামের সহজ-সরল মানুষদের প্র্রতারণার ফাঁদে ফেলা হতো। পরে তা বিভিন্নভাবে সামনে আসায় সে প্রতারণা বন্ধ হয়েছে। এখন শুরু হয়েছে প্রতারণার নতুন ফাঁদ। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতারিত হয়ে সর্বস্ব হারাচ্ছে মানুষ। তবে কি থেমে আছে প্রতারকরা? না, তারা প্রতারণার জন্য বেছে নিয়েছে ভিন্ন কৌশল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতারণা থাকবে। নির্মূল হবে না। মানুষকে সচেতন হতে হবে। তাহলেই প্রতারকদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলে গড়ে ওঠা একটি চক্র সক্রিয়ভাবে সারা দেশে তাদের জাল বিছিয়ে প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা নিজেদের সুন্দরবনের ডাকাত হিসেবে পরিচয় দিয়ে ডাকাতির পণ্য কম দামে বিক্রির লোভ দেখিয়ে প্রথমে প্রতারণা এবং পরে ব্ল্যাক মেইল করছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, এই চক্রটির প্রধান সজল খান। তার বাড়ি বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার হোসেমখাঁর হাট এলাকায়। বাবার নাম রুস্তম আলী খান। সজল কখনো কখনো নিজেকে বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার রাঢ়ীপাড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সুধা মিনার ছেলে কালু বলে পরিচয় দিয়ে থাকে। সাইনবোর্ড এলাকায় মিষ্টির দোকানদার নিত্য একাধিক লোকের সঙ্গে এই সজলকে সুধা মিনার ছেলে কালু বলে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে সে সুধা মিনার ছেলে নয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, নিত্য এই চক্রের একজন সদস্য। সজল বাহিনী গত কয়েক বছর ধরে বরিশাল, খুলনা, যশোর, চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানের মানুষদের দাপটের সঙ্গে প্রতারণা এবং ব্ল্যাকমেইল করে যাচ্ছে। হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। তবে লোক-লজ্জায় কেউ এই বাহিনীর বিরুদ্ধে কোথাও অভিযোগ করতে পারছে না। দেড় থেকে দুই বছর আগে সজল ও তার চক্র ০১৯৭১৪১৮৩১০, ০১৭৮৭৫৭৬৩৭১, ০১৭০৫৫৪৩১৯৫, ০১৭০৭৯৮৪৩৮২ নম্বরগুলো প্রতারণায় ব্যবহার করত। বর্তমানে সজল ০১৭৪৬৫৮০৮৩০ ও ০১৭৬৫৩৬৯৭৫২ এই নম্বর দুটি ব্যবহার করছে। তবে ক্ষেত্রবিশেষে মাঝেমধ্যে আগের চারটি নম্বরও ব্যবহার করে। সজলের স্ত্রী রোজিনা ওরফে রোজিও স্বামীর এই কাজের সঙ্গে জড়িত। সে ০১৮৩৮৯৫৩৮৯৩ নম্বরটি ব্যবহার করে। বিভিন্ন এলাকায় তাদের তথ্য সরবরাহকারী আছে। বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার দৈবজ্ঞহাটী এলাকার তথ্য সরবরাহ করে যশোরদি গ্রামের শাহজাহান সরদার। সে ০১৮৮৪৩৭৯৯৬৮, ০১৮৫২০১৯১৬৮, ০১৯০৬৩৬৯৩৬৪ নম্বরগুলো ব্যবহার করে। টার্গেট ও প্রতারণার কৌশল এরা যাকে টার্গেট করে, তার সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে। পরে তাকে ফোন করে তার আত্মীয় কিংবা বন্ধু বা পরিচিতজনের রেফারেন্স দিয়ে কথা বলে প্রথমে তার সঙ্গে সখ্য গড়ার চেষ্টা করে। যাকে টার্গেট করে তার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য ছদ্মবেশ নেয়। তার খুঁটিনাটি সব বিষয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় বলে। তাদের কাছে এত বেশি তথ্য আছে, যা টার্গেট করা ব্যক্তিকে বললে সহজেই তিনি তাদের ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেন। তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ব্যবসায়ী, শিক্ষক, ব্যাংকার, স্থানীয় সাংবাদিক ও চাকরিজীবীদের টার্গেট করে থাকে। প্রতারিত হওয়ার পর সম্মানের ভয়ে যাতে কাউকে বলতে না পারে। মোবাইল ফোনে সখ্য হওয়ার পর সজল বাহিনী জানায়, তাদের ২৫-৩০ জনের সশস্ত্র ডাকাত বাহিনী আছে। মাছ ধরার ট্রলার ভাড়া করে নদী-সমুদ্রে ঘুরে বেড়ায়। উপকূলীয় এলাকার বিভিন্ন মুদি দোকান, স্বর্ণের দোকান, বাড়িতে, গুদামে, বিভিন্ন শোরুমে গভীর রাতে ডাকাতি করে। সুন্দরবন সংলগ্ন নদী বা বঙ্গোপসাগরে ভারতীয় পণ্যের কালোবাজারি বা ব্ল্যাক মার্কেটে এদের যোগাযোগ আছে। অনেক সময় ব্ল্যাকের মালও অস্ত্র ধরে ডাকাতি করে। তাদের কাছে ডাকাতির চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা, ময়দা, মরিচসহ সব মুদি মালামাল, মনোহারি সামগ্রী, শাড়ি, থ্রিপিস, বোরকাসহ সব কাপড় চোপড়, টিভি, ফ্রিজ, মোটরসাইকেল (পালচার, হাঙ, ডিসকভারি), প্রেসার কুকার, রাইস কুকার, ওভেন, ওয়াশিং মেশিন, সেলাই মেশিনসহ সব ইলেকট্রনিকস সামগ্রী, স্বর্ণের চেইন, কানের দুল, লকেটসহ স্বর্ণ ও রৌপ্য অলঙ্কার, বিভিন্ন ফার্নিচার, লোহা, স্টিলের মালামাল আছে, যা তারা সুন্দরবন এলাকায় দুই-তিন মাস ডাকাতি করে সংগ্রহ করেছে। দুই-তিন মাস ডাকাতির পর একবারে তারা পণ্য বিক্রি করে। ডাকাতির রুট হচ্ছে- মোংলা, বরগুনা, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, সাতক্ষীরা, মোরেলগঞ্জ, রায়েন্দা, বাগেরহাট, রূপসা, আড়ংঘাট ইত্যাদি। নিরাপদ জায়গায় আনলোড করে পার্টির কাছে বিক্রি করে। বেশিরভাগ সময় ট্রলারে মাল নিয়ে নদীতে ঘুরতে থাকে এরা। তখন সজল কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে শহরে উঠে আসে। বাগেরহাট, খুলনা, ঢাকা, যশোর বা অন্য জায়গার পার্টিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে পণ্য বিক্রি করে। মাল জায়গায় পৌঁছে দেওয়া হয়। সব ডেলিভারি হয় কভার্ড ভ্যান ও ট্রাকে। মাল রাখে যশোর, মনিরামপুর, খুলনায় নিজস্ব গোপন গুদামে। কাউকে মাল রাখার জায়গা দেখানো হয় না। লেনদেন হয় বিকাশ বা ব্যাংকে। বাকিতেও মাল দেয় তারা। বিক্রি করে টাকা দিতে হবে। সব যোগাযোগ হয় মোবাইল ফোনের এসএমএসের মাধ্যমে। ভয়েস কলে কথা হয় খুব কম। টার্গেটকৃত ব্যক্তি সারা দিন কল দিলেও রিসিভ করবে না। মেসেজ দেবে। আর তারা কল করলে রিসিভ করতে হবে। সব নির্দেশ আসবে মেসেজে। প্রতারণা করার জন্য সজলের দেওয়া কিছু মেসেজ ও ভয়েস কল রেকর্ড বাংলাদেশের খবরের কাছে আছে। সারা দেশ ঘোরাবে মেসেজ দিয়ে। ওদের চেহারা সহজে দেখা যাবে না। আর দেখা করলেও ওরা খুব বুঝেশুনে দেখা করে। কখনো চালের কিংবা অন্য পণ্যের স্যাম্পল দেখাতে আসে। সখ্য হলেই লাভের ফাঁদ প্রতারিত এক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, তিনিও এই চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে দেড় লাখ টাকা হারিয়েছেন। আরেক ব্যক্তি হাসান (ছদ্মনাম) জানান, তিনি হারিয়েছেন ৬ হাজার টাকা। এই ব্যক্তিকে মতিঝিলে চালের স্যাম্পল দেখাতে এসেছিল সজল। এদের প্রতারণার শিকার হন বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার রহিম নামের (ছদ্মনাম) এক ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, আমার এক আত্মীয়ের পরিচয় দিয়ে আমাকে ফোন করার পর কথা বলতে বলতে এক সময় আমাদের সখ্য হয়। আসলে আমার আত্মীয় তাকে চেনেনই না। বিষয়টা আমি পরে বুঝতে পারি। তিনি বলেন, আপনি যদি তাদের টার্গেটকৃত ব্যক্তি হন, ওরা ঠিকই আপনার সম্পর্কে বলতে পারবে। ওদের লোক থাকে সব জায়গায়। আপনাকে এলাকার সব নামিদামি, ক্ষমতাবান ও ধনী লোকের নাম বলে তাদের সম্পর্কে সব তথ্য দেবে। মেম্বার, চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, নেতা, মেয়র, মেয়রের লোকজন, এসপি, পুলিশ, র্যাব, এমপি, মন্ত্রী ইত্যাদি। কে কীভাবে ধনী হয়েছে, কার কী গোপন ব্যবসা, অবৈধ সম্পত্তি, কে কী চোরাকারবার করে বা ব্ল্যাকের কোন গাড়ি ব্যবহার করে, কোন ফ্রিজ বা যন্ত্রপাতি বা হরিণের মাংস কাকে কাকে কবে কোথায় দিয়েছে, বাংলাদেশে কারা কারা মাল নেয়, সব আপনি জানতে পারবেন আস্তে আস্তে। টাকা নেওয়ার জন্য বা আপনাকে বিশ্বাস করানোর জন্য যা যা করা দরকার তা তারা করবে। শাহজাহানকে সজলের শালা বাগেরহাটের সুজন মোল্লা (বিএনপির সুজন নয়) আর রোজিকে দিয়ে আপনার সব খোঁজ নেবে। তাও আপনাকে জানাবে। হাজারো ওয়াদা, ওমুক-তমুক, প্রতিজ্ঞা, কসম ইত্যাদির শেষ নেই। প্রয়োজনে সজল তার স্ত্রী রোজিকে দিয়েও বিশেষভাবে কথা বলাবে। পুরোপুরি আপনি তার কথায় বিশ্বাস করার পর কী কী মাল নেবেন তার লিস্ট মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমে আদান-প্রদান হবে। প্রতারিত রহিম বলেন, সখ্য হওয়ার পর আমাকে জানায় তাদের কাছে ৫৪২ বস্তা চাল, ৩৭ বস্তা ডাল, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৩১টি ফ্রিজ, ৩৬টি টিভি, ২৫টি মোবাইল ফোনসহ আরো অনেক মালামাল আছে। তিনি বলেন, আমাকে বলে চালের বস্তা তো বাইরে ১৯৫০ টাকা। আমরা ১০০০ টাকা করে বিক্রি করে দেব। আর অন্যান্য যা আছে, তার সব পণ্যই অর্ধেক দামে বিক্রি করে দেব। আপনার জানাশোনা কেউ থাকলে একটু কথা বলে দেখতে পারেন। আমি তখন তাকে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানানোর কথা বলি। পরে আমি আরেকজনের সঙ্গে কথা বলি। তিনি শুনে অবাক হয়ে যান। বলেন, আমরা তো অনেক লাভ করতে পারব। আমরা চালের বস্তা ১৬০০ টাকা করে যদি বিক্রির কথা বলি তাহলে অনেক ব্যবসায়ীই আছেন। তারা কিনে নেবেন। ১৬০০ টাকা করে বিক্রি করলেও আমাদের লাভ থাকবে বস্তা প্রতি ৬০০ টাকা। আর ইলেকট্রনিকস পণ্যগুলোতেই অনেক লাভ করতে পারব। এভাবে লোভে পড়ে যাই। আমাকে একদিন দুপুরে সজল বিষয়টি জানায়। আবার রাতে ফোন দিয়ে জানতে চায় কোনো আপডেট আছে কি-না। আমি আশ্বস্ত করলাম বিক্রি করা যাবে। তখন সজল আমাকে আরো লোভ দিলেন। বললেন, স্যার আপনার বড় ফ্রিজ আছে? এক মণের মতো সামুদ্রিক মাছ আছে। আর ১২-১৩ কেজি হরিণের মাংস আছে। এগুলো আপনার জন্য। আমি সবাইকে বলেছি। মাছ আর মাংস আপনাকে দিতে চাই। সজলের কথা শুনে তিনি তো খুশিতে একাট্টা। রাতে তার ঘুমই হয়নি। বার বার মোবাইল ফোনে ক্যালকুলেটর বের করে হিসাব করেছেন, কত টাকা লাভ করবেন। আর মনের মধ্যে খুশির জোয়ার বইতে থাকে। কষ্ট না করেই অনেক টাকা লাভ করতে যাচ্ছেন। বাকিতে ৫০ লাখের পণ্য! বিক্রির সব ঠিকঠাক হওয়ার পর মাল আনতে কত ভাড়া, কত বিল, লেবার বিল, চা-নাস্তার বিল এগুলো সব নগদ দিতে হবে। মাল তো বাকিতে। মানে বিক্রি করে টাকা দিতে হবে। খরচের টাকা দিতে সমস্যা কোথায়! ৫০-৬০ লাখ টাকার মাল পাঠাবে, আর সামান্য ৪০-৫০ হাজার খরচের টাকা পাঠাতে পারবেন না? আপনার নিজেরই লজ্জা লাগবে। অনুসন্ধানে জানা যায়, টাকা দিতে রাজি হলে বিভিন্ন ফোন নম্বর দেবে, যা বিকাশের এজেন্ট নম্বর। টাকা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করবে। আর জানাবে সজল নিজেই মাল নিয়ে রওনা হচ্ছে। পণ্য ট্রাকে লোড করারও শব্দ শোনাবে। লেবারদের তাড়াতাড়ি লোড করতে বলবে। রওনাও হবে। খরচের টাকা দিলেই টালবাহানা আপনি ধরে নিলেন রওনা হয়েছে। এরপর যত প্রকার সমস্যা আছে, তা শুরু হবে। যেমন- মালের চালান নেই, গাড়ির কাগজ নেই, মোবাইল ফোনে চার্জ নেই, টাকা নেই, টায়ার পাংচার, চেসিস ভেঙেছে, পুলিশে ধরেছে, মাল বাজেয়াপ্ত, গাড়ি থানায়, সজল বা রোজি গ্রেফতার, ছাড়াতে আরো ৮০ হাজার টাকা লাগবে। পণ্য ছাড়াতে লাগবে ২-৩ লাখ। টাকা না দিলে সব শেষ। টাকা দিলে সমাধান। অন্যথায় জেলহাজতে। এখানেই শেষ নয়। আপনাকে বলবে আপনার মাল আপনি নিয়া যান। আপনি তো ভয়ে যাবেন না। সবই জানাবে মেসেজ দিয়ে। অনেক সময় কেউ পুলিশ সেজে আপনাকে সজল বা রোজি বা শাহজাহানের মোবাইল ফোন দিয়ে কথা বলবে। টাকা দিয়ে ছাড়াতে বলবে। টাকা দিয়ে ছাড়ালেন। তবুও মাল আসবে না। ওরা কাল্পনিক পুলিশের হাত থেকে ছাড়া পাওয়ার পর রেস্ট নেবে। গাড়ি ভাড়ার জরিমানা দিতে হবে, ড্রাইভারের ডেমারেজ, হাত খরচ ইত্যাদি। আর জেল খেটে বের হতে তো অনেক দিন লাগবে। লোকের জামিন, গাড়ির জামিন, লাখ লাখ টাকার মালের জামিন। মালের জামিনের জন্য ডুপ্লিকেট চালান লাগবে, সব জায়গায় টাকা। প্রতারিত রহিম বলেন, এ সবই কাল্পনিক। তবুও শতভাগ বিশ্বাস আপনাকে করতে হবে। কারণ আপনি তো ফাঁদে পড়েছেন। আবার ওরা কয়েক দিন পর এই মাল দেওয়ার চেষ্টা শুরু করবে। আর ধরা খেতে থাকবে। আর এই একই ঘটনা আরো রোমাঞ্চকরভাবে ঘটতে থাকবে। আর আপনি সব হারিয়ে ধার-দেনায় ডুবে ধ্বংস হয়ে যাবেন। আপনি যে মালের জন্য টাকা দিয়েছেন সে মাল আপনার কাছে কোনোদিন পৌঁছাবে না। আপনি একবার ওদের ফাঁদে পড়লে সহজে বেরোতে পারবেন কি-না সন্দেহ। আরেক ব্যক্তি জানান, তিনি এদের খপ্পরে পড়ে সুদে এনে ৭০ হাজার টাকা দেন। কিন্তু রক্ষা তার হয়নি। পরে মোবাইল ফোন বন্ধ করে দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, টাকা দেওয়ার পরে ওরা আমাকে ব্ল্যাকমেইল করতে শুরু করে। ওদের কাছে আছে ভয়েস কল রেকর্ড আর এসএমএস। ওদের চাহিদা মতো, সময় মতো টাকা না দিলে, ওদের কথামতো কাজ না করলে, আমার কথোপকথনের তথ্য পুলিশ, চেয়ারম্যান বা প্রশাসনের কাউকে ফাঁস করে দেবে। হুমকি দেয় আমাকে- বলবে আমি ব্ল্যাকের ব্যবসা করি। মান-সম্মান যাবে এই ভয়ে আমি কয়েক দফায় ওদের টাকা দেই। না পারি কইতে, না পারি সইতে আরেক ব্যক্তি বলেন, সমাজে আমার একটা অবস্থান আছে। এ কথা আমি কীভাবে বলব? না পারি কইতে, না পারি সইতে। পুলিশের কাছেও অভিযোগ করার সুযোগ নেই। যখনই অভিযোগ করতে যাব তারা আমাকে কটূক্তি করবে। যারা জানবে, সবাই আমাকেই দোষারোপ করবে। নিজের মান যাবে যে, আমি ডাকাতির পণ্য বিক্রির দালালি করতে গিয়ে প্রতারিত হয়েছি। তাই কাউকে কিছু জানাইনি। আপনাকে জানালাম এজন্য যে, এটা পড়ে মানুষ সচেতন হবে। লোভের ফাঁদে পা দেবে না। প্রতারিতরা বলছেন, ওই নম্বরগুলোর সূত্র ধরে যদি সজলকে গ্রেফতার করা হয়। তার মেসেজগুলো দেখা হয়। তাহলে প্রকৃত সত্য সামনে এসে যাবে। এর সঙ্গে আরো অনেকে জড়িত রয়েছে। তাও বেরিয়ে আসবে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সারা দেশেই সজলের নেতৃত্বে এই চক্রটি প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে। আগে এরা জিনের বাদশা এবং লটারিতে টিকেট জেতার কথা বলে মানুষের মোবাইল ফোনে কল করে প্রতারণা করত। অনেকে লোভে পড়ে প্রতারিত হতেন। আর যারা বিষয়টা জানতেন, তারা তাদের ফাঁদে পা দিতেন না। এই প্রতারণায় বেশি লাভ না হওয়ায় পরে তারা কৌশল বদলায়। ‘আগে নিজেকে সচেতন হতে হবে’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজান বলেন, সবার আগে নিজেকে সচেতন হতে হবে। মোবাইল ফোনে কেউ লোভ দেখাল, আর আপনি যদি সেই লোভে পড়ে টাকা দিয়ে দেন, তাহলে আপনাকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না। সে ক্ষেত্রে সবাইকে সচেতন হতে হবে। তিনি বলেন, আগে জিনের বাদশার কথা বলে প্রতারণা করা হতো, এখন এইভাবে করা হচেছ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রতারণার কৌশল বদলাচ্ছে। আগে যেমন মলম পার্টি ছিল, এখন কিন্তু অনেকটা কমেছে। প্রশাসন যদি আরো কঠোর হয়, তাহলে সবই কমিয়ে আনা সম্ভব। এদের ধরে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে সঙ্গে সঙ্গে সাজা দেওয়া প্রয়োজন। সুন্দরবনের দস্যু দমনে বরিশাল র্যাব-৮-এর ভূমিকা প্রশংসনীয়। তাদের কারণে অনেকেই আত্মসমর্পণ করে ফিরেছে স্বাভাবিক জীবনে। এখন একটা স্বস্তি এসেছে। ঠিক এই সময়ে এই সজল বাহিনীর প্রতারণা আর ব্ল্যাকমেইল অনেকটা অস্বস্তি তৈরি করছে। কথা হলে রবিশাল র্যাব ৮-এর একজন কর্মকর্তা বলেন, তারা এই বিষয়টি নিয়ে কাজ করবেন। যদি কেউ অভিযোগ করতে চান, তাহলেও তাদের কাছে গোপনে অভিযোগ করতে পারেন। তারা তার তথ্য গোপন রাখবেন।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১