আপডেট : ১৭ February ২০১৯
ক্যানসার সম্পর্কে আগে বলা হতো, ‘ক্যানসার হ্যাজ নো আনসার’। বলাবাহুল্য, বাংলাদেশ ক্যানসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে সে অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসলেও ক্যানসারের প্রকোপ কমছে না, বরং বাড়ছেই। বর্তমান সময়ে ক্যানসার একটি ভয়ঙ্কর মহামারীতে পরিণত হয়েছে। এর অন্যতম কারণ হিসেবে সচেতনতার অভাব, খাদ্যে বিষ ও ভেজাল, তামাক, জর্দা, সাদা পাতা ও চর্বিজাতীয় খাবার, সিগারেটের ধোঁয়া ও গাড়ির কালো ধোঁয়াকে দায়ী করা হয়। আমাদের দেশে খাদ্যে ভেজাল আর কৃষিজ উৎপাদন বাড়াতে অতিরিক্ত কীটনাশক প্রয়োগ ক্যানসার বৃদ্ধির ভয়াবহতার জন্য দায়ী। সেন্টার ফর ক্যানসার প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চের (সিসিপিআর) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে প্রতিদিন নতুন করে ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে ৩৩৪ জন আর মারা যাচ্ছেন প্রায় ২৫০ জন রোগী। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সচেতনতা থেকে শুরু করে সরকারের পদক্ষেপ, প্রতিটি উদ্যোগই এ ক্যানসার প্রতিরোধ এবং মৃত্যুর সংখ্যা হ্রাস করতে পারে। কারণ প্রাথমিক অবস্থায় ক্যানসার ধরা পড়লে অধিকাংশ রোগী ভালো হয়। দেশে যেন এখন ক্যানসার মহামারী চলছে। ঘরে ঘরে ক্যানসার রোগী। চারিদিকে ক্যানসার রোগীর পরিণতি দেখে জনগণের মাঝে বদ্ধমূল ধারণা জন্ম নিয়েছে, ক্যানসার মানেই শেষ। এই ভীতির আরো একটি কারণ দীর্ঘমেয়াদি ক্যানসার চিকিৎসার কারণে অসংখ্য পরিবারের আর্থিক অবস্থা করুণ পর্যায়ে নেমে যায়। তার ওপর একজন কর্মক্ষম মানুষের ক্যানসার হলে তার পুরো পরিবারটি উপায়হীন হয়ে পড়ে। এ বিষয়টি এখন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে বিবেচনায় আনতে হবে। এজন্য ক্যানসার যাতে না হয়, সে ব্যাপারে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে সর্বোচ্চ সতর্ক ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি গরিব ও মধ্যবিত্ত ক্যানসার রোগীদের চিকিৎসায় সরকারের সহায়তা একান্ত প্রয়োজন। যদিও এখন ক্যানসার চিকিৎসায় বাংলাদেশের অনেক উন্নতি হয়েছে, একই সাথে ক্যানসার রোগীর সংখ্যাও অনেক বেড়েছে। তবে সে অনুপাতে দেশের সর্বত্র চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। ক্যানসারের সকল চিকিৎসা রাজধানী ঢাকা ও মহানগরকেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। আমরা যতই বলি না কেন চিকিৎসার ব্যয় কমেছে, কিন্তু বাস্তবে কতটা কমেছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। সেই সঙ্গে মনে রাখা দরকার দরিদ্র মানুষের পক্ষে ক্যানসারের দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা আসলে কতটা সম্ভব। ক্যানসারের ওষুধ সাধারণ মানুষের অনেকটাই ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে এসেছে। কিন্তু সার্বিকভাবে ক্যানসার চিকিৎসার ব্যয় একটি পরিবারের ওপর বিরাট বিপদ ছাড়া আর কিছুই নয়। বলতে দ্বিধা নেই, আমাদের দেশের অনেক ক্ষেত্রে উন্নতি হয়েছে। বিশেষজ্ঞ মানবসম্পদ তৈরি হচ্ছে। কেমো ও রেডিওথেরাপিতে উন্নতি হয়েছে। আমাদের সার্জিক্যাল ও রেডিয়েশন অনকোলজিস্টরা প্রায় বিশ্বমানের। ডব্লিউএইচওর হিসাব মতে, প্রতি ১০০ জন রোগীর জন্য একজন করে অনকোলজিস্ট থাকা দরকার। তবে দেশে বর্তমানে ১ হাজার ২০০ ক্যানসার রোগীর জন্য আছে একজন অনকোলজিস্ট। এখন প্রয়োজন ক্যানসার চিকিৎসাকে আরো সাশ্রয়ী করার পদক্ষেপ গ্রহণ। কেননা ক্যানসার চিকিৎসায় নিজেদের যেমন প্রচেষ্টা লাগে তেমনি ডাক্তারের সহযোগিতা ও রাষ্ট্রের সহযোগিতারও প্রয়োজন। দেশের জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে ক্যানসার বিভাগ তৈরি করা, বিশেষজ্ঞ তৈরি করা ও দেশীয় কোম্পানির মাধ্যমে ক্যানসারের সব ওষুধ তৈরির ক্ষেত্রে সরকারি প্রণোদনা দেওয়া প্রয়োজন। ক্যানসার চিকিৎসায় আরো ভালো খবর হলো ২০০৯ সাল থেকে দেশীয় কোম্পানি ক্যানসারের ওষুধ তৈরিতে সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশ থেকে বিদেশেও ক্যানসারের ওষুধ রফতানি হচ্ছে। কিন্তু এসব উন্নতির পরও ক্যানসারের চিকিৎসায় অনেক সামর্থ্যবান রোগী দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে যায়। দেশে যদি উন্নত এবং সাশ্রয়ী চিকিৎসা নিশ্চিত হয় তাহলে এই প্রবণতা কমে আসবে। এর পাশাপাশি ক্যানসার প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টিতে সারা দেশে প্রচারণা চালাতে হবে। বিশেষত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক সচেতনতা ক্যাম্পেইন ভালো ফলাফল বয়ে আনবে।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১