আপডেট : ১১ February ২০১৯
গাভির তরল খোলা দুধে মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশক, সিসা ও নানা ধরনের অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পেয়েছেন গবেষকরা। এসব ক্ষতিকর উপাদানের পাশপাশি দুধে আলফাটক্সিন এবং বিভিন্ন অণুজীবও তারা পেয়েছেন। প্যাকেটজাত গাভির দুধেও অ্যান্টিবায়োটিক ও সিসার অস্তিত্ব পাওয়া গেছে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি। এমনকি সাধারণ দোকানের দই থেকে শুরু করে নামি-দামি প্রতিষ্ঠানের দইয়েও মিলেছে অতিরিক্ত সিসা-অণুজীব। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো খাবারের মাধ্যমে শরীরে যদি মাত্রাতিরিক্ত সিসা, আলফাটক্সিন এবং কীটনাশক প্রবেশ করে তাহলে মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ সাময়িক বা স্থায়ীভাবে অকেজো হয়ে পড়তে পারে। কিডনি বিকল বা ক্যানসারের মতো রোগ হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। সরকারের ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির (এনএফএসএল) গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটি জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) আর্থিক সহায়তায় গাভির খাবার, দুধ, দই ও প্যাকেটজাত দুধের ওপর এই গবেষণা পরিচালনা করে। এনএফএসএল সূত্র জানায়, এই গবেষণায় দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গাভির দুধের ৯৬টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ঢাকাসহ তিন জেলার ছয়টি উপজেলাসহ ১৮টি স্থান থেকে দুধের পাশাপাশি অন্যান্য নমুনাও সংগ্রহ করা হয়। গাভির দুধ ও গো-খাদ্য সরাসরি খামার থেকে সংগ্রহ করা হয়। ঢাকা শহরের বিভিন্ন নামি-দামি দোকান ও আশপাশের উপজেলা পর্যায়ের সাধারণ দোকান থেকে দই সংগ্রহ করা হয়। বিভিন্ন সুপার স্টোর থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে বাজারে প্রচলিত বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্যাকেটজাত তরল দুধ এবং আমদানি করা প্যাকেট দুধ। এগুলো নির্দিষ্ট নিয়মে ল্যাবরেটরিতে পৌঁছানোর পর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। গবেষকরা জানান, প্রায় সব গো-খাদ্যে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। কীটনাশকও মিলেছে কোনো কোনো খাবারে। রয়েছে সিসা ও ক্রোমিয়াম। প্রতিবেদনে বলা হয়, গো-খাদ্যের ৩০টি নমুনা গবেষণা শেষে দেখা গেছে, এর মধ্যে কীটনাশক ২ নমুনায়, ক্রোমিয়াম ১৬টি নমুনায়, টেট্রাসাইক্লিন ২২টি নমুনায়, এনরোফ্লোক্সাসিন ২৬টি নমুনায়, সিপ্রোসিন ৩০টি নমুনায় এবং আলফাটক্সিন ৪টি নমুনায় গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রা পাওয়া গেছে। গাভির দুধের ৯৬টি নমুনার মধ্যে ৯ শতাংশ দুধে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কীটনাশক, ১৩ শতাংশে টেট্রাসাইক্লিন, ১৫ শতাংশে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রায় সিসা এবং ৩ শতাংশ দুধে গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশি মাত্রায় আলফাটক্সিনের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। ৯৬ শতাংশ দুধের নমুনায় মিলেছে বিভিন্ন ধরনের অণুজীব। প্যাকেটজাত দুধের ৩১টি নমুনায় ৩০ শতাংশে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি হারে আছে টেট্রাসাইক্লিন। কিছু নমুনায় পাওয়া গেছে সিপ্রোফ্লোক্সাসিন ও এনরোফ্লোক্সাসিন। একটি নমুনায় পাওয়া গেছে মাত্রাতিরিক্ত সিসা। এ ছাড়া ৬৬ থেকে ৮০ শতাংশ দুধের নমুনায় বিভিন্ন অণুজীবের উপস্থিতি স্পষ্টত প্রতীয়মান। গবেষণায় দইয়ের ৩৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। যার একটিতে সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি পরিমাণ সিসা পাওয়া গেছে। আর ৫১ শতাংশ নমুনায় মিলেছে বিভিন্ন ধরনের অণুজীব। এনএফএসএলের গবেষণায় দুধ ও দইয়ে যেসব ক্ষতিকর উপাদানের উপস্থিতি পাওয়া গেছে সেগুলো ক্ষতিকর কি না জানতে চাইলে আইইডিসিআরের প্রাক্তন পরিচালক অধ্যাপক ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, শরীরে মাত্রতিরিক্ত সিসা, আলফাটক্সিন এবং কীটনাশক প্রবেশ করে তাহলে মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ সাময়িক বা স্থায়ীভাবে অকেজো হয়ে পড়তে পারে। কিডনি বিকল বা ক্যানসারের মতো রোগ হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। তাছাড়া অণুজীব থেকে ছড়িয়ে পড়তে পারে নানা ধরনের মারাত্মক রোগ। খাদ্যে অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণের মাধ্যমে মানবদেহ অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে উঠবে। একটা পর্যায়ে গিয়ে রোগ প্রতিরোধে কোনো অ্যান্টিবায়োটিক আর কার্যকর হবে না। ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট হয়ে এমন এক পরিস্থিতি তৈরি হবে, যখন অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে আর রোগ সারানো সম্ভব হবে না। গতকাল রোববার রাজধানীর মহাখালীর জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির (এনএফএসএল) আইএসও সনদ অর্জন এবং দুগ্ধ ও দুগ্ধজাত খাবারের মানসম্পর্কিত গবেষণা কাজের ফলাফল প্রকাশনা অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান, মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (জনস্বাস্থ্য) হাবিবুর রহমান, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক নির্মলেন্দু চৌধুরী।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১