আপডেট : ১১ February ২০১৯
সাশ্রয়ী মূল্যে সারা দেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের লক্ষ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয় ১০ বছর আগেই। এরই অংশ হিসেবে সরকারি, বেসরকারি ও জয়েন্ট ভেনচারে কয়লাভিত্তিক ২০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর মধ্যে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ অর্ধেকের বেশি শেষ হয়েছে। বাকিগুলোর মধ্যে অনেক প্রকল্প এখন পর্যন্ত ভূমি অধিগ্রহণ কিংবা ভূমি উন্নয়ন কাজও শেষ করতে পারেনি। ফলে সরকারের প্রথম দুই মেয়াদে উৎপাদনে আসেনি কয়লাভিত্তিক কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র। বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারের ২০১৬ সালের মহাপরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০২১ সালে ২৪ হাজার মেগাওয়াট, ২০৩০ সালে ৪০ হাজার এবং ২০৪১ সালে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। যেখানে আমদানি ও নিজস্ব গ্যাসে ৩৫ শতাংশ, আমদানিনির্ভর কয়লায় ৩৫ শতাংশ, তেল, বিদ্যুৎ আমদানি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বাকি ৩০ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা করা হয়েছে। এমন বহু পরিকল্পনা কাগজে-কলমে থাকলেও বাস্তবের সঙ্গে এর খুব একটা মিল নেই। তবে নতুন মেয়াদে কয়লাভিত্তিক বৃহৎ প্রকল্পগুলোর গতি বাড়াতে চায় বিদ্যুৎ বিভাগ। সরকারের বর্তমান মেয়াদেই পায়রা, রামপাল ও মাতারবাড়ীর বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেন, কোল বেজ পাওয়ার প্ল্যান্টগুলো নিয়ে যত দ্রুত আমরা বড় প্রকল্পে যেতে পারব, বিদ্যুতের ক্ষেত্রে তত সুবিধাজনক অবস্থায় আমরা পৌঁছব। ২০২২ সালের মধ্যে বড় কিছু প্রকল্প চলে আসবে বলেও তিনি জানান। জানা গেছে, তুলনামূলক কম খরচে টেকসই বিদ্যুৎ উৎপাদনে সরকারের মহাপরিকল্পনায় প্রাথমিক জ্বালানি হিসেবে গুরুত্ব দেওয়া হয় কয়লার ওপর। ২০৩০ সাল নাগাদ মোট জাতীয় বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লার অবদান বর্তমানের ৩ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। সে অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারির মধ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা ও মুন্সীগঞ্জে প্রায় পাঁচ হাজার মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা নেওয়া হয় বর্তমান সরকারের প্রথম মেয়াদেই। পরিকল্পনামতো এগোতে পারলে এতদিনে ৩০ শতাংশের মতো বিদ্যুৎ আসতো সাশ্রয়ী এ জ্বালানি থেকে। কিন্তু সেসব পরিকল্পনা কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকায় বর্তমানে কয়লা থেকে বিদ্যুৎ আসছে মাত্র ৩ শতাংশ। যার জোগান দিচ্ছে এক যুগেরও বেশি সময় আগে নির্মিত বড়পুকুরিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্র। সাশ্রয়ী মূল্যে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গত ১০ বছরে বৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে অনেক আশা জাগানিয়া পরিকল্পনা থাকলেও এখন পর্যন্ত উৎপাদনে আসেনি কয়লাভিত্তিক বড় কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র। যে কারণে চাহিদা মেটাতে দিন দিন ঝুঁকতে হয়েছে বেশি উৎপাদন ব্যয়ের তেলভিত্তিক বিদ্যুতের দিকে। চলতি বছর থেকে কয়লাভিত্তিক বড় বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো ধীরে ধীরে উৎপাদন শুরু করলে তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওপর থেকে নির্ভরতা কমানো সম্ভব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে নির্মাণাধীন কয়লাভিত্তিক ৩ বৃহৎ কেন্দ্রের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে থাকা পায়রার প্রথম ইউনিট চলতি বছরের আগস্টে চালু হওয়ার কথা রয়েছে। পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ শেষ হয়েছে ৬০ শতাংশ। প্রথম ইউনিটটিতে স্থাপন করা হয়েছে টারবাইন, ট্রান্সফরমার, জেনারেটরসহ মূল যন্ত্রপাতিগুলো। চিমনি নির্মাণসহ প্রস্তুতি চলছে কয়লা আমদানির। অবশিষ্ট কাজ শেষ করে আগামী আগস্টের মধ্যে ৬৬০ মেগাওয়াট সক্ষমতার প্রথম ইউনিটটি উৎপাদনে আসবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো কয়লাভিত্তিক বড় কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র উৎপাদনে আসছে। তুলনামূলক পিছিয়ে আছে আলোচিত রামপাল ও মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ। বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, সরকারের নতুন মেয়াদে এসব প্রকল্পে গতি আসবে। পাশাপাশি পায়রা, মাতারবাড়ী ও মহেশখালী হাবে শুরু হবে আরো কয়েকটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজ। পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন বলেন, পায়রায় বড় হাব হবে ৫ থেকে ৬ হাজার মেগাওয়াটের। আর মাতারবাড়ীতে হবে ৪ থেকে ৫ হাজার মেগাওয়াটের, মহেশখালীতে হবে ১০ হাজার মেগাওয়াটের হাব। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কাজের গতি বাড়ানোর পাশাপাশি কয়লা আমদানির অবকাঠামোর দিকেও সরকারের বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া উচিত। এ বিষয়ে জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. ম তামিম বলেন, ‘আমাদের আগে দেখতে হবে কয়লা কোথা থেকে কিনতে হবে। সেটাকে নিয়ে আসা এবং এখানে নিরাপদভাবে মজুত রাখা। একই সঙ্গে বৃহৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিচালনায় নিজস্ব জনবল তৈরির দিকেও নজর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) তথ্যমতে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে জ্বালানি গ্যাস ও কয়লার তুলনায় ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলে খরচ কয়েক গুণ বেশি। ডিজেলে ২০ টাকা ৭৩ পয়সা ও ফার্নেস অয়েলে ব্যয় হয় ১৬ টাকা ৩৭ পয়সা। গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনে ইউনিটপ্রতি ব্যয় গড়ে ২ টাকা ৫৯ পয়সা। আর কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রে ইউনিটপ্রতি উৎপাদন ব্যয় ৬ টাকা ৭৫ পয়সা। তবে গ্যাসের মজুত ফুরিয়ে আসছে বিধায় ২০০৯ সালে বিদ্যুৎ উৎপাদনে অন্যান্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সরকারি, বেসরকারি ও জয়েন্ট ভেনচারে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সরকারি, বেসরকারি ও যৌথ উদ্যোগের এসব প্রকল্পের মোট সক্ষমতা ২০ হাজার ৬২ মেগাওয়াট। এর মধ্যে সরকারি পাঁচটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতা ৬ হাজার ৩৬০ মেগাওয়াট। যৌথ উদ্যোগের নয়টি প্রকল্পের সক্ষমতা ১০ হাজার ৪৫০ মেগাওয়াট এবং বেসরকারি ছয়টির সক্ষমতা ৩ হাজার ২৫২ মেগাওয়াট।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১