আপডেট : ০৮ February ২০১৯
চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের আওতায় বরাদ্দ আছে ১০ হাজার ৭৬৬ কোটি ৩১ লাখ টাকা। মোট এডিপির প্রায় ছয় শতাংশ বরাদ্দ নিয়ে শীর্ষ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মধ্যে রেলের অবস্থান পঞ্চম। ৩৭ প্রকল্পের আওতায় জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রেলপথ মন্ত্রণালয় মাত্র ১ হাজার ৫৫ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয় করতে পেরেছে। এডিপির শতভাগ অর্থ ব্যয় করতে হলে পরবর্তী ছয় মাসে ব্যয় করতে হবে ৯ হাজার ৭১১ কোটি ১১ লাখ টাকা। অর্থবছরের প্রথম অর্ধেকের মধ্যে ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ অর্থ ব্যয় করায় শেষ ভাগে ব্যয় করতে হবে ৯০ শতাংশের বেশি অর্থ। রেলপথ ছাড়াও অনেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এডিপি বাস্তবায়ন পরিস্থিতি হতাশাজনক। বেশ কিছু মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ কেটে নিয়ে সংশোধিত এডিপি (আরএডিপি) প্রণয়নের কাজও শুরু হয়েছে। এ অবস্থায় শতভাগ এডিপি বাস্তবায়নের কঠিন লক্ষ্য সামনে আন্তঃমন্ত্রণালয় সভার আয়োজন করছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য সভায় সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিবদের ডাকা হয়েছে। রাজধানীর এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে এ সভায় সভাপতিত্ব করবেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। প্রতিটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এডিপি বাস্তবায়নের অগ্রগতি পর্যালোচনা করা হবে সভাটিতে। চলমান প্রকল্পগুলোর সমস্যা নিয়েও আলোচনা হবে। সমস্যা সমাধানে সম্ভাব্য করণীয় নির্ধারণ করা হবে সভাটিতে। প্রতিটি মন্ত্রণালয়ের সচিব ও ভারপ্রাপ্ত সচিবকে সভায় উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে এডিপি বাস্তবায়নে ব্যয় হয়েছে ৪৯ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা। ৫৭ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ মিলে এবার এক লাখ ৮০ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকার এডিপি বাস্তবায়ন করছে। এ হিসাবে এডিপি বাস্তবায়নের হার ২৭ দশমিক ৪৫ শতাংশ। শতভাগ এডিপি বাস্তবায়ন করতে পরবর্তী ছয় মাসে ব্যয় করতে হবে এক লাখ ৩১ হাজার ২২৪ কোটি টাকা। শুরুর দিকে এডিপি বাস্তবায়নে গতি না আসায় শেষের দিকে লক্ষ্য পূরণে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সামনে বাড়তি অর্থ ব্যয়ের চাপ পড়ছে। এর ফলে কাজের গুণগত মান নিশ্চিত করা কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। শেষ দিকে ব্যয়ের বড় একটা অংশ অপচয় হতে পারে বলেও মনে করেন তারা। এ বাস্তবতা মেনে নিয়েই এডিপি কাটছাঁটের উদ্যোগ নিয়েছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ও অর্থ মন্ত্রণালয়। সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করে এডিপিতে বিদেশি সহায়তা বরাদ্দ থেকে ৯ হাজার কোটি টাকা কেটে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ। এর ফলে সংশোধিত এডিপিতে বিদেশি সহায়তা নেমে আসবে ৫১ হাজার কোটি টাকায়। বছরের শুরুতে ৬০ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও দেশের সহায়তা বাবদ। প্রথম ছয় মাসে এ তহবিল থেকে ব্যয় হয়েছে ১৭ হাজার ৮৩৪ কোটি টাকা। অর্থ ব্যয়ে গতি না আসায় এবার বিদেশি সহায়তার ১৫ শতাংশ ফেরত দেওয়া হচ্ছে। এক লাখ ৮০ হাজার ৮৬৯ কোটি টাকার এডিপিতে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে বরাদ্দ আছে এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা। ছয় মাসে এ তহবিল থেকে ব্যয় হয়েছে ২৮ হাজার ৯০৫ কোটি টাকা। এ হিসাবে বাস্তবায়নের হার দাঁড়িয়েছে ২৫ দশমিক ৫৮ শতাংশ অর্থ। মন্থর গতির কারণে সংশোধিত এডিপিতে পদ্মা সেতু নির্মাণ, দোহাজারী থেকে কক্সবাজার ও রামু থেকে মিয়ানমারের নিকটবর্তী ঘুমধুম পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণের মতো বড় প্রকল্পগুলোর বরাদ্দ কমানো হচ্ছে। শীর্ষ বরাদ্দ পাওয়া কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের এডিপি বাস্তবায়ন পরিস্থিতি হতাশাজনক অবস্থায় আছে বলে জানিয়েছে আইএমইডি। বিভাগের এডিপি বাস্তবায়ন অগ্রগতি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ ২০ হাজার ১৬৪ কোটি টাকা বরাদ্দ নিয়ে মাত্র ৪ হাজার ৩২৮ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। বাস্তবায়নের হার ২১ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ১০ হাজার ৭৬৬ কোটি টাকা বরাদ্দের মাত্র ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ অর্থ ব্যয় করতে পেরেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা সেতু বিভাগের এডিপি বাস্তবায়ন হার ১৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। এ ছাড়া বড় বরাদ্দ পাওয়া প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ছয় মাসে এডিপি বরাদ্দের ২৪ দশমিক ৭০ শতাংশ ব্যয় করেছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ ব্যয় করেছে ১৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ। এ ছাড়া পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ১৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ চার মাসে বরাদ্দের ২২ দশমিক ৪৩ শতাংশ এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় বরাদ্দের ২১ দশমিক ৬৮ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে। সূত্র জানায়, এডিপি বাস্তবায়নে এবার শুরু থেকেই গতি আসবে বলে জানিয়েছিলেন তৎকালীন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বাজেট উপস্থাপনের সময় সংসদে মুহিত বলেছিলেন, এডিপি বাস্তবায়নে গতি আনতে শুরু থেকেই অর্থ ছাড় দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ফলে ধাপে ধাপে অর্থ ছাড়ের কারণে সৃষ্ট স্থবিরতা থেকে বেরিয়ে আসবে বাস্তবায়ন। এরই ভিত্তিতে শতভাগ এডিপি বাস্তবায়ন হবে বলে আশা প্রকাশ করেছিলেন সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী ও বর্তমানে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়া আ হ ম মুস্তফা কামাল। জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ অফিসের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে উন্নয়নকাজের পরিধি বাড়লেও এর সঙ্গে সঙ্গতি রেখে আর্থিক সামর্থ্য ও বাস্তবায়নের দক্ষতা বাড়ছে না। ফলে প্রতিবারই এডিপি থেকে বড় একটা অংশ কেটে নেওয়া হয়ে থাকে। সংশোধিত এডিপির শতভাগ বাস্তবায়নের নজিরও পাওয়া যায় না। এ অবস্থায় শতভাগ এডিপি বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে বড় প্রকল্পে অর্থায়ন নিশ্চিত করার পাশাপাশি কর্মকর্তাদের দক্ষতা ও সামর্থ্য বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১