বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ০৬ February ২০১৯

সারা দেশে চলছে উচ্ছেদ অভিযান

প্রাণ পাবে নদ-নদী

খুলনা গল্লামারী ব্রিজের পশ্চিম পাশে ময়ূর নদের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন ছবি : বাংলাদেশের খবর


যুগ যুগ ধরে অপ্রতিরোধ্য গতিতে নদ-নদীর বুকে নির্মিত হচ্ছে শত শত অবৈধ স্থাপনা। প্রভাবশালীদের থাবায় সুপ্রশস্ত নদ-নদী পরিণত হয়েছে খাল বা নালায়। উচ্চ আদালতের আদেশেই প্রাণ ফিরে পেতে যাচ্ছে নদ-নদী। আদালত এক রায়ে বলছেন, নদ-নদী নিয়ে কানামাছি খেলা চলবে না। নদী দখলকারীদের নির্বাচন করার ও ঋণ পাওয়ার অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। মাইলফলক রায়ের বাস্তবায়ন ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। রাজধানীর বুড়িগঙ্গা, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ও খুলনার ময়ূর নদে অবিরাম চলছে উচ্ছেদ অভিযান। গত শনিবার ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতীর পরির্দশন করে। কোনো ধরনের অনুরোধ না শুনে আদালতের আদেশ অনুযায়ী অভিযান চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন তিনি।

গতকাল মঙ্গলবারও রাজধানী ঢাকাসহ খুলনা ও চট্টগ্রামে নদীতে অপদখল উচ্ছেদ করা হয়েছে। ঢাকার কামরাঙ্গীরচরে নবাবচর এলাকায় বুড়িগঙ্গার তীর দখল করে গড়ে তোলা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত অভিযান চালায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিওটিএ)। অভিযানে শতাধিক অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়। এই অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন বিআইডব্লিউটিএ’র যুগ্ম পরিচালক মো. আরিফুর রহমান। ঢাকা নদীবন্দরের আওতাধীন এলাকায় ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ উচ্ছেদ অভিযান চলবে বলে জানিয়েছেন বিআইডব্লিউটিএ-এর জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মোবারক হোসেন। তিনি বলেন, এর আগে ২৯ জানুয়ারি থেকে তিন দিন অভিযান চালিয়ে ৪৪৪টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। এর মধ্যে কয়েকটি বহুতল ভবনও রয়েছে। বিআইডব্লিউটিএর যুগ্ম পরিচালক আরিফ উদ্দিন জানিয়েছেন, ঢাকা সদরঘাট থেকে গাবতলী পর্যন্ত নদীর দুই তীরে ৬০৯টি অবৈধ স্থাপনা চিহ্নিত করা হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে সবই ভাঙা হবে। এসব স্থাপনার মধ্যে ৫৬টি বহুতল ভবন তাদের কাছে অগ্রাধিকার পাবে বলে জানান। নদীর জমি উদ্ধারের পর এবার স্থানীভাবে সংরক্ষণ করা হবে। সীমানা চিহ্নিত করে নদীর পাড়ে ওয়াকওয়ে নির্মাণ করে দেওয়া হবে। উদ্ধারকৃত স্থানে গাছ লাগানো হবে যাতে কেউ পুনরায় দখল করতে না পারে।

আমাদের চট্টগ্রাম প্রতিনিধি জানান,

কর্ণফুলী নদীর মাঝিরঘাট এলাকায় নদীর অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের দ্বিতীয় দিনে গতকাল মঙ্গলবার ১৫টি বড় স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে অভিযান শুরু হয়। অভিযানে নেতৃত্ব দিয়েছেন দুই নির্বাহী হাকিম তাহমিলুর রহমান ও মো. তৌহিদুল ইসলাম। তৌহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, দ্বিতীয় দিনে আজ ১৫ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। এতে আড়াই একরের বেশি নদীর জায়গা উদ্ধার করা হয়। উচ্ছেদ করা স্থাপনার মধ্যে সার, চাল, চিনি, লবণসহ বিভিন্ন পণ্যের গুদাম রয়েছে। এগুলো বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এর আগে গত সোমবার উচ্ছেদের প্রথম দিনে অর্ধ শতাধিক স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। পাশাপাশি স্বেচ্ছায় সরিয়ে নেওয়া হয় আরো অন্তত ২০টি স্থাপনা। প্রথম দিন উদ্ধার করা গেছে চার একর ভূমি। কয়েকটি ধাপে উচ্ছেদ কার্যক্রম চলবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

আমাদের খুলনা প্রতিনিধি জানান

নগরীর ময়ূর নদসহ মহানগরীর অভ্যন্তরে ২২ খালের অবৈধ দখলদার উচ্ছেদে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে নগরীর গল্লামারী ব্রিজের পশ্চিম পাশে ময়ূর নদের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান চালায় জেলা প্রশাসন। স্থানীয় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসেনের নেতৃত্বে নদীর দুই পাড়ের অবৈধ কাঁঁচা, সেমিপাকা, পাকা স্থাপনা ক্রেন দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। অভিযান চলার সময় উপস্থিত ছিলেন বটিয়াঘাটা উপজেলা নির্বাহী অফিসার দেবাশীষ চৌধুরী, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. দেলোয়ার হোসেন, খুলনা সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খান মাসুম বিল্লাহ প্রমুখ।

জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসেন বলেন, খুলনা সিটি করপোরেশনের সহযোগিতায় জেলা প্রশাসন ময়ূর নদসহ মহানগরীর অভ্যন্তরে ও পার্শ্ববর্তী খালগুলোর অবৈধ দখল উচ্ছেদ কার্যক্রম শুরু করেছে। তিনি বলেন, ময়ূর নদসহ ২২ খালের স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ ফিরিয়ে আনা, খুলনার সৌন্দর্যবর্ধন এবং বসবাসের উপযোগী সুন্দর নগরীতে পরিণত করার লক্ষ্যে সব অবৈধ স্থাপনা সম্পূর্ণরূপে দখলমুক্ত করা হবে।

খুলনা জেলা প্রশাসন, খুলনা সিটি করপোরেশন (কেসিসি), পানি উন্নয়ন বোর্ড, এলজিইডি ও সেটেলমেন্ট অফিস যৌথভাবে দখলমুক্ত করার কাজ বাস্তবায়ন করছে। তিনটি পদক্ষেপের মাধ্যমে পর্যায়ক্রমে কাজগুলো সম্পন্ন হবে। উচ্ছেদ কার্যক্রম সফল করার জন্য ১১ সদস্যের টেকনিক্যাল কমিটি এবং ২৫ সদস্যের উদ্ধার কমিটি গঠন করা হয়েছে।

গত সোমবার খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হেলাল হোসেন মহানগরীর অভ্যন্তরীণ ও পার্শ্ববর্তী খালগুলোর বর্তমান অবস্থা সরেজমিন পরিদর্শন করেন। বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব শেখ আশরাফউজ্জামান বলেন,  প্রভাবশালীরা ময়ূর নদে পাটা ও বাঁধ দিয়ে প্রতিদনই দখল কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। পৈতৃক সম্পত্তির মতো গাছপালা লাগানো ও চাষাবাদসহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা, এমনকি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও  পাকা বাড়িঘর ভবন নির্মাণ করেছেন অনেকে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তিন যুগ আগেও ময়ূর নদে পালতোলা নৌকা চলাচল করত। অনেক জেলে পরিবারের জীবিকার মূল উপজীব্য ছিল এ নদী। অথচ এখন দখল ও দূষণে আর ব্যবহারের উপযোগী নেই ময়ূর। ১২ কিলোমিটার দীর্ঘ বর্তমানে স্রোতহীন ময়ূর নদের সঙ্গে একসময় রূপসা নদীর সরাসরি সংযোগ ছিল। দখলে নদী হারিয়েছে নিজস্বতা। বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটিসহ বিভিন্ন পরিবেশবাদী সামাজিক সংগঠন নদী-খাল দখল মুক্তকরণের দাবিতে দীর্ঘদিন আন্দোলন করে আসছে।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১