বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২৪ January ২০১৯

জ্ঞান আহরণে প্রয়োজন বিতর্ক


সমাজে বিতর্কের শেষ নেই। ভালো-মন্দ বুঝে না বুঝে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ি আমরা। বিতর্ক হয় রাজনীতিতে, অর্থনীতিতে, দুর্নীতি ও সেবামূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে। একশ্রেণির লোক সবকিছুতে বিতর্ক করতে অভ্যস্ত। বিতর্ক যদি হয় সমাজ সংস্কারে, দেশ ও জাতির স্বার্থে, গঠনমূলক সমালোচনায় তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে। কিন্তু অহেতুক বাড়াবাড়ি সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। শিক্ষা অর্জন সব মানুষের জন্য অবশ্যই একটি নির্দেশ। শিক্ষা ছাড়া ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র কখনো এগোতে পারে না। নীতি-নৈতিকতা, আদর্শ চরিত্র গঠনে জ্ঞান অর্জন অবশ্যই থাকতে হবে। শিক্ষা ছাড়া ব্যক্তি পরিবার রাষ্ট্রীয় উন্নয়ন কখনো সম্ভব নয়। নির্দিষ্ট ধর্ম, গোত্র, পেশার মানুষের জন্য নির্দিষ্ট শিক্ষা বলে কোনো কিছু নেই। একটি দেশে সব ধর্ম শ্রেণি পেশার মানুষের বসবাস। জাতীয় স্বার্থে সব মানুষের জন্য শিক্ষা অর্জনের পথ সুগম করতে হবে। শিক্ষা অর্জনে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা জাতিকে পেছনে ঠেলে দেওয়ার শামিল। কোনো ধর্মে জ্ঞান আহরণকে নিষেধ করা হয়নি। বরং জ্ঞান অর্জনকে সবার জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এখানে নারী-পুরুষ ভেদাভেদ করা হয়নি।

একবিংশ শতাব্দীর এ যুগে পৃথিবী যখন প্রতিটি ক্ষেত্রে এগিয়ে চলছে, তখন ধর্মের দোহাই তুলে শিক্ষা থেকে একটি গোষ্ঠীকে সংকুচিত করার কথা বলা এক ধরনের অধার্মিকতার শামিল বলে জাতি মনে করছে। নারী-পুরুষের শিক্ষায় জ্ঞান আহরণে বিভাজনের কথা কোনো ধর্মেই স্বীকৃত নয়। পৃথিবী যখন সম্মিলিতভাবে এগিয়ে চলছে, তখন আমাদের দেশে আবার বিতর্ক নারীশিক্ষা নিয়ে। সম্প্রতি চট্টগ্রামের হাটহাজারী মঈনুল ইসলাম মাদরাসার একটি সভায় হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা আহমদ শফী নারীদের ফোর-ফাইভের বেশি না পড়াতে ভক্তদের আহ্বান জানিয়েছেন। এ বক্তব্য নিয়ে সারা দেশে বিতর্কের শুরু। এমন বক্তব্য তিনি রাখলেন যে বক্তব্যের সঙ্গে স্বয়ং তার অনুসারীদের মধ্যেও বিতর্ক রয়েছে। ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকেও তার বক্তব্য স্ববিরোধী। যে সংগঠনের তিনি আমির, সেটার নাম বাংলায় বললে ইসলামের সংরক্ষণকারী। এটাও গ্রহণযোগ্য নাম হতে পারে না।

কারণ ইসলাম আল্লাহর গ্রহণযোগ্য ও মনোনীত একটি ধর্ম। স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তার ধর্মকে হেফাজত করবেন। সেখানেও শফী সাহেবরা বাস্তবে ধর্মকে হেফাজতের কথা বলে ধর্মীয় বিষয়ে বিতর্কের জন্ম দিচ্ছেন। ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের আচার-অনুষ্ঠান বিভিন্ন হওয়ার কারণে সামাজিক সাংস্কৃতিক দৃষ্টিভঙ্গির ভিন্নতা থাকা স্বাভাবিক। কিন্তু ধর্মের কারণে শিক্ষার সুযোগ থেকে কাউকে বঞ্চিত করার অথবা বিরত রাখার কথা বলা এক ধরনের অপরাধ। রাষ্ট্রের নিয়মনীতি, সংবিধানবিরোধী বক্তব্যের চেষ্টা চালানো সেটাও অপরাধ। দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেক

নারী। নারীরা এখন শিক্ষা জ্ঞানে যোগ্যতায় দেশের প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, বিরোধীদলীয় নেতাও।

অথচ বাংলাদেশের আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপটে নারীদের এখনো প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে এগোতে হচ্ছে। এখনো নারীরা ঘরে-বাইরে, কর্মক্ষেত্রে তাদের প্রাপ্য অনেক অধিকার থেকেও ইচ্ছা-অনিচ্ছায় বঞ্চিত হচ্ছে। তবু বাংলাদেশের সাহসী নারীরা শিক্ষা, কর্মক্ষেত্র, খেলাধুলা, পরিবার ও সামাজিক কাজে তাদের সাফল্য অর্জনে পিছিয়ে নেই। একজন নারী কখনো রাষ্ট্রপ্রধান, কখনো শিক্ষক, কখনো গৃহিণী। সবক্ষেত্রেই নারীজাতি তার আপন যোগ্যতা এবং চারিত্রিক মাধুর্যতায় এগিয়ে আছে।

যারা এ জাতিকে পেছনে রেখে দিতে চায় অথবা নিয়ে যেতে চায়, তাদের মুখেই শোভা পায় নারীশিক্ষাবিরোধী বক্তব্য। তবে জনগণের পক্ষ থেকে ওই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। দেশ যখন শিক্ষা-দীক্ষায় সাফল্যের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন এ ধরনের জনবিরোধী বক্তব্য দিয়ে কখনো ধর্মের মঙ্গল সম্ভব নয়। নারীর নিরাপত্তা, নৈতিক শিক্ষা, শালীনতা বজায় রেখে শিক্ষার পরিবেশ তৈরি করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। কোনো অবস্থায় নারীকে শিক্ষা আহরণ থেকে বঞ্চিত রেখে জাতীয় অগ্রগতি সম্ভব নয়। সুতরাং অহেতুক তর্ক-বিতর্ক বন্ধ করে নারীর শিক্ষা সংকোচনের সব চক্রান্ত প্রতিহত করা সময়ের দাবি।

 

লেখক : প্রাবন্ধিক

সয.যড়য়ঁবধহংধৎর—মসধরষ.পড়স


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১