বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২৪ January ২০১৯

সন্তানের কাছে ঠাঁই হলো না মায়ের

পাঁচ সন্তানের জননী ৮০ বছরের বৃদ্ধা মৃদুল সাহা সংগৃহীত ছবি


পাঁচ সন্তানের জননী ৮০ বছরের বৃদ্ধা মৃদুল সাহা। ছেলেমেয়েরা সবাই উচ্চশিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত। দুই ছেলে ব্যবসা করেন। এক ছেলে বিসিএস ক্যাডার। তিনি কক্সবাজার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপপরিচালক। দুই মেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি নিয়ে এখন শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। ছেলেরা  বউ-বাচ্চা নিয়ে নিজের মতো করে নিজের বাড়িতে আয়েশি জীবন যাপন করছেন।

কিন্তু যিনি তাদের জন্ম দিয়েছেন সেই ৮০ বছরের বৃদ্ধা মা থাকেন গ্রামের একাকী একটি বাড়িতে। এই পাঁচ ছেলেমেয়ের কারো কাছেই মায়ের স্থান হয়নি। গ্রামের বাড়িতে ছোট একটি ঘরে অনাহারে অর্ধাহারে অযত্ন আর অবহেলায় এই গর্ভধারিণী আজ মৃত্যুর মুখে। দেখারও কেউ নেই। অথচ এই বৃদ্ধ বয়সে নাতি-নাতনি নিয়ে তার আনন্দেই দিন কাটার কথা ছিল।

গত মঙ্গলবার বিকালে বাড়ির একটি কক্ষে একাকী বৃদ্ধাকে মৃত ভেবে থানায় খবর দেন প্রতিবেশীরা। পুলিশ এসে উদ্ধার করে অসুস্থ এই বৃদ্ধাকে হাসপাতালে ভর্তি করেন। পরে ওই মায়ের দেখাশোনার দায়িত্ব নেয় ফেনীর সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সহায়’। তবে এমন অমানবিক ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম।

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘ চার বছর ধরে মধুপুরের ওই বাড়িতে একা থাকেন এই বৃদ্ধা। তার ছেলে বাপ্পি সাহা ও বিপুল সাহা ফেনী শহরে বাবার রেখে যাওয়া চালের আড়তের মালিক। আরেক ছেলে সুশান্ত সাহা। তিনি কক্সবাজার কৃষি সম্প্র্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপপরিচালক। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বিত্তবান ছেলেরা থাকেন বউকে নিয়ে যার যার নিজস্ব বাসায়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা মেয়ে শর্বরী সাহা ও সুমি সাহা ঢাকায় শ্বশুরবাড়িতে থাকেন। কিন্তু কাছেই মায়ের স্থান হয়নি। অনাহারে অর্ধাহারে অযত্ন আর অবহেলায় গ্রামের বাড়িতে ছোট একটি ঘরে একাকী দিন কাটাতেন তিনি। প্রতিষ্ঠিত পাঁচ ছেলেমেয়ে থাকার পরও নিজের বাড়িতে একা থাকতেন বৃদ্ধা মৃদুল সাহা। তার চিকিৎসা ও দেখাশোনার দায়িত্ব নিয়েছে একটি সামাজিক সংগঠন, সিভিল সার্জন ও জেলা পুলিশ। পাঁচ সন্তানের জননী মৃদুল সাহার স্বামী হরিপদ সাহা ১৯৮৩ সালে মারা যান।

পুলিশ জানায়, ফেনী পৌরসভার মধুপুর এলাকায় বাড়ির পরিত্যক্ত কক্ষে থাকতেন অসুস্থ বৃদ্ধা মৃদুল সাহা। মারা গেছেন ভেবে মঙ্গলবার বিকালে প্রতিবেশীরা থানায় খবর দেয়। পরে পুলিশ এসে ঘরের দরজা ভেঙে তাকে জীবিত অবস্থায় দেখতে পায়। তাকে উদ্ধার করে ভর্তি করা হয় জেলা সদর হাসপাতালে। চিকিৎসক জানান বার্ধক্যজনিত নানা রোগে আক্রান্ত তিনি।

ফেনীর সিভিল সার্জন হাসান শাহরিয়ার কবির বলেন, উনি বেশ অসুস্থ। মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত। আমরা আমাদের যতটুকু দেওয়ার সব দিচ্ছি। চিকিৎসার পাশাপাশি তার প্রয়োজন আপনজনের ভালোবাসা। কিন্তু এই বয়সেও পাশে নেই ভালোবাসার মানুষগুলো।

বৃদ্ধা মায়ের প্রতি সন্তানদের অবহেলার বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কথা জানিয়েছেন ফেনীর পুলিশ সুপার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার। তিনি বলেন, ঘটনার আদ্যোপান্ত আসলে তদন্ত শেষে বলা যাবে। তবে মনে হচ্ছে, এই পরিবারের সদস্যরা তার জন্য যতটুকু করার তা সঠিকভাবে করছে না।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১