আপডেট : ১৪ January ২০১৯
পড়ালেখার পাশাপাশি একটি রেস্তোরাঁ আছে ফেনী ইউনিভার্সিটির আইন বিভাগের নবম ব্যাচের শিক্ষার্থী শাহ আলমের। পড়াশোনার খরচ চালানোর পাশাপাশি আর্থিক জোগান দেন পরিবারেও। মাঝে পড়ালেখায় লম্বা গ্যাপ থাকলেও তার এখন স্বপ্ন লন্ডনে বার-অ্যাট-ল’ করা। তার সেই স্বপ্ন পূরণে সারথি ফেনী ইউনিভার্সিটি। কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করলেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাতা উদ্যোক্তাদের। তাদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, নিজের এলাকা থেকে ইঞ্জিনিয়ার বা ল’ইয়ার হতে চাই। তাদের জন্য সেটা এখন আর দিবাস্বপ্ন নয়। হয়তো ঢাকায় পড়ালেখা করলে, পড়াশোনা শেষে শূন্য থেকে একটি রেস্টুরেন্ট শুরু করতাম। আর এখন ছাত্রাবস্থায়ই আমার রেস্টুরেন্টটি প্রতিষ্ঠিত। এখান থেকে গ্র্যাজুয়েশন শেষে উচ্চতর ডিগ্রির জন্য বিদেশ যাওয়ার ইচ্ছে আছে। এখন সেই ক্যাপাবিলিটিও আছে আমার। অথচ ঢাকায় পড়লে সেটা সম্ভব হতো না। কারণ আমার মধ্যবিত্ত পরিবার কখনো এত টাকার জোগান দিতে পারত না। বিশ্ববিদ্যালয়টি নিজের এলাকায় হওয়ায় পড়ালেখার পাশাপাশি চাকরি করেন আরো অনেকেই। চাকরির কারণে ক্লাস মিস হয় কি-না, জানতে চাইলে শাহ আলম জানান, ‘চাকরিতে সমস্যা না হয় সেইভাবে ক্লাস রুটিন তৈরি করেছেন শিক্ষকেরা। অনেকেই চাকরির টাকায় টিউশন ফি দিয়ে বাড়তি টাকা সঞ্চয় করছেন, এটাও শিক্ষার্থীদের জন্য একটা বড় পাওয়া।’ তবে ফেনী ইউনিভার্সিটি এখনই সাফল্যের ঢেঁকুর গিলতে চান না প্রতিষ্ঠাতারা। ফেনী জেলার স্বনামধন্য ২১ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের সমন্বয়ে গঠন করা হয় বোর্ড অব ট্রাস্টিজ। বর্তমান সভাপতির দায়িত্বে আছেন প্রধানমন্ত্রীর সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম। তাদের স্বপ্ন আরো অনেক দূর পথ পাড়ি দেওয়া। বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বপ্ন রচনার গল্প করতে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আবদুস সাত্তার বলেন, বৃহত্তর নোয়াখালীতে কোনো প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় ফেনী একটি গুরুত্বপূূর্ণ অঞ্চল। তাই উচ্চশিক্ষার জন্য আমরা ফেনীতে একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিই। আমাদের সমন্বিত উদ্যোগের কারণে অল্প দিনের মধ্যেই সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদন পেয়ে যাই। প্রথম সেমিস্টার শুরু করি ২০১৩ সালে। এখন আমাদের ১৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের ভর্তি চলছে। মনে করি এটি জেলা পর্যায়ে দেশের একটি আদর্শ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে পরিগণিত হতে চলছে। তাই বলে এখানেই থেমে থাকব না। বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিধি আরো বাড়িয়ে মোহাম্মদ আলী বাজারে নিজেদের সাড়ে দশ একর জায়গায় স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে। বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলে একমাত্র পাবলিক ইউনিভার্সিটি নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (এনএসটিইউ)। কিন্তু ফেনী ইউনিভার্সিটির ইইই বিভাগের ইলেকট্রিক্যাল মেশিন ল্যাব ব্যবহার করতে আসেন এনএসটিইউ’র ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া আরো বেশ কয়েকটি ল্যাব ব্যবহার করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে এনএসটিইউ’র শিক্ষার্থীরা। একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের ল্যাবে যে উন্নতমানের সরমঞ্জাম প্রতিস্থাপন করতে পারেনি, সেটা পেরেছে ফেনী ইউনিভার্সিটি। ফেনী ইউনিভার্সিটির উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর, বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও মৎস্যবিজ্ঞানী প্রফেসর ড. সাইফুদ্দিন শাহ। গত এক বছরে এই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী ভর্তির হার বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। গবেষণাকে আরো ত্বরান্ব্বিত করতে গঠন করা হয়েছে ফেনী ইউনিভার্সিটি রিসার্চ সেল (এফইউআরসি)। ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে ফেনী ইউনিভার্সিটি জার্নাল। প্রতিটি বিভাগের জন্য রয়েছে আলাদা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ল্যাবরেটরি ও ওয়াইফাইয়ের ব্যবস্থা। ক্লাস পরীক্ষার পাশাপাশি নিয়মিত আয়োজন করা হয় সেমিনার-সিম্পোজিয়াম। রয়েছে একঝাঁক অভিজ্ঞ শিক্ষক। ল্যাব শিক্ষকদের আছে বিদেশি উচ্চতর ডিগ্রিও। এ ইউনিভার্সিটিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয়জন প্রফেসরকে উপদেষ্টা অধ্যাপক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন নিয়োগ, প্রশ্নপত্র মডারেশনসহ প্রাতিষ্ঠানিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে সাহায্য নেওয়া হয় বাইরের বিশেষজ্ঞদের। ইউনিভার্সিটির প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীদের তিনটি বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক কনফারেন্সে গৃহীত হয়েছে। ফেনী ইউনিভার্সিটি দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলার বিষয়ে উপাচার্য প্রফেসর ড. সাইফুদ্দিন শাহ বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে কিছু সামাজিক দায়বদ্ধতা রয়েছে। দরিদ্র, সুবিধাবঞ্চিত অথচ মেধাবী এমন শিক্ষার্থীরা যেন ঝরে না পড়ে সেদিকে লক্ষ্য রাখি আমরা। শিক্ষার্থীরা যেন ভবিষ্যতের কর্মক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতে পারে, সেভাবেই তাদের গড়ে তুলতে চেয়েছি। শুধু ফেনী থেকে নয়, উত্তর চট্টগ্রাম, কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলসহ দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হচ্ছে। এর মাধ্যমে এই অঞ্চলের উচ্চ শিক্ষা বিস্তারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে ফেনী ইউনিভার্সিটি। বিবিএ, এমবিএ, ইএমবিএ, এলএলবি, বিএ ইন ইংলিশ, এমএ ইন ইংলিশ, এমএসসি ইন ম্যাথমেটিকসের পাশাপাশি রয়েছে লাইব্রেরি অ্যান্ড ইনফরমেশন সায়েন্সে পোস্ট গ্র্যাজুুয়েশন করার সুযোগ। মাধ্যমিক ও ডিপ্লোমা পাস করা শিক্ষার্থীরা ভর্তি হতে পারবেন বিএসসি ইন সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, কম্পিউটার সায়েন্স ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং। স্প্রিং সেমিস্টারে ২৫ জানুয়ারি-২০১৯ এর আগে ভর্তি হলে দিতে হবে না ভর্তি ফি। পাশাপাশি টিউশন ফি’র ওপর ২০ শতাংশ ছাড় পাবেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া রেজাল্টসহ অন্যান্য ওয়েভারও প্রযোজ্য হবে। মেহেদী হাসান লেখক : জনসংযোগ কর্মকর্তা, ফেনী ইউনিভার্সিটি
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১