আপডেট : ১৩ January ২০১৯
আয়না নিঃসন্দেহে চমৎকার একটি ডিজাইন। আয়না ঠিক জায়গায় বসাতে পারলে হেসে ওঠে ঘর। হয়ে উঠে উজ্জ্বল, মনে হয় বেড়ে গেছে আয়তনে। আয়নার নানা তথ্য তুলে ধরেছেন সৈয়দা রাকীবা ঐশী আয়না আবিষ্কার ইংরেজ কবি ও লেখক জিওফ্রে চসারের ‘দ্য ক্যান্টারবেরি টেলস’ গল্পমালায় আছে- টারটারির রাজা কাম্বুস্কানের এমন একটা আয়না ছিল, সেই আয়না দেখে তিনি আগে থেকেই বলে দিতে পারতেন ভবিষ্যতে কী ঘটবে। ‘রেনার্ড দ্য ফক্স’ রূপকথা সিরিজের প্রধান চরিত্র ‘রেনার্ড’ নামের শেয়ালটির কাছেও এমন একধরনের আয়না ছিল। এটা দিয়ে তিনি এক মাইল দূরের জিনিস দেখতে পেতেন। আইরিশ সাহিত্যিক অলিভার গোল্ডস্মিথ তার গল্পে এক আশ্চর্য চীনা আয়নার কথা উল্লেখ করেছেন। এ আয়নার সাহায্যে যে কোনো মানুষের মন ও সেই মুহূর্তে সে কী ভাবছে তা বলে দেওয়া যায়। আবার শোনা যায়, জাপানিরা দুষ্কৃতকারীদের অপরাধের হদিস পাওয়ার জন্য যখন জিজ্ঞাসাবাদ করত তখন তাদের মুখের সামনে আয়না ধরত। সত্যি কথা বা মিথ্যে কথা বলার সময় মুখের যে পরিবর্তন হতো তা তারা আয়নার মাধ্যমে বুঝতে চেষ্টা করত। নিজের মুখটা কীরকম দেখতে তা জানাই যেত না যদি আয়না আবিষ্কার না হতো। পানির মধ্যে নিজের ছায়া দেখে মানুষ প্রথম জানতে পারে সে কেমন দেখতে। তারপর নানা চিন্তা-ভাবনা করতে করতে তারা একদিন আয়না আবিষ্কার করে ফেলে। জার্মান রসায়নবিদ জাস্টিস ভন লাইবিগ ১৮৩৫ সালে স্বচ্ছ কাচের এক পাশে টিন ও পারদের প্রলেপ দেওয়ার একটি কৌশল আবিষ্কার করেন। এই কৌশলটিই ছিল আয়না আবিষ্কারের মূল বিষয়। পরে আরো বড় পরিসরে এবং বাণিজ্যিকভাবে আয়না উৎপাদনের জন্য এ পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আজকের আধুনিক আয়নার রূপ আমরা দেখতে পাই। অবশ্য উৎপত্তির শুরুতে আয়নার আদল বর্তমানের মতো ছিল না। স্বচ্ছ কাচের আয়নার ধারণা এসেছে আরো অনেক পরে। কাচের বদলে তামা, ব্রোঞ্জ, সোনা ও রুপার চকচকে পৃষ্ঠকেই আয়না হিসেবে ব্যবহারের চল ছিল। ১৬৬৮ সালে স্যার আইজ্যাক নিউটন টেলিস্কোপ তৈরি করেন। পৃথিবীর সব থেকে বড় ও নিখুঁত আয়না লাগানো আছে ক্যালিফোর্নিয়ার পালামোর পাহাড়ের মাথায় ২০০ ইঞ্চি হেল টেলিস্কোপের মধ্যে। এর ওজন প্রায় সাড়ে চৌদ্দ টন। আর সূক্ষ্মতা হলো দশ লাখ ভাগের এক ভাগ। এ টেলিস্কোপের মাধ্যমে অগণিত আলোকবর্ষ দূরে যেসব মহাজাগতিক বস্তু রয়েছে তা জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা খুব সহজেই দেখতে পান। আয়না যেসব কাজে ব্যবহার করতে পারেন— * বাথরুমে আয়না সবচেয়ে প্রয়োজনীয় জিনিস। আপনি যেখানে শেভ করবেন, দাঁত ব্রাশ করছেন সেখানে ভালো আকারের একটি আয়না বেসিনের দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা উচিত। * ফুল লেন্সের আয়না শোবার ঘরে অত্যাবশ্যকীয়। সেটা ড্রেসিং টেবিলের আয়না হলেও ক্ষতি নেই। তবে এমন জায়গা বেছে নেবেন যেখানে দাঁড়িয়ে আয়না দেখতে পারেন। * আপনার বাড়িতেই কি অফিস? আপনার ডেস্ক যদি দেয়ালমুখো হয়, তাহলে এর ওপর Wallmounted আয়না বসিয়ে দিন। এতে ঘরের অফিস দেখতে বড় লাগবে এবং কে আসছে বা যাচ্ছে সেদিকেও খেয়াল রাখতে পারবেন। * বাচ্চারা আয়না দেখতে ভালোবাসে। ফ্যান্সি আয়না বসানোর উপযুক্ত জায়গা হচ্ছে তাদের ঘর। সে আয়না হতে পারে চাঁদ, তারা কিংবা কোনো পশু আকারের। * আয়না সরু, ছোট জায়গাগুলোকে বড় করে তোলে। সরু হলেওয়ে কিংবা ঘরের দুদিকে থাকলে দম বন্ধ করা পরিবেশ মনে হবে না। * ডেকোরেটিভ দেয়াল আয়না আপনার ঘরে যোগ করতে পারে বাড়তি সৌন্দর্য। আয়নার সামনে কুলুঙ্গি তৈরি করে তাতে সুদৃশ্য গাছ বসালে দারুণ লাগবে দেখতে। * জানালার বিপরীতে আয়না বসালে ঘরের প্রাকৃতিক আলোর পরিমাণ বেড়ে যাবে। এটি বাইরের দৃশ্যের প্রতিফলন ঘটিয়ে ট্র্যাডিশনাল পেইন্টিংয়ের কাজও করতে পারবে। * আয়নাকে ট্রে কিংবা পেডেন্টাল হিসেবেও ব্যবহার করতে পারেন। যেমন আয়ার ওপর বসাতে পারেন ক্রিস্টালবোন কিংবা ডাইনিং রুমের মোমবাতি। আয়নার যত্ন * আয়না পরিষ্কার করার শ্রেষ্ঠ উপায় হলো খবরের কাগজ আর গরম পানি। গ্লাস ক্লিনার, ভিনেগার দিয়েও অবশ্য কাজ চলে। * বাড়তি চকচকে ভাব আনার জন্য আলুর খোসা দিয়ে ঘষতে পারেন আয়না। তারপর ভেজা, নরম কাপড় দিয়ে মুছে নেবেন। রীতিমতো ঝলকাতে শুরু করবে আয়না। * আয়নার রঙ যাতে উঠে না যায় সে জন্য গ্লাস ক্লিনার সঙ্গে তোয়ালে, খবরের কাগজ কিংবা ত্যানায় স্প্রে করে তারপর ব্যবহার করুন। সরাসরি কাচের গায়ে স্প্রে করবেন না। * ধুলোর স্তর দূর করতে গিয়ে কাচের কিনারে গ্লাস ক্লিনার দিয়ে স্প্রে করবেন না। তাহলে সিলভার উঠে গিয়ে কালো হয়ে যাবে আয়না। আয়নার রকমসকম বাজারে নানা ধরনের আয়না পাওয়া যায়। একেকটির ডিজাইন একেক রকম, কাজও ভিন্ন ভিন্ন। * সিলভার মিরর- ক. ক্লিয়ার মিরর : ধবধবে সাদা ইন্টেরিয়রে এ আয়নার প্রয়োজন হয়। খ. কনকেভ মিরর : এতে ঘরের আকার বড় বড় লাগে। গ. কনভেক্স মিরর : এ আয়না ডেকোরেটিভ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যায়। * সিলভার টিনটেড মিরর : এ আয়না ডেকোরেটিভ উদ্দেশ্য পূরণে ব্যবহার করা হয়। * সিলভার সেফটি মিরর : এ আয়না সহজে ভাঙে না। খুব শক্ত। * নন-সিলভারড মিরর : Pzrolstic Mirror এগুলো শাওয়ার কিউবিকল এবং আর্দ্র স্থান, যেখানে সিলভারের আয়না ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, সেখানে ব্যবহার করা হয়। টুওয়ে ও সাধারণ আয়নার মধ্যে পার্থক্য বোঝার উপায় আমরা টয়লেট, বাথরুম, হোটেল রুম কিংবা কাপড় বদলানোর ঘরে যাই। কী করে বুঝব দেয়ালে টাঙানো আয়নাটি সত্যিকারের আয়না, টুওয়ে মিরর নয়? রিফ্লেকটিভ সারফেসে নখের ডগা দিয়ে খোঁচা দিন। সত্যিকারের আয়না হলে নখের ডগা ও নখের ছবির মাঝে একটা গ্যাপ থাকবে। যদি আপনার নখের ডগা সরাসরি নখের ছবিটি স্পর্শ করে, বুঝবেন ওটা টুওয়ে মিরর। কারণ আসল আয়নায় গ্যাপ থাকে আয়নার পেছনে সিলভার আছে বলে। টুওয়ে মিররের সিলভার থাকে সারফেস বা উপরিভাগে।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১