আপডেট : ০৭ January ২০১৯
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই বিভিন্ন মামলার কারণে সিলেট বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মীরা এখনও আত্মগোপনে রয়েছেন। গ্রেফতার এড়াতে কৌশলে চলাফেরা করছেন তারা । তবে নির্বাচনের পর সিলেট বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে নতুন করে আরও ১২টি মামলা হয়েছে। তাই নির্বাচনের পর আরও আত্মগোপনে রয়েছেন তারা। পুলিশী হয়রানি থেকে বাঁচার জন্য তারা এই পন্থায় চলছেন বলে জানিয়েছেন বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মী। বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, জামিনে থাকার পরও নেতাকর্মীরা পুলিশী হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তাই আত্মগোপনের থেকে মামলা ও গ্রেফতার আতঙ্ক নিয়ে কৌশলে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় অংশ নিয়েছেন বিএনপিসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। তবে নির্বাচনের বেশিরভাগ নেতাকর্মীকে এখনও পুরোদমেই আত্মগোপনে থাকতে হচ্ছে। নতুন পুরাতন মামলার কারণে নেতাকর্মীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন। তাই ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, কর্মক্ষেত্রে আসা যাওয়া ও পরিবার পরিজনদের সঙ্গে দেখা করতে কৌশলী হচ্ছেন বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক আলী আকবর রাজন বলেন, ‘আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত গায়েবী মামলা হচ্ছে। এই গায়েবী মামলা শুরু হয়েছিল সিটি নির্বাচন থেকে। মামলার জামিনে থেকেও আত্মগোপনে থাকতে হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বাসা বাড়িতে গিয়ে হয়রানি করছে পুলিশ। তাই কৌশলে চলাফেরা করতে হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘অপরাধ না করেও আমরা অপরাধী। যে মামলাগুলো হয়েছে তার মধ্যে ৪০ ভাগ মামলার ২০ ভাগ মানুষই দেশের বাইরে আছেন। বাংলাদেশে অবস্থান না করেও শুধুমাত্র বিএনপির রাজনীতি করার কারণে মামলা দেওয়া হচ্ছে। নির্বাচনের পর কেন্দ্র ভিত্তিক মামলা হয়েছে। এমনও হয়েছে যেখানে কোনো সংঘাত, অরাজকতা না হওয়ার পরও সংঘাতের মামলা দেওয়া হয়েছে। সিলেটে-১ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী হারের পর কোনো ধরনের আন্দোলন দেখা যায়নি। বিএনপি নেতারা বলছেন, স্থানীয়ভাবে এখন কর্মসূচি দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কেন্দ্রের দিকেই এখন তাকিয়ে আছেন তারা। কেন্দ্র থেকে আন্দোলনের নির্দেশ এলেই কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামবেন স্থানীয় নেতাকর্মীরা। সিলেট সিটি করপোরেশনের ৫ জন কাউন্সিলর জড়িত আছে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে। সেই সূত্রে একাধিক মামলার আসামি হয়েছেন তারা। তাই পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে আত্মগোপনে থাকতে হচ্ছে তাদের। যার ফলে সেবা বঞ্চিত হচ্ছেন স্থানীয় জনগন। মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি ও ৪ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, ‘জীবনে যত মামলার আসামি হয়েছি তার একটিতেও আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না। রাজনৈতিক কারণে এসব মামলা দিয়ে আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে। আমি স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি। জনগনের ভোটে নির্বাচিত হয়েছি চার বার। এখন এসব হয়রানির কারণে নিয়মিত অফিস করতে পারছি না। আমার এলাকার জনগনকে তাদের প্রাপ্য সেবা দিতে পারছি না। নির্বাচনের শুরু থেকেই পুলিশী বাধায় প্রচার চালাতে পারিনি। এখনও পুলিশী হয়রানিতে বাসাবাড়িতে টিকা মুশকিল।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে মামলা একটি অনেক বড় হাতিয়ার। আমাদের প্রতিপক্ষ সেই হাতিয়ারই ব্যবহার করছে। এত কিছুর পরও কোনো স্থানীয় ভাবে কর্মসূচী দেওয়ার সুযোগ আমাদের নেই। কারণ মামলা নামক হাতিয়ার দিয়ে তারা আমাদের আটকে রেখেছেন। এখন জনসম্মুখে আসলে আমদের জেলে যেতে হবে। না হয় পালিয়ে থাকতে হবে। শুধু সিলেট নয় সারা বাংলাদেশে একই অবস্থা। তাই আমরা কেন্দ্রীয়ভাবে কর্মসূচির নির্দেশের অপেক্ষা করছি।’ জেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ বলেন, ‘নির্বাচনের নামে এই তামাশা করার পর নতুন করে সিলেটের ৬টি থানায় ২৫টির ও অধিক মামলা হয়েছে। উপজেলাগুলোতেও মামলা হচ্ছে। আমাদের নেতাকর্মীরা বাড়িঘরে যেতে পারছেন না। তাই পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে আমাদের নেতাকর্মীরা কৌশলে চলাফেরা করছেন। কোনো ধরনের মামলা, ওয়ারেন্ট না থাকার পরও আমাদের নেতাকর্মীদের ঘর থেকে ধরে নিয়ে মামলা দেওয়া হচ্ছে। সরকারের এমন আচরণে আমরা ক্ষুদ্ধ। আমাদের উপর এই নির্যাতন জুলুমের জন্য একসময় জনগনের আদালতে দাঁড়াতে হবে সরকারকে। এছাড়াও পুলিশের তো এখন পয়সা ইনকাম করার সময়। তাই তারা দেদারছে হয়রানি করছে সঙ্গে তাদের বানিজ্যও চলছে।’ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের দিন ভোটকেন্দ্রে বাধা প্রদানের অভিযোগে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে আরও ১২টি নতুন মামলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (গণমাধ্যম) মো. জেদান আল মুসা। তিনি বলেন, ‘ নির্বাচনের সময় যারা ভোটকেন্দ্রে বাধা প্রদান করেছেন তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে ১২টি মামলা হয়েছে।’ মামলা বা ওয়ারেন্ট না থাকার পরও বিএনপি কর্মীদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘গ্রেফতার ২ ভাবে করা যায়। একটা হল সরাসরি একজনের বিরুদ্ধে মামলা থাকলে। আর অপরটি হল মামলা তদন্তে কারও নাম আসলে তাকেও গ্রেফতার করে আদালতে সোর্পাদ করা যায়। তিনি বলেন, বিএনপি সংশ্লিষ্ট যারা এসব অভিযোগ করছেন- তা সত্য নয়। আমার বিভিন্ন মামলা তদন্ত করতে গিয়ে যাদের নাম আসছে তাদেরই গ্রেফতার করছি। এছাড়াও ঢালাওভাবে কাউকে গ্রেফতার বা হয়রানি না করার ইনস্ট্রাকশন দেওয়া আছে আমাদের। তাই আমরা শুধু মামলা ও তদন্তে প্রাপ্ত আসামিদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।’
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১