বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ০৭ January ২০১৯

আদর্শবান রাজনীতিকের মহাপ্রয়াণ

শুদ্ধতম রাজনীতির আদর্শ অনুসৃত হোক

সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সংরক্ষিত ছবি


শুদ্ধ রাজনীতির বাতিঘর, রাজনীতিতে স্বচ্ছতা ও সততার প্রতীক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের প্রয়াণে আমরা গভীর শোক ও শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। ফুসফুসের ক্যানসার নিয়ে থাইল্যান্ডে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। তার মৃত্যুতে দেশ হারাল মহৎপ্রাণ ত্যাগী দেশপ্রেমিক একজন রাজনীতিবিদকে। হাসপাতালে থেকেই একাদশ সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। দল ও নেতৃত্বের প্রতি অবিচল আস্থা রেখে সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আজীবন নির্লোভ ও সৎভাবে জীবনযাপন করেছেন। সৈয়দ আশরাফ শুধু একজন সৎ নিষ্ঠাবান রাজনীতিকই নন, তার বড় পরিচয় তিনি বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলামের সন্তান। সে হিসেবে তিনি আদর্শ রাজনীতির চেতনায় জাগরিত হবেন, এটাই স্বাভাবিক। আবার একজন রাষ্ট্রপতির সন্তান হয়ে তিনি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের  রণাঙ্গনে গেরিলা যুদ্ধ করেছেন।

ব্যক্তিগত জীবনে উদাসীন, রাজনৈতিক নেতা হিসেবে দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ এক মহৎ কর্মী ছিলেন তিনি। রাজনীতির দীর্ঘ পথ চলায় তিনি ত্যাগ ও আদর্শের অপার নিদর্শন রেখেছেন। এমপি, মন্ত্রী হয়ে যেখানে কাড়ি কাড়ি টাকার পাহাড় গড়ে তোলার নজির রয়েছে, সেখানে তিন মেয়াদে মন্ত্রী থাকার পরও সৈয়দ আশরাফের সম্পদ ক্রমাগত কমেছে।  জানা গেছে, তিনি স্ত্রীর চিকিৎসার জন্য উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া গুলশানের বাড়িটি বিক্রি করেছেন। স্ত্রীকে লন্ডন থেকে জার্মানিতে চিকিৎসার জন্য টাকা জোগাড় করতে গিয়ে দুইবার বিমানের টিকেট পেছাতে হয়েছে। সরকারি বরাদ্দের প্লট নেননি। শুল্কমুক্ত গাড়ির সুবিধাও গ্রহণ করেননি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের ৪৭ বছরের ইতিহাসে এমন রাজনীতিবিদ ক’জনই বা আছে।

সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জনপ্রশাসনমন্ত্রী। ওয়ান-ইলেভেন পরবর্তী সময় আওয়ামী লীগের ভাঙন, শেখ হাসিনাকে মাইনাস করার ষড়যন্ত্রের তিনিই মোকাবেলা করেছিলেন প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে। চরম দুঃসময়ে আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ রাখার ক্ষেত্রে সৈয়দ আশরাফের ভূমিকা অনন্য, অসাধারণ। কেউ যখন ক্ষমতা ছাড়তে চায় না, তখন একজন সৈয়দ আশরাফ নিজে দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ওবায়দুল কাদেরের নাম প্রস্তাব করেন এবং নিজে থেকে পদটি ছেড়ে দেন। এই অনন্য নজির উপমহাদেশের রাজনীতিতে কে কবে দেখিয়েছেন? আজ তাই বাংলাদেশের রাজনীতিতে শুদ্ধ রাজনীতিকের নাম সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তার বিনয়, সদালাপ, কর্মীবান্ধব আচরণ সকলকে আকৃষ্ট করে।

১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর বাবা সৈয়দ নজরুল ইসলামের মৃত্যুর পর তিনি ইংল্যান্ডে চলে যান। সেখানে লেবার পার্টির সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়েছিলেন। তার ব্রিটেনের লেবার পার্টির এমপি হওয়ারই সুযোগ ছিল। কিন্তু ১৯৯৬ সালে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনেন শেখ হাসিনা। তারপর থেকে তিনি ২২ বছর একাধারে সংসদ সদস্য। মৃত্যুর আগেও তিনি নিজ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। অথচ ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস— শপথ গ্রহণের স্বপ্ন নিয়ে ওপারে পাড়ি জমালেন তিনি।

সৈয়দ আশরাফের মতো ত্যাগী, বিচক্ষণ, দূরদর্শী ও সজ্জন রাজনীতিকের শূন্যতা কখনোই পূরণ হওয়ার নয়। তার নীতি, আদর্শ, বিনয়, চরিত্রের যে গুণাবলি তিনি রেখে গেছেন তা প্রতিটি রাজনৈতিক কর্মীর কাছে পাথেয় হয়ে থাকবে। সৈয়দ আশরাফের রাজনীতির দর্শন ও আদর্শ অনুসৃত হওয়া উচিত আগামী দিনের তরুণ রাজনীতিকদের জন্য।

 


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১