বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ৩০ December ২০১৮

ড্রোন প্রতিহত করার যত কলাকৌশল


সম্প্রতি যুক্তরাজ্যের গ্যাটউইক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ দুটি ড্রোনের কারণে বেশ বিপাকে পড়েছিল। ড্রোন দুটি রানওয়ে বরাবর উড়তে থাকায় রানওয়ে বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। গুরুত্বপূর্ণ এ বিমানবন্দরটিতে লম্বা সময় রানওয়ে বন্ধ থাকার পর আবার যখন খুলে দেওয়া হলো, তখন দেখা গেল ড্রোন দুটি আবারো রানওয়ে বরাবর ছুটে আসছে। স্থানীয় পুলিশ এর সমাধান করতে না পারায় খবর দেওয়া হয়েছিল সেনাবাহিনীকে। বিমানবন্দরে ড্রোন ওড়ানোর ঘটনায় সৃষ্ট অচলাবস্থায় ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছিল লাখখানেক যাত্রীকে।

সাধারণত ড্রোন নিয়ে কমবেশি নিষেধাজ্ঞা রয়েছে প্রায় সবদেশেই। ড্রোনের কারণে বিশেষ কোনো পরিস্থিতি তৈরি হলে ড্রোন নামিয়ে আনার জন্যও রয়েছে বিভিন্ন ব্যবস্থা। এক্ষেত্রে বাজুকা থেকে শুরু করে ঈগলের ব্যবহারও দেখা যায়।

জরুরি পরিস্থিতিতে ড্রোন প্রতিহত করার এমনই কিছু ব্যবস্থার খবর থাকছে আজ-

রাডার ও জ্যামিং সিস্টেম

অননুমোদিত ড্রোন এবং এর অবস্থান শনাক্ত করতে ক্যামেরা, রাডার এবং রেডিও ফ্রিকুয়েন্সি সেন্সর ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সাধারণত বিমানবন্দরেই এই প্রযুক্তি রয়েছে যা কয়েক মাইল পর্যন্ত ড্রোন শনাক্ত করতে সক্ষম। শনাক্ত করার পর জ্যামিং ডিভাইসের মাধ্যমে ড্রোন এবং অপারেটরের মধ্যে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এর ফলে ড্রোন যে স্থান থেকে উড্ডয়ন করেছে, আবার সেখানেই ফিরে যায়।

রাডার ও জ্যামিংয়ের মাধ্যমে ড্রোন প্রতিহত করার এমন একটি প্রযুক্তি তৈরি করেছিল কোয়ান্টাম অ্যাভিয়েশন যা ২০১২ সালের লন্ডন অলিম্পিকে ব্যবহার করা হয়েছিল। চীনেরও রয়েছে প্রায় একই ধরনের একটি প্রযুক্তি যা প্রায় আধা মাইল দূর থেকেও ড্রোন নামাতে সক্ষম।

ড্রোন নামানোর অস্ত্র

যখন কোনোভাবেই ড্রোনকে নির্দিষ্ট এলাকা থেকে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয় না, তখন একটি উপায়ই বাকি থাকে। আর তা হলো এটিকে ভূপাতিত করা। এরজন্যও রয়েছে বিভিন্ন পদ্ধতি। রকেট লঞ্চারের মতো কিছু ডিভাইস রয়েছে যার সাহায্যে জাল নিক্ষেপ করে ড্রোনকে আবদ্ধ করে ফেলা হয়। ব্লেড ঘুরতে না পারায় সেখানেই ভূপাতিত হয় ড্রোন।

ব্রিটিশ কোম্পানি ওপেনওয়ার্কস তৈরি করেছে এমন একটি বাজুকা যা নির্দিষ্ট ড্রোনের দিকে জাল এবং প্যারাসুট ছুড়ে মারে। বর্তমানে এশিয়া, ইউরোপ এবং উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন দেশের নিরাপত্তা বাহিনী ওপেনওয়ার্কসের এ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।

এ ছাড়া ড্রোন দিয়েও ড্রোন আটকের ব্যবস্থা রয়েছে অনেক দেশে। এক্ষেত্রে অননুমোদিত ড্রোন লক্ষ্য করে ছুটে যায় আটককারী ড্রোন এবং তারপর জাল দিয়ে সেটিকে আটকে ফেলে। টোকিও পুলিশ প্রায় তিন বছর ধরে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। এ বছর দক্ষিণ কোরিয়ায় অনুষ্ঠিত শীতকালীন অলিম্পিকেও এ প্রযুক্তির ব্যবহার হয়েছে।

অ্যান্টি ড্রোন লেজার

ড্রোনের অবস্থান শনাক্ত করার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে লেজারের রশ্মির মাধ্যমে সেটি আকাশ থেকে নামিয়ে ফেলতে পারে এ প্রযুক্তি। বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িংয়ের এমন একটি প্রযুক্তি আছে। কয়েক মাইল দূরে অবস্থান করা ড্রোনও এ প্রযুক্তিতে ধ্বংস করে ফেলা সম্ভব। অল্প আলোতে কিংবা কুয়াশার মধ্যে ড্রোন শনাক্ত করতে অবলোহিত রশ্মি ব্যবহার করেছে বোয়িং।

প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ঈগল

ড্রোন নামাতে সবাই যেখানে প্রযুক্তির আশ্রয় নিচ্ছে, সেখানে নেদারল্যান্ড হেঁটেছে ভিন্ন পথে। বেশকিছু ঈগলকে ড্রোনে আক্রমণ করার প্রশিক্ষণ দিয়েছে দেশটির পুলিশ বিভাগ। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ঈগল তাদের নখর ব্যবহার করে ড্রোনের প্রোপেলার নিষ্ক্রিয় করে দিতে সক্ষম। প্রোপেলার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ড্রোনও তাৎক্ষণিকভাবে ভূপাতিত হয়। প্রশিক্ষণদাতারা জানিয়েছেন, এ ঈগলগুলো ড্রোনকে তাদের শিকার মনে করে এবং সে সময় আশপাশের অন্য কোনোদিকেই তারা আর নজর দেয় না।

ড্রোন উড়ানোর বিধিনিষেধ

যুক্তরাজ্যে কোনো বিমানবন্দর এবং বিমানঘাঁটির এক কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ড্রোন ওড়ানো যায় না। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে আবার এ নিয়ম কিছুটা ভিন্ন। দেশটিতে কোনো বিমানবন্দরের আট কিলোমিটারের মধ্যে কেউ ড্রোন ওড়াতে চাইলে আগে থেকেই এয়ার ট্র্যাফিক কন্ট্রোলকে জানাতে হয়। এ ছাড়া সব ড্রোন আগে থেকেই নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতাও রয়েছে সেখানে।

কানাডার কোনো বিমানবন্দর, বিমানঘাঁটি কিংবা বিমান উঠানামা করে এমন জায়গার ৫ দশমিক ৬ কিলোমিটার এলাকার মধ্যে ড্রোন ওড়ানো যায় না। তবে হেলিকপ্টার পোর্টের ক্ষেত্রে ১ দশমিক ৯ কিলোমিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হয়। সুইডেনেও একই নিয়ম রয়েছে।

জার্মানিতে ড্রোন ওড়াতে অনুমতি নিতে হয়। স্পেনে আবার ড্রোনের জন্য ইনস্যুরেন্স করার নিয়ম রয়েছে।

সৌদি আরব ও ইরাকসহ ১৫টি দেশে ড্রোন ওড়ানো একেবারেই নিষিদ্ধ। ড্রোন ওড়াতে গিয়ে ধরা পড়লে সেখানে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকে।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১