আপডেট : ২৯ December ২০১৮
নির্বাচনে নিরাপত্তা নিশ্চিতের প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। সারা দেশে মোতায়েন করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৭ লক্ষাধিক সদস্য। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি আনসার সদস্যদের পাশাপাশি স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা। ভোটকেন্দ্র ও কেন্দ্রের চারদিকে নিরাপত্তা বাহিনী বিশেষ নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তুলেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ভোটকেন্দ্রের বাইরে সব ধরনের যানবাহন ও অপ্রয়োজনীয় লোকজনের চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। বাহিনীর সদস্যরা কেন্দ্রের চারপাশে মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের টহলও জোরদার করেছে। সারা দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৭ লক্ষাধিক সদস্য মোতায়েন থাকছে। সংসদের ২৯৯ নির্বাচনী আসনকে মেট্রোপলিটন সিটি, বাইরের পার্বত্য এলাকা, দ্বীপাঞ্চল, হাওর মিলে তিন ভাগে বিন্যাস করা হয়েছে। প্রত্যেক আসনের ভোটকেন্দ্রগুলো সাধারণ ও গুরুত্বপূর্ণ দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ভোটের মাঠ সংঘাতমুক্ত ও আনন্দমুখর রাখতে রাজধানী ঢাকাজুড়ে সুসংগঠিত ও সুদৃঢ় নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি সেনা, নৌ, র্যাব, বিজিবি, আর্মড ব্যাটালিয়ন ও আনসারসহ সব বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা সাজানো হয়েছে। এ ছাড়া যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবেলায় ডিএমপির সোয়াত, বোম ডিজপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড প্রস্তুত থাকবে। পুলিশ জানায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯ আসনের প্রতি ভোট কেন্দ্রেই পুলিশ মোতায়েন থাকবে। পুলিশের সঙ্গে থাকবে আনসার ও অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা। ভোটকেন্দ্র ছাড়াও পুলিশ টহল এবং ছদ্মবেশেও গোয়েন্দা নজরদারি করবে। কাউকে নির্বাচনের জন্য হুমকি মনে করলে তাকেই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। পুলিশের ডিআইজি (প্রশাসন) হাবিবুর রহমান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার পুলিশ সদস্যকে নির্বাচনে নিরাপত্তার দায়িত্বে মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করতে মোতায়েন পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দিয়ে মাঠে পাঠানো হয়েছে। নির্বাচনের জন্য হুমকি মনে হলে যেকোনো ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে নির্বাচনে দেশজুড়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে মোতায়েন থাকবে র্যাবের ১০ হাজার সদস্য। এজন্য করা হয়েছে ৫৭টি বিশেষ ক্যাম্প। সার্বক্ষণিক ৪টি হেলিকপ্টার প্রস্তুত থাকবে। প্রয়োজনে দেশের যেকোনো প্রান্তে পাঠানো হবে র্যাবের স্পেশাল ফোর্স। এ ছাড়া স্ট্যান্ডবাই থাকবে সেনাবাহিনীর দুটি হেলিকপ্টার। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে বিভিন্ন স্থানে সেনা সদস্যরা টহল ও তল্লাশি কার্যক্রম শুরু করেছে। ২৪ ডিসেম্বর থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা মাঠে নামলেও গতকাল থেকে সেনা সদস্যরা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন পয়েন্টে টহল ও তল্লাশি শুরু করেছে। রিটার্নিং অফিসার চাইলে সেনা সদস্যরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় অন্যান্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সহায়তা দেবে। রিটার্নিং অফিসার বা প্রিসাইডিং অফিসারের চাহিদা ছাড়া সশস্ত্রবাহিনী ভোটকেন্দ্রের ভেতরে কিংবা ভোট গণনা কক্ষে কোনো দায়িত্ব নিতে পারবে না। কোথাও কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তা প্রশমনে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করবে। এ ব্যাপারে সাবেক নির্বাচন কমিশনার মোদাব্বির চৌধুরী বলেন, এবারের নির্বাচনে ব্যাপকভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী দায়িত্ব পালন করছে। বিচ্ছিন্ন কয়েকটি ঘটনা ছাড়া বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছে নির্বাচনে স্বাভাবিক অবস্থা বজায় রাখতে। তাদের সহয়তায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনীও মাঠে নেমেছে। আশা করছি-এবারের নির্বাচন সুষ্ঠুভাবেই সম্পন্ন করতে তারা সক্ষম হবে। রাজধানীতে সেনা টহল ও তল্লাশি শুরু রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় টহল ও যানবাহনে তল্লাশি শুরু করেছে সেনা সদস্যরা। গতকাল শুক্রবার দুপুরে প্রথমবারের মতো রাজধানীর বাংলামোটর এলাকায় সেনা সদস্যদের তল্লাশি করতে দেখা যায়। এ সময় রাস্তায় বিভিন্ন যানবাহনে তারা তল্লাশিও চালায়। গত ২৪ ডিসেম্বর নির্বাচন উপলক্ষে সারা দেশে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। গত কয়েকদিন সেনা সদস্যরা শুধু টহল দিয়েছে। এ ছাড়া বিজিবি, র্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহনে তল্লাশি চালাচ্ছেন। শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এসব দৃশ্য দেখা গেছে। গত বৃহস্পতিবার আন্তঃজনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) এক বিজ্ঞপ্তিতে নিয়মিত সেনা টহলের কথা জানানো হয়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৩৮৯ উপজেলায় বৃহস্পতিবার সেনাবাহিনী তাদের দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় ১৫২৩ টহল পরিচালনা করেছে। এ ছাড়া মোতায়েনের দিন ২৪ ডিসেম্বর থেকে আজ পর্যন্ত সেনাবাহিনী মোট ৩৯৯৮টি টহল কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। টহলের পাশাপাশি সেনাবাহিনী তার নিজ নিজ দায়িত্বপূর্ণ এলাকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে নিয়মিতভাবে যোগাযোগ রাখছে এবং যেকোনো প্রয়োজনে সার্বিক সহায়তা করতে প্রস্তুত রয়েছে। গতকাল সরেজমিন বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, সেনা সদস্যদের পাশাপাশি বিভিন্ন সড়কে বিজিবি সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে। ভোটের একদিন আগে যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন তারা। রাজধানীর আবদুল্লাহপুর, উত্তরা বিমানবন্দর, খিলক্ষেত, গুলশান, বনানী, মহাখালিসহ বাড্ডা, রামপুরা এলাকায় পুলিশ-র্যাব পাশাপাশি সেনাবাহিনীর সদস্যদেরও টহল দিতে দেখা গেছে। এ ছাড়া রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়ে মোড়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেছে।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১