বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২৮ December ২০১৮

৩০ ডিসেম্বরের অপেক্ষা

# অপেক্ষায় ১০ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ৪৮০ ভোটার # জয়ের স্বপ্নে বিভোর এক হাজার ৮৪৮ প্রার্থী # জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া শান্তিপূর্ণ ভোট

৩০ ডিসেম্বরের অপেক্ষা প্রতীকী ছবি


দেখতে দেখতে বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে শেষ হলো টানা ১৯ দিনের প্রচারণা। এখন শুধু ভোটের অপেক্ষা। আজ শুক্রবারের রাত পেরিয়ে কাল শনিবার দিন শেষে রাত পোহালেই পরশু রোববার সকাল থেকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ভোটযুদ্ধ শুরু হবে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ। নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। রাস্তায় রাস্তায় টহল শুরু করেছেন সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাব, পুলিশ, আনসারসহ অন্যান্য সংস্থার সদস্যরা। রয়েছে গোয়েন্দা নজরদারিও। মানুষ যাতে নিরাপদে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে স্বাচ্ছন্দ্যে ভোট দিতে পারেন, সে জন্যই এমন প্রস্তুতি।

তারপরও অনেকের মধ্যে শঙ্কা বিরাজ করছে। যেহেতু এই প্রথমবারের মতো দলীয় সরকারের অধীন জাতীয় সংসদ নির্বাচন হচ্ছে, সে কারণে সব কয়টি রাজনৈতিক দলই এটিকে নিয়েছে চ্যালেঞ্জ হিসেবে। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শেষ পর্যন্ত কোন দলের বিজয় হয়, সেটিই এখন দেখার বিষয়। তবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ভোটের দিন ও এর আগে-পরে সহিংসতামুক্ত পরিবেশ নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ মহাসচিবের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এ তথ্য জানিয়েছেন। একই দাবি করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রবার্ট মিলার। উল্লেখ্য, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে গত ২৮ নভেম্বর ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। ২ ডিসেম্বর বাছাই, ৯ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ছিল। আজ সকালে প্রচারণা শেষ হয়ে ৩০ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ করা হবে। এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার হচ্ছেন ১০ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ৪৮০ জন। এর মধ্যে পাঁচ কোটি ২৫ লাখ ৪৭ হাজার ৩২৯ জন পুরুষ এবং পাঁচ কোটি ১৬ লাখ ৪৩ হাজার ১৫১ জন নারী ভোটার রয়েছেন। ৩০০ সংসদীয় আসনে ৩৯টি রাজনৈতিক দলের অধীনে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন এক হাজার ৮৪৮ জন প্রার্থী। এর মধ্যে এক হাজার ৭৭৯ জন পুরুষ এবং ৬৯ জন নারী প্রার্থী রয়েছেন। ৪০ হাজারের একটু বেশি ভোটকেন্দ্রে ভোট নেওয়ার জন্য সারা দেশে প্রায় ৭ লাখ ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তা নিয়োগ পেয়েছেন। নির্বিঘ্নে ভোট গ্রহণ করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় ৬ লাখ সদস্যকে ভোটকেন্দ্রে মোতায়েন করা হয়েছে। এবারই প্রথমবারের মতো দেশের ৬টি সংসদীয় আসনের সব কয়টি ভোটকেন্দ্রে ইভিএমে ভোট নেওয়া হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার ইভিএমে ভোট দেওয়ার কৌশল শিখিয়ে দেওয়া হয়েছে সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটরদের।

নির্বাচনী প্রচারণার শেষ দিনটিতে বহু জায়গায় গতকাল ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের জন্য খুব একটা ভালো যায়নি। তারপরও ঘরে বসে ছিলেন না প্রার্থীরা। গণসংযোগ, পথসভা, নেতাকর্মী-শুভাকাঙ্ক্ষীদের সঙ্গে নিয়ে ঘুরে বেড়ানো ইত্যাদির মাধ্যমে নিজেদের ভোটারদের কাছাকাছি নেওয়ার চেষ্টা করেন প্রার্থীরা। শুধু প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল ওরফে মহাজোট ও ঐক্যফ্রন্টেরর প্রার্থীই নন, বরং সব প্রার্থীরই দিনটি কেটেছে মহাব্যস্ততায়। আজ শুক্রবার ও কাল শনিবারও দিনটি কাটবে মহাব্যস্ততায়। এ ছাড়া এবারই ব্যাপকভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে প্রার্থীরা ব্যাপক-প্রচারণা করেছেন। নির্বাচন উপলক্ষে যে দুটি জনমত জরিপ প্রকাশ পেয়েছে তাতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটই বিজয়ী হওয়ার পথে রয়েছে। বিষয়টি গতকাল কলকাতার দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকাকে এক সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেনও। এ ছাড়া আগামী ৩০ ডিসেম্বর মহাজোটের মহাজয় সুনিশ্চিত হবে বলে মন্তব্য করেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও ঢাকা-৮ আসনের মহাজোট মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রাশেদ খান মেনন।

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে কাল শনিবার মধ্যরাত (রাত ১২টা) থেকে ভোটের দিন ৩০ ডিসেম্বর দিবাগত মধ্যরাত (রাত ১২টা) পর্যন্ত সব ধরনের যানবাহন চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই সময় বেবিট্যাক্সি, অটোরিকশা, ইজিবাইক, ট্যাক্সিক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক, টেম্পুসহ স্থানীয় যন্ত্রচালিত যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আর আজ শুক্রবার মধ্যরাত (রাত ১২টা) থেকে ১ জানুয়ারি মধ্যরাত (রাত ১২টা) পর্যন্ত মোট চার দিন সারা দেশে মোটরসাইকেল চালানোয় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে নির্বাচন কমিশনের স্টিকার নিয়ে কর্মরত সাংবাদিকরা বাইক চালাতে পারবেন। গতকাল বৃহস্পতিবার গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, নির্বাচন কমিশনের এক নির্দেশনার আলোকে এ-সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করে সব রিটার্নিং কর্মকর্তাকে বিষয়টি বাস্তবায়নের জন্য নির্দেশ দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব স্বাক্ষরিত পরিপত্রে বলা হয়েছে, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২-এর অনুচ্ছেদ ৭৮ অনুসারে ভোটগ্রহণ শুরুর পূর্ববর্তী ৪৮ ঘণ্টা ও ভোটগ্রহণ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা সময়ের মধ্যে অর্থাৎ, ২৮ ডিসেম্বর সকাল ৮টা থেকে ১ জানুয়ারি বিকাল ৪টা পর্যন্ত সব নির্বাচনী এলাকায় যেকোনো ধরনের সভা, সমাবেশ ও মিছিল, শোভাযাত্রা করা যাবে না। জাতীয় মহাসড়ক এবং নির্বাচন সংশ্লিষ্ট যানবাহন বা নৌযান ও জরুরি সেবা প্রদানকারী বা অনুরূপ যান চলাচলের ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা শিথিলযোগ্য হবে। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুসারে ইতোমধ্যে সড়ক পরিবহন বিভাগ এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়কেও এ-সংক্রান্ত আদেশ জারি করেছে।

ভোট উপলক্ষে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দূরের কেন্দ্রে ব্যালট বাক্সসহ অন্যান্য সরঞ্জাম পাঠানো শুরু হয়েছে। পাহাড়ি এলাকায় সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার দিয়ে ভোটের মালামাল গতকাল সন্ধ্যার আগেই পৌঁছানো হয়েছে। আজ ও কাল বিকাল থেকেই প্রিসাইডিং অফিসাররা কেন্দ্রগুলো বুঝে নিয়ে রাতে সেখানে অবস্থান করবেন। এদিকে সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন উপহার দেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন নির্বাচন কমিশনার (ইসি) ব্রিগেডিয়ার (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী। গতকাল বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, অনেক দিন পরে এবারের নির্বাচন। রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীর সংখ্যাও অনেক বেশি। তাই উত্তেজনা একেবারেই নেই, তা বলব না। কিছুটা উত্তেজনা অবশ্যই আছে। তবে তা নিয়ন্ত্রণে আছে। নির্বাচনে দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা হচ্ছে, নানা ঘটনা ঘটছে- এগুলো কমিশনের নিয়ন্ত্রণে আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উদ্বেগজনক পরিস্থিতি আছে বলে আমি মনে করি না। প্রার্থী, সমর্থকসহ সবার প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে, তারা সংযতভাবে প্রচারণা বা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেন, যেন নির্বাচনী পরিবেশ বজায় থাকে। ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন।

এদিকে প্রচারের শেষদিন গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকায় সুধাসদন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে টাঙ্গাইল, কুমিল্লা, যশোর, পাবনা ও পঞ্চগড়ে নির্বাচনী সভায় যোগ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন ঘিরে বিএনপি-জামায়াতের ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ প্রতিরোধে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। ভোটের দিনে কেউ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে এলে তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে তুলে দিতে বলেছেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা নিরাপদে থাকবেন। কারণ ইতোমধ্যে বিএনপি-জামায়াত মিলে ১ ডিসেম্বর থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে আওয়ামী লীগের পাঁচজন নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে এবং ৪৪১ জন আহত হয়েছে। আওয়ামী লীগের ১৭০টা অফিস-বাড়িঘর তারা ভাঙচুর করেছে, ৫৪টা স্থানে বোমা হামলা করেছে। পেট্রোলবোমা হামলাও চালানো হয়েছে। ৬৮টি স্থাপনা ও যানবাহনে তারা হামলা করেছে। পুলিশের ওপরও তারা হামলা করেছে।

ভোটের প্রচারের শেষদিন সংবাদ সম্মেলনে এসে মানুষকে ধানের শীষের পক্ষে ‘ভোট বিপ্লব’ ঘটানোর আহ্বান জানিয়েছেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন। ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেছেন, ধানের শীষ দলের নয়, ঐক্যবদ্ধ জনগণের প্রতীক। এই প্রতীকে ভোট দিয়ে দেশকে মুক্ত করুন। নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে অভিযোগ জানিয়ে আসা ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্যরা বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকার পুরানা পল্টনের জামান টাওয়ারে কামালের কার্যালয়ে ‘জরুরি’ বৈঠকে বসেন। নির্বাচনের দুদিন আগে কামাল ‘জরুরি’ বৈঠক ডাকায় তৈরি হয় গুঞ্জন। তবে বৈঠকের পর সংবাদ সম্মেলনে এসে ভোটের লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়ে ড. কামাল হোসেন দেশের মানুষকে ৩০ ডিসেম্বর ভোটকেন্দ্রে নিয়ে ‘ভোটবিপ্লবে’ অংশ নেওয়ার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ভোটবিপ্লবের মাধ্যমে দেশ দলীয়করণ মুক্ত হবে এবং দেশের মালিক হবে জনগণ। জনগণ পরিবর্তন চায় কি না, সেই সিদ্ধান্ত রোববার তাদের নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ মহাজোট তথা আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়ে ঢাক-১৭ নির্বাচনী এলাকা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১