বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২২ December ২০১৮

মা ও ফটিকলাল


ফটিকলাল ও তার মা আদুরী চাঁনখারপুল বস্তিতে থাকে। ফটিকলাল পঙ্গু। তার পা-দুটি জন্মের পর হতেই বাঁকা, শুকনা ও চিকন। সাধারণ মানুষের পা হতে ছোট। হাঁটতে পারে না। ৪৫ বছর বয়স হওয়া সত্ত্বেও তাকে দেখতে একজন বালকের মত দেখায়। তার দেহ আকারে খুবই ছোট। সকাল হলে ফটিকলালের মা তাকে বিয়ারিংয়ের গাড়িতে পাঁজা করে বসিয়ে দেয়। বিয়ারিংয়ের গাড়িটির সামনের দিকে প্লাস্টিকের দড়ি বাঁধা আছে। আদুরী সেই দড়ি ধরে বিয়ারিংয়ের গাড়িটি টানতে টানতে রাস্তার পাশে এনে থামিয়ে দেয়। ফটিকলালের সামনে একটি থালা আছে, বিয়ারিংয়ের গাড়ির ওপর। ফটিকলাল পথচারীদের কাছে ভিক্ষা চায়। কেউ ভিক্ষা দেয়, কেউ দেয় না। এভাবে প্রতিদিন ভিক্ষা করে তার দিন কাটে।

ফটিকলালের জন্মের ইতিহাস এবং তার মা আদুুরীর জীবন ইতিহাস, আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ওরা যেন স্বাধীনতা যুদ্ধের একটা করুণ ইতিহাস। তখন এদেশে সবেমাত্র পাকসেনারা এসেছে। কিন্তু কনকডাঙ্গা গ্রামে তাদের অত্যাচারের তাপ পৌঁছায়নি। সেদিন ছিল রবিবার। সকালে নাস্তা তৈরির পরে যুবতী মেয়ে আদুরী জল আনতে মহাসড়কের পাশে নদীর ঘাটে যায়। পিতলের কলসীতে জল ভরে ধীরে ধীরে হেঁটে আসছে বাড়ির অভিমুখে। মহাসড়কের কাছাকাছি এসে পৌঁছলে আদুরীকে দেখে পাকসেনার গাড়ি রাস্তার ওপর থেমে যায়। দুজন পাকসেনা গাড়ি থেকে নেমে আসে আদুরীর দিকে। আদুরী পাকসেনা দেখে ভয়ে পাশের আখ ক্ষেতের ভিতরে গিয়ে পালায়। পাকসেনারা তাকে আখ ক্ষেত থেকে জোর করে ধরে নিয়ে তাদের গাড়িতে উঠিয়ে পাকসেনাদের ক্যাম্পে নিয়ে যায়। সেখানে তাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোর করে তিন দিন ধর্ষণ করে ওই পাষণ্ড পাকসেনারা। তিন দিন পরে তারা ছেড়ে দেয় আদুরীকে। অনেক কষ্টে খোঁড়াতে খোঁড়াতে রক্তমাখা শরীর আর কাপড়ে বাড়ি ফিরে আসে আদুরী। বাড়িতে কাউকে না দেখে আশপাশে পড়শী বাড়ি গিয়ে দেখে কোনো বাড়িতেই লোক নেই। কনকডাঙ্গা গ্রামের পাল পাড়া জনশূন্য। পাশের গাঁয়ের দূর সম্পর্েকর জেঠার সঙ্গে তখন আদুরী ভারতে চলে যায়। সেখানে গিয়ে আশ্রায় শিবিরে বাবা-মা ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা হয় তার। দেশ স্বাধীন হলে বাড়িতে ফিরে আসে আদুরী তার পরিবার-পরিজনের সঙ্গে। বাড়ি আসার এক মাস পরে তার গর্ভে ফটিকলালের জন্ম হয়। ফটিকলালের জন্মের পরে পাড়া-পড়শীর মুখে আদুরী ও তার পুত্রকে নিয়ে নানা কথার গুঞ্জন শুরু হলো। আদুরী লোকলজ্জার ভয়ে বাড়ি থেকে বের হতো না। ধীরে ধীরে ফটিকলালের বয়স পাঁচ বছরে পা দিল। গ্রামের মানুষের গুঞ্জন থামছে না তাই বলে। একদিন ভোররাতে আজানের সময় পুত্র ফটিকলালকে নিয়ে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দিল আদুরী। ঢাকায় এসে চাঁনখারপুল বস্তিতে আশ্রায় নিল মা ও ছেলে।

বিজয় দিবস কিংবা স্বাধীনতার মাস এলে আদুরী নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না। কেমন অস্থিরতা কাজ করে তার ভেতরে। পঁয়তাল্লিশ বছরের ফটিকলাল আজো অবুঝ শিশুর মতো মায়ের মুখের দিকে তখন ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। মা ও ছেলের সেই কান্নায় বাংলার আকাশ ভারী হতে থাকে। অথচ মা ও ছেলে কত অসহায়, কেউ কারো দুঃখ ছুঁয়ে দেখতে পারে না।

 

সালাম হাসেমী


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১