আপডেট : ১৫ December ২০১৮
বিজয়ের মাস। আনমনে বসে আমাদের গৌরবের বিজয় নিয়ে ভাবছিলাম। ঠিক এমন সময় সে হাসতে হাসতে আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল। এমন পাগল করা মায়াবী হাসি আর কখনো দেখিনি আমি। এমন হাসিতে যেন নতুন সূর্যের মায়াবী আভা ঠিকরে পড়ছিল। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যে তার হাসি আমাকে যেন জাদু করে নিল। আমি মোহগ্রস্ত হয়ে তার পিছন পিছন যেতে লাগলাম। সে ঠিক যেদিকে যাচ্ছিল আমিও নিজের অজান্তে সেদিকেই যাচ্ছিলাম। তার গায়ে জড়ানো ছিল একটি লাল রঙের চাদর। যে চাদরের প্রান্তগুলো ছিল সবুজ রঙে রাঙানো। তার গায়ের চাদর যেন বিজয়ের মাসেরই প্রতীক হয়ে উঠেছিল। গত কয়েক দিন ধরে খুব শীত পড়ছে। কুয়াশাদের আনাগোনাও ছিল চোখে পড়ার মতো। সে লাল রঙের চাদরের এক প্রান্ত মাথায় টেনে ঘোমটা দিচ্ছিল। কুয়াশা থেকে মাথাটাকে ঢেকে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে অবিরত। চাদরের সবুজ প্রান্ত বার বার সরে যাচ্ছিলো। সেই চাদরের কিছু সুতোরা পাখা বের করে উড়ছিল। আমার ইচ্ছে হচ্ছিল সেই লাল সবুজের চাদরের এক প্রান্ত ধরে টান দিই। কিন্তু এমন আচরণ শোভা পাওয়ার নয়। তাই এমন কাজ থেকে বিরত থাকলাম। আমি তার পিছু পিছু আরও দ্রুত পা চালাতে লাগলাম। সেও দ্রুত হারিয়ে গেল ঘরের অন্দরে। বিকেল থেকে আবারো আমার অপেক্ষার প্রহর শুরু হল। সে আমাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছে। নামটা তখনো জানা হয়নি। পড়ন্ত বিকেলে শীত জেঁকে বসতে শুরু করেছে। তাই একটা লাল সবুজের চাদর মমত্ববোধ তৈরি করে তার গায়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমিও বেশ নাছোড়বান্দা। পিছু ছাড়বার পাত্র নই। তাই অন্দর মহলের ফটকেই তার অপেক্ষায় রইলাম। অবশেষে কিছু সময় বাদে সে ভিতর থেকে বেরিয়ে এলো। আমার পাশ ঘেঁষে বাইরে যেতে লাগল। গায়ে এখনো সেই লাল সবুজের চাদর জড়ানো। বের হওয়ার সময় লাল সবুজের চাদরের এক প্রান্ত আমাকে ছুঁয়ে দিলো। আমি কিছুক্ষণের জন্য বখাটে হয়ে গেলাম। নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলাম না! তার অলখ্যে লাল সবুজের চাদরের এক প্রান্ত আমি টেনে ধরতে চাইলাম। কিন্তু চাদর আমার কাছে ধরা দিল না। তবে চাদরের কিছু লাল আর সবুজ সুতো আমার হাতে চলে এলো। সেই সুতোকে আমি ভালোবাসার পরশ মেখে যতনে আমার বুক পকেটে রেখে দিলাম। এভাবে আরো কিছুদিন চলে গেল। আমার সকাল-সন্ধ্যা কাটছে এখন কল্পনার রথে চড়ে। লাল সবুজের চাদরের উষ্ণতা যেন আমার গায়ে সারাক্ষণই অনুভব করি। তার প্রাণচাঞ্চল্য আমার কাছে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে দিয়ে স্বাধীনতার নতুন সূর্যের কথা মনে করিয়ে দেয়। লাল সবুজের চাদরের ঘোমটার ভিতরে লুকিয়ে থাকা সেই মায়াবী চেহারা আর হাসি আমাকে বার বার মুগ্ধ করে। কী করে তাকে ভোলা সম্ভব! আমি বেশ বুঝতে পারছি, নিজে খুব দ্রুত পথ হারিয়ে ফেলতে চলেছি। আমার সবকিছুতেই এখন অসংলগ্নতা ধরা পড়ছে। আমি ধীরে ধীরে ভালোবাসার কাঁপুনিতে এক বিপর্যস্ত সৈনিক হয়ে গেলাম। আমার মধ্যে চরমভাবে উষ্ণতার অভাব দেখা দিয়েছে। আমার উষ্ণতা দরকার। তবে শুধু সেই উষ্ণতা, যা কি-না শুধু একটি নির্দিষ্ট লাল-সবুজ চাদরের। অন্য কোনো উৎস থেকে পাওয়া উষ্ণতায় আমার এ সমস্যা সমাধান হবে না, তাও জানি। একসময় ধৈর্য হারিয়ে তার পথ আগলে দাঁড়ালাম। সে কিছুটা অবাক হয়ে জানতে চাইল, ‘কী চাই?’ আমি কিছুটা ইতস্তত হয়ে বললাম, ‘তেমন কিছু চাই না। তবে দিতে চাই!’ সে আবারো জানতে চাইল, ‘কী’? আমি বুক পকেট থেকে পরম আদরে রাখা সেই লাল সবুজের সুতোগুলো বের করে তার হাতে ধরিয়ে দিলাম। সে মোটেই অবাক হল না। সে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল, ‘সুযোগ পেলে মনে হয় আমার চাদরটাও টেনে নিতেন!’ আমিও মুচকি হাসি দিয়ে বললাম, ‘সেই সুযোগের অপেক্ষায় তো আছি!’ সে আমার কথা শুনে কিছুক্ষণ কী যেন ভাবল। তারপর বলল, ‘কেন এমন হলো’? আমি তাকে উত্তরে বললাম, ‘বিজয়ের মাসে বিজয়ের প্রতীক গায়ে দিয়ে চলাচল, এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক! এ নিশান আমাকে ভীষণ আকৃষ্ট করে। আমার স্বাধীনতায় নতুন দেবীর বর অনুভব করছি।’ আমার কথা শুনে সে খিল খিল করে হাসিতে ফেটে পড়লো। তার হাসি দেখে আমার মনে খুব সাহস এলো। আমি বললাম, ‘চাদর আর চাদরের ভিতরের মানুষ দুটোই আমার চাই’। সে আমার হাতে সেই লাল সবুজের সুতো ধরিয়ে দিয়ে বলল, ‘মনে হচ্ছে বিজয় আপনারই হবে! তবে যখন কাছে থাকব না তখন এই লাল সুতো যেন সেই বুক পকেটেই থাকে’। এ কথা বলেই সে উল্টো পথ ধরল। এই বিজয়ের মাসে অন্য এক মহা বিজয়ের আনন্দ আমার উপর ভর করলো। চিৎকার করে বললাম, ‘নামটা তো জানা হলো না!’ ‘বিজয়া’। এরপর ওর সুললিত কণ্ঠে উচ্চারিত ওর নিজেরই নামে এই বিজয়ের মাসে লেখা হলো আমার বিজয়গাথা।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১