আপডেট : ১১ December ২০১৮
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রার্থীদের আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর দিনে ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থীর গণসংযোগে হামলায় একজন আহত হয়েছেন। গতকাল সোমবারের এ ঘটনার জন্য আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ও তার নেতাকর্মীদের দায়ী করেছেন নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামা বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী। জামালপুরে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সংঘর্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন। চুয়াডাঙ্গায় যুবলীগ-ছাত্রলীগের হামলায় বিএনপির তিন কর্মী আহত হয়েছেন। শেরপুরে যুবলীগের পাল্টা কর্মসূচিতে ধানের শীষের প্রার্থীর নির্বাচনী সভা পণ্ড হয়ে গেছে। এদিকে মেহেরপুরের গাংনীতে আওয়ামী লীগের একপক্ষের হামলায় অপরপক্ষের পাঁচজন আহত হয়েছেন। বাংলাদেশের খবরের প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর। ঠাকুরগাঁও : ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের মহাজোটের নৌকার প্রতীকের প্রার্থী বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির জেলা সভাপতি অধ্যাপক ইয়াসিন আলী বিকাল পৌনে ৫টায় পীরগঞ্জ শহরের পূর্ব চৌরাস্তা থেকে গণসংযোগ শুরু করেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইয়াসিন পশ্চিম চৌরাস্তায় বিভিন্ন দোকানদার ও পথচারীর সঙ্গে গণসংযোগ করার সময় ২০-২৫ জনের এক দল যুবক আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর (মোটরগাড়ি প্রতীক) পক্ষে স্লোগান দিয়ে তাদের ওপর চড়াও হয়। এ সময় নৌকার প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য ইয়াসিন আলীকে রক্ষা করতে গিয়ে পীরগঞ্জ ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবু জাহিদ ইবনে জুয়েল আহত হন। ঘটনার পরপরই সেখানে পুলিশ উপস্থিত হয়ে সংসদ সদস্য ইয়াসিন আলীকে রক্ষা করেন এবং তাকে রাণীশংকৈলে পৌঁছে দেয়। ঘটনার সময় পীরগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও আরটিভির স্টাফ রিপোর্টার জয়নাল আবেদীন বাবুল ছবি তুলতে গেলে পীরগঞ্জ থানার ওসি তাকে বাধা দিয়ে অশালীন আচরণ করেন। মহাজোটের প্রার্থী ইয়াসিন আলী বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমদাদুল হকের সমর্থকরা আমার গণসংযোগে বাধা দিলে হামলায় আমার একজন কর্মী আহত হয়। তবে আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য ইমদাদুল হক বিকালে বলেন, আমার কর্মীদের হয়রানির উদ্দেশ্যে ইয়াসিন আলী বানোয়াট অভিযোগ তুলেছেন। পীরগঞ্জ থানার ওসি বজলুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, হামলায় একজন আহত হলেও গুরুতর নয়। সাংবাদিককে ছবি তুলতে বাধা দেওয়ার ব্যাপারে দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন, আমি ওই সাংবাদিককে চিনতে পারিনি। জামালপুর : জামালপুরের মেলান্দহে বিএনপির প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল প্রতীক (ধানের শীষ) বরাদ্দ পেয়ে হযরত শাহ কামালের (রহ.) মাজার জিয়ারত করতে গেলে আওয়ামী লীগের কর্মীরা বাধা দেয়। এতে দু’পক্ষের সংঘর্ষে ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ খালেকুজ্জামান জুবেরীসহ উভয়পক্ষের ১৫ জন আহত হয়েছেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বিএনপির কর্মীরা দাবি করেন, তারা মাজারে প্রবেশের সময় পেছন থেকে আওয়ামী লীগের কর্মীরা হামলা চালায়। তবে দুরমুঠ ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ খালেকুজ্জামান জুবেরী জানান, বিনা উসকানিতে বিএনপির প্রার্থীর বহর থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর ওপর হামলা চালানো হয়েছে। মেলান্দহ থানার উপপরিদর্শক মর্জিনা খাতুন বলেন, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে দুরমুঠ বাজার এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মেহেরপুর : জেলার গাংনী উপজেলার দুর্লভপুর গ্রামে স্থানীয় আওয়ামী লীগের একপক্ষের হামলায় অপরপক্ষের ৫ জন আহত হয়েছেন। নির্বাচন কেন্দ্রিক বিরোধের জের ধরে গতকাল সকালে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের মধ্যে চারজনকে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গাংনী উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি দুর্লভপুর গ্রামের বাসিন্দা তৌহিদুল ইসলাম ও দুর্লভপুর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতি হায়দার আলীর মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ। নির্বাচন নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে তিন দিন থেকে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এর জেরে গতকাল হামলার ঘটনা ঘটে। গাংনী থানার ওসি হরেন্দ্রনাথ সরকার বলেন, হামলাকারীদের আটকের চেষ্টা চলছে। চুয়াডাঙ্গা : চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে বিএনপির প্রার্থী মাহমুদ হাসান খান বাবুর নির্বাচনী মিছিলে হামলা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যায় জীবননগর উপজেলা শহরে হওয়া এ হামলায় যুবদলের তিন কর্মী আহত হয়েছেন। স্থানীয়রা জানায়, ধানের শীষের প্রার্থী মাহমুদ হাসান খান বাবুর পক্ষে যুবদলের নেতাকর্মীদের বের করা একটি মিছিল উপজেলা শহরের চার রাস্তার মোড়ে পৌঁছালে যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এ সময় যুবদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ-যুবদলের নেতাকর্মীদের কয়েক দফা ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়। জীবননগর উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কামরুল ইসলাম দাবি করেন, তাদের শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী মিছিলে পুলিশের সহায়তায় ছাত্রলীগ-যুবলীগের নেতাকর্মীরা লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালিয়েছে। এ ব্যাপারে কথা বলতে জীবননগর উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক আবদুস সালাম ঈসার সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। জীবননগর থানার ওসি শেখ গনি মিয়া জানান, ধানের শীষের নির্বাচনী মিছিলে একটু ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে, সংঘর্ষ হয়নি। চাঁদপুর : চাঁদপুর-৪ ফরিদগঞ্জ আসনে ধানের শীষের মিছিলে পুলিশি হামলার অভিযোগ করেছেন বিএনপি প্রার্থী এমএ হান্নান। গতকাল সন্ধ্যার পূর্বে উপজেলা সদরে এ ঘটনা ঘটে। অন্যদিকে পুলিশ বলেছে বিএনপি সশস্ত্র মিছিল করায়, তারা নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কায় বাধা দিয়েছে। এদিকে পুলিশের হামলায় বিএনপির ২৫ নেতাকর্মী এবং বিএনপির কর্মীদের হামলায় অন্তত ৫ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলে উভয়পক্ষ দাবি করেছে। পুলিশ হামলার ঘটনায় আরিফ পাটওয়ারী ও ইমাম হোসেন নামে দুজনকে আটক করেছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ৬ রাউন্ড শটগানের গুলি ছুড়েছে। জানা গেছে, সোমবার বিকালে বিএনপি প্রার্থী এমএ হান্নানের নেতৃত্বে ধানের শীষের একটি বিশাল মিছিল উপজেলা সদরে মিছিল করার সময়ে মধ্যবাজারে পুলিশ প্রথমে বাধা প্রদান ও পরে লাঠিচার্জ শুরু করে। এ সময় পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এদিকে বিএনপি প্রার্থী এমএ হান্নান সন্ধ্যায় পুলিশি হামলার প্রতিবাদ জানিয়ে ফরিদগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। এ সময় তিনি ঘটনার নিন্দা জ্ঞাপন করেন এবং ফরিদগঞ্জ থানার ওসির প্রত্যাহারের দাবি করেছেন। ফরিদগঞ্জ থানার ওসি হারুনুর রশিদ চৌধুরী জানান, সোমবার শেষ বিকালে বিএনপির একটি সশস্ত্র মিছিল উপজেলা সদরে আসে। নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার পুলিশ বাধা প্রদান করলে পুলিশের ওপর হামলা করে বিএনপির কর্মীরা। শেরপুর : শেরপুর-৩ (শ্রীবরদী-ঝিনাইগাতী) আসনে ধানের শীষের মনোনীত প্রার্থী মাহমুদুল হক রুবেলের পূর্বনির্ধারিত সভা পণ্ড হয়েছে। গতকাল প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর এ আসনের ধানের শীষের প্রার্থী রুবেল শ্রীবরদী উপজেলার খড়িয়া কাজিরচর ইউপির লংগরপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে তার প্রথম নির্বাচনী পথসভা আহ্বান করেন। একই স্থানে বিকাল ৫টায় স্থানীয় যুবলীগের পক্ষে পাল্টা সভা আহ্বান করলে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী সভাস্থলে অবস্থান নেয়। পরে ধানের শীষের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে মিছিল আসতে শুরু করলে পুলিশ ওই স্থানে সভা না করা নির্দেশ দেয়। মাহমুদুল হক রুবেল বলেন, আমরা প্রশাসনকে অবগত করে পূর্বনির্ধারিত স্থানে পথসভা করতে গেলে প্রশাসনের সহায়তায় স্থানীয় যুবলীগ আমাদের কর্মসূচি পণ্ড করে দেয়। শান্তি-শৃঙ্খলার স্বার্থে আমরা ওই স্থান ত্যাগ করেছি। বিষয়টি আমরা সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাকে লিখিতভাবে জানাব। শ্রীবরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোতাহারুল ইসলাম লিটন দাবি করেন, স্থানীয় যুবলীগ আগে থেকেই সমাবেশ ডেকেছিল। এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সেজুঁতি ধর বলেন, একই স্থানে দুই দল সভা আহ্বান করায় আমরা উভয় দলকেই সভা না করতে বলেছি।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১