আপডেট : ১০ December ২০১৮
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি ১৭৩ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে বলে নির্বাচন কমিশনে তালিকা দিয়েছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে ২৯টি আসনে। তবে ছাড় দেওয়া আসন নিয়ে এখনো জটিলতা রয়েছে। কারণ ২৯টির মধ্যে কয়েকটি আসনে এখনো মহাজোটের শরিকদের প্রার্থী রয়েছে। বাকি ১৪৪টি আসনে একক প্রার্থী দিচ্ছে মহাজোটের অন্যতম এই শরিক দল। এসব প্রার্থী উন্মুক্তভাবে নির্বাচনে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে লড়বেন। অর্থাৎ সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ১৪৪ আসনের ব্যালট পেপারে নৌকার পাশাপাশি লাঙ্গল প্রতীকও থাকবে। এ ছাড়া দলটির চেয়ারম্যানের সদ্য নিযুক্ত বিশেষ সহকারী এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার প্রার্থিতা ফিরে পেলে সমঝোতাভিত্তিক আসনসংখ্যা দাঁড়াবে ৩০টি। এদিকে দিনভর জাতীয় পার্টির তরফ থেকে ১৬১টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা বলা হলেও নির্বাচন কমিশনের কাছে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে ১৭৩ প্রার্থীর চূড়ান্ত তালিকা জমা দেওয়া হয়েছে। দলটির মহাসচিব মো. মসিউর রহমান রাঙ্গা স্বাক্ষরিত ওই প্রত্যয়নপত্রে বলা হয়, আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ২০১৮ জাতীয় পার্টির নিবন্ধন নং-১২ এর পক্ষ থেকে নিম্নে উল্লিখিত প্রার্থীগণকে লাঙ্গল প্রতীক বরাদ্দ করা হলো। ওই তালিকায় এক নম্বরে নাম রয়েছে নীলফামারী-৩ মেজর (অব.) রানা মো. সোহেল এবং সর্বশেষ ১৭৩ নম্বরে নামটি রয়েছে জাতীয় সংসদ আসন নং-২৯৯, রাঙামাটি এমএকে পারভেজ তালুকদার। এদিকে জাপার বর্তমান ৩৬ এমপির মধ্যে ১৪ জন মহাজোটের মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন। এ ছাড়া এবার নতুন করে ৭ জন মহাজোটের মনোনয়ন পেয়েছেন। ২০০৮ সালের অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় পার্টিকে ৪৯ আসন দিয়েও আওয়ামী লীগ ২০টিতে তাদের প্রার্থী রেখে দেয়। এ কারণে লাঙ্গল প্রতীকের ১৩ প্রার্থীর জামানত হারাতে হয়। গতকাল রোববার দলটি আনুষ্ঠাকিভাবে তাদের চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করে। বিকাল সাড়ে ৪টায় জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনে ১৭৩ জনের তালিকা জমা দেওয়া হয়েছে। ওই তালিকায় মহাজোটের জাপার প্রার্থী হিসেবে উন্মুক্তদের কোনো আলাদাভাবে উল্লেখ করা নেই। তবে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে গণ্যমাধ্যমে ১৬১ জনের তালিকা পাঠানো হয়েছে। ওই তালিকায় মহাজোটের ২৯ এবং জাতীয় পার্টির উন্মুক্ত প্রার্থী হিসেবে ১৩২ জনের তালিকা সরবরাহ করা হয়েছে। এদিকে, গতকাল রোববার বিকালে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, আওয়ামী লীগ জাতীয় পার্টিকে ২৯টি আসন দিয়েছে। এ ছাড়া ১৩২টি আসনে আমাদের প্রার্থীরা উন্মুক্তভাবে নির্বাচন করবে। সব মিলিয়ে ১৬১টি আসনে লড়বে জাতীয় পার্টি। তবে তিনি নিজেও ১৭৩ জনের নামের তালিকার বিষয়ে কিছু বলেননি। রোববার সন্ধ্যায় রাজধানীর বনানী জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, মহাজোটের সঙ্গে আলোচনা করেই জাতীয় পার্টির তালিকা করা হয়েছে। তাই মহাজোটে বিভ্রান্তির কোনো সুযোগ নেই। তিনি বলেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচন সবার অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং গ্রহণযোগ্য হবে। সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ভালো আছেন, সুস্থ আছেন উল্লেখ করে মহাসচিব বলেন, প্রার্থিতা নিয়ে যেন কোনো বিভ্রান্তি বা অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে, তাই জাতীয় পার্টির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের অনুরোধেই তিনি চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাননি। স্যার যখন খুশি তখনই দেশের বাইরে যেতে পারেন। আওয়ামী লীগের কাছ থেকে ২৯টি আসন পেয়ে ক্ষুব্ধ দলটির নেতারা। তারা জানিয়েছেন, গত নভেম্বর মাসে ৪৫টি আসন সমঝোতা করে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জাতীয় পার্টির চুক্তি সই হয়েছিল। এতে দুই পক্ষের নেতারা সই করেন। এখন তারা ২৯টি আসনে ছাড় দিয়েছে। যদি সাবেক মহাসচিব আদালতের মাধ্যমে প্রার্থিতা ফিরে পান তাহলে সাবেক মহাসচিব এবিএম রহুল আমিন হাওলাদারের আসনটি ছাড় দেওয়া হবে। সেই ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টি আসন পাচ্ছে মাত্র ৩০টি। অথচ আমাদের বর্তমান সংসদ সদস্য রয়েছে ৩৬ জন। প্রত্যাশিত সংখ্যক আসন না পেয়ে ক্ষুব্ধ এরশাদ। জাপার পক্ষে আওয়ামী লীগের সঙ্গে যারা দরকষাকষির দায়িত্বে ছিলেন, তাদের ভূমিকায় সন্তুষ্ট নন এরশাদ। মনোনয়ন বাণিজ্যে অভিযোগসহ এসব কারণে গত ৩ ডিসেম্বর মহাসচিবের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারকে। তার স্থলে মসিউর রহমান রাঙ্গাকে মহাসচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়। এরশাদের একজন উপদেষ্টা বাংলাদেশের খবরকে বলেন, আসন ভাগাভাগি নিয়ে আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টির সঙ্গে সমঝোতা হয়েছিল। সেখানে আমাদেরকে ৪৫টি আসন ছাড় দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় আওয়ামী লীগ এখন তাদের এই আসনের চেয়ে বেশি ছাড় নিতে রাজি হয়নি। এদিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জোটের প্রার্থী হিসেবে দুটি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। নিজের এলাকা রংপুর-৩ (সদর) আসনের পাশাপাশি রাজধানী ঢাকা-১৭ (গুলশান, বনানী, ক্যান্টনমেন্ট ও ভাসানটেকের কিছু অংশ) আসনে প্রার্থী হচ্ছেন তিনি। তবে এই আসনটি আওয়ামী লীগ চিত্রনায়ক আবকর হোসেন পাঠান ফারুককে মনোয়ন দিয়েছে। এ ছাড়া রাজধানীতে দুটি আসন পেয়েছে দলটি। একটি ঢাকা-৪, অপরটি ঢাকা-৬ আসন। ২০০৮ সালের নির্বাচনেও জোটগতভাবে ঢাকার এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে জয়ী হয়েছিলেন এরশাদ। রাজধানীর পুরান ঢাকার সূত্রাপুর-কোতোয়ালি এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৬ আসনও জাতীয় পার্টিকে ছেড়েছে আওয়ামী লীগ। বর্তমান সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদই এখানে দলীয় প্রতীক লাঙ্গল নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোটের প্রার্থী হয়েছেন। শ্যামপুর-কদমতলী নিয়ে গঠিত ঢাকা-৪ আসনে বর্তমান সাংসদ সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এবারো মহাজোটের মনোনয়ন পেয়েছেন। জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান রওশন এরশাদকে ময়মনসিংহ-৪ আসন, কো-চেয়ারম্যান জিএম কাদের লালমনিরহাট-৩ আসন এবং মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা রংপুর-১ আসন থেকে জোটের মনোনয়ন পেয়েছেন। মহাজোটের প্রার্থী হয়ে লড়বেন যারা : নীলফামারী-৩ মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল, নীলফামারী-৪ আহসান আদেলুর রহমান, লালমনিরহাট-৩ গোলাম মোহাম্মদ কাদের, কুড়িগ্রাম-১ একেএম মোস্তাফিজুর রহমান, কুড়িগ্রাম-২ পনির উদ্দিন আহমেদ, গাইবান্ধা-১ ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী, বগুড়া-২ শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ, বগুড়া-৩ নূরুল ইসলাম তালুকদার, বগুড়া-৬ মো. নূরুল ইসলাম ওমর, বগুড়া-৭ অ্যাডভোকেট আলতাফ আলী, বরিশাল-৩ গোলাম কিবরিয়া টিপু, বরিশাল-৬ নাসরিন জাহান রতনা, পিরোজপুর-৩ ডা. রুস্তম আলী ফরাজী, টাঙ্গাইল-৫ শফিউল্লাহ আল মুনির, ময়মনসিংহ-৮ ফখরুল ইমাম, কিশোরগঞ্জ-৩ মজিবুল হক চুন্নু, ঢাকা-৪ সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, ঢাকা-৬ কাজী ফিরোজ রশীদ, নারায়ণগঞ্জ-৩ লিয়াকত হোসেন খোকা, নারায়ণগঞ্জ-৫ একএম সেলিম ওসমান, সুনামগঞ্জ-৪ পীর ফজলুর রহমান মিজবাহ, সিলেট-২ ইয়াহইয়া চৌধুরী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ জিয়াউল হক মৃধা, ফেনী-৩ লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, লক্ষ্মীপুর-২ মো. নোমান, ২৮২ চট্টগ্রাম-৫ ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। এদিকে জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়া ২৯টি আসনের মধ্যে এখনো ২-৩টি আসনে মহাজোটের শরিক দলের প্রার্থী রয়েছেন।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১