 
                        আপডেট : ০৭ December ২০১৮
 
                                
                                         অরিত্রী চলে গেল। অপমান আর নকলের দায়ভার এড়াতে সে চিরতরে আত্মগোপন করল। অভিযোগ যত বড়ই হোক, হোক না লাঞ্ছনা আকাশসমান; তাই বলে আত্মহনন- সেটা কাম্য নয়। হোমওয়ার্ক, অ্যাসাইনমেন্ট, ক্লাসটেস্ট নিয়ে এত কড়াকড়ি-ধরাধরি; কিন্তু কিছু নামধারী দামি শিক্ষক যে দিনের পর দিন অনিয়ম করে চলেছেন, সেটার দায়ে তাদের তো একদিনের জন্যও আত্মগোপন করতে হয় না। যেসব শিক্ষক স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে কিংবা নামমাত্র হাজিরা দিয়ে প্রাইভেট-কোচিং, বাণিজ্যিক বিশ্ববিদ্যালয়, টিভির পর্দায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ে থাকেন, তাদের শোকজ/ কারণ দর্শানোর জন্য নোটিশ পাঠাতে দেখি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় মাসের একটি সেমিস্টারে যারা এক-দেড় ঘণ্টার ১৬টি ক্লাসে উপস্থিত থাকেন না, অথচ টক শোতে, টিভিতে গালগল্প উপস্থাপনায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা পড়ে থাকেন, তাদের কেন টিসি দিয়ে চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে না? ওইসব নামিদামি খেপমারা শিক্ষকদের হয় টিসি দিয়ে চাকরিচ্যুত করা হোক, নয়তো তাদের কাছ থেকে দায়িত্ব বুঝে নিন। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক ফুলটাইম চাকরি করার পাশাপাশি অন্যান্য লাভজনক প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ পেতে পারেন কি? পারলেও তিনি কি নৈতিক দায় এড়াতে পারেন? শিক্ষকতা পেশার মতো মহান দায়িত্বে ফাঁকি দিলেও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে তারা বেশ নিয়মানুবর্তিতা মেনে চলতে বাধ্য হন। উচ্চমার্গের শিক্ষকদের কাছ থেকে এ ধরনের স্বার্থান্বেষী কর্মতৎপরতা দুঃখজনক বৈকি! অর্থ ও খ্যাতির মোহে শিক্ষকরা দায়িত্বে ফাঁকি দিলে শিক্ষার্থী কী শিখবে। যে নৈতিক আদর্শগুণে শিক্ষকতা মহান পেশা, সেটাকে প্রশ্নবিদ্ধ ও কলুষিত করা উচিত নয়। তা না হলে, বিশেষত উচ্চশিক্ষার মান ধসে পড়তে বাধ্য। ক্লাসে নামমাত্র হাজিরা দিয়ে শিক্ষকরা যদি টিভি স্টেশন, কোচিংয়ের মতো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পড়ে থাকেন, তারা গবেষণা-পড়াশোনা করবেন কখন? বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মানসম্মত গবেষণা দিন দিন কমে যাচ্ছে- সেটা কীভাবে অস্বীকার করবেন? এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন যে খুব তৎপর, সেটাও বলা যায় না। বরং তাদের উদাসীনতাই চোখে পড়ে। প্রতিবছরই শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি ওঠে। এ দাবি অমূলক নয়। শিক্ষা খাতে অবশ্যই বরাদ্দ বাড়াতে হবে। তবে বরাদ্দ করা অর্থের ন্যায়সঙ্গত ব্যবহার নিশ্চিত করাটাও জরুরি। তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে শিক্ষকদের ক্লাসমুখী করা। ক্লাসে ছাত্রদের ধরে রাখার জন্য নম্বর বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ক্লাসে নিয়মিত না হলে পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হয় না; কিংবা পরীক্ষায় বসতে হলে জরিমানা গুনতে হয়। অথচ ক্লাসে অনিয়মিত শিক্ষকদের জরিমানা করার নজির নেই। তিরস্কার তো দূরের কথা। সম্মানিত শিক্ষকদের তিরস্কার করা হোক, সেটাও কাম্য হতে পারে না। তবে দায়িত্বে উদাসীন যেসব শিক্ষক ক্লাস ফাঁকি দিয়ে কোচিংয়ে, টিভির পর্দায় পড়ে থাকেন; তাদেরকে ক্লাসে ফেরানোর জন্য প্রয়োজনে নতুন করে আইন তৈরি করা যেতে পারে। নৈতিকতার বালাই যার মধ্যে নেই, তাকে বশে আনতে উপযুক্ত আইন প্রণয়ন করাটাই যথেষ্ট বৈকি!  গত কয়েক মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন মেধাবী শিক্ষার্থী হতাশা থেকে আত্মহত্যা করেছেন বলে খবর বেরিয়েছে। তাদের হতাশার কারণ অনুসন্ধান করুন। একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কীভাবে টিভি চ্যানেলগুলোতে ফুলটাইম-হাফটাইম খেপ মারেন? শিক্ষকদের মধ্যে নৈতিকতার বালাই না থাকলে ক্লাসে নকলের অভিযোগে এত বড় তিরস্কার কেন?   লেখক : সাংবাদিক
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১