আপডেট : ০৩ December ২০১৮
বিএনপির মনোনীত জাতীয় সংসদের যশোর-২ আসনের প্রার্থী সাবিরা সুলতানার দণ্ড স্থগিত করে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ স্থগিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এ আদেশে অন্য দণ্ডিতরাও নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। সাবিরা সুলতানার সাজা ও দণ্ড নিয়ে হাইকোর্টের দেওয়া আদেশ গতকাল রোববার স্থগিত করলেন আপিল বিভাগ। বেলা ১১টা ৩৭ মিনিটে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চ আদেশে বলেন, ‘স্থগিতাদেশ চলমান’ থাকবে। আদালতে সাবিরা সুলতানার পক্ষে শুনানিতে ছিলেন এ জে মোহাম্মদ আলী ও আমিনুল ইসলাম। সরকার পক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তার সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। দুদকের পক্ষে খুরশিদ আলম খান ও এবিএম বায়েজিদ। আদেশের পর সাবিরা সুলতানার আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেছেন, ‘আপিল বিভাগ স্থগিতাদেশ চলমান রেখেছেন। আমরা আদালতে বলেছি হাইকোর্টের এখতিয়ার আছে দণ্ড ও সাজা স্থগিত করার। বাংলাদেশ ও ভারতের কয়েকটি নজির দেখানো হয়েছে। আমরা বলেছি দণ্ড স্থগিত করে সরকারের অনেকে মন্ত্রী ও এমপি পদে ছিলেন। এখন যাদের দণ্ড রয়েছে তাদের মনোনয়ন বাতিল করা অন্যায় হবে।’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘সরকার আদালতকে ব্যবহার করে রাজনৈতিক সুবিধা নিচ্ছে। গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সরকারের উচিত এ ধরনের অপকৌশল থেকে সরে আসা।’ আদেশের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যারা নির্বাচন করবেন, রাজনীতি করবেন, তারা নিজেদের সততা বজায় রাখবেন। জনপ্রতিনিধিরা যেন মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত না হন, এই আদেশে এমন একটি বার্তা যাবে।’ সাবিরা সুলতানা বিএনপি সমর্থিত যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান। যশোর-২ আসন থেকে তিনি বিএনপি মনোনীত প্রার্থী। দুর্নীতির মামলায় দণ্ডে তার একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় গত বৃহস্পতিবার তিনি আবেদন করেন হাইকোর্টে। শুনানি শেষে বিচারপতি মো. রইস উদ্দিনের একক বেঞ্চ তার ওই দণ্ড স্থগিত করেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২৬ (১) ধারা এবং সংবিধানের ৬৬ (২) (ঘ) অনুচ্ছেদ অনুসারে সাবিরা সুলতানার সাজা ও দণ্ড স্থগিত করেন আদালত। আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছেন, কোনো ব্যক্তির দণ্ড আপিল বিভাগে চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তার সাজা বা দণ্ড চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে না। আপিল চলাকালে তার সাজা বা দণ্ড স্থগিত হলে তিনি নির্বাচনের জন্য অযোগ্য হবেন না। আগের দিন বুধবার বিচারিক আদালতে কোনো ব্যক্তি দুই বছরের বেশি সাজাপ্রাপ্ত হলে তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না বলে হাইকোর্টের অন্য একটি দ্বৈত বেঞ্চের দেওয়া আদেশের বিরুদ্ধে করা আবেদনে ‘নো অর্ডার’ আদেশ দেন আপিল বিভাগ। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান সাবিরা সুলতানাকে গত ১২ জুলাই ঢাকার বিশেষ আদালত দুর্নীতি দমন আইন ২০০৪ সালের ২৬ (২) ধারায় তিন বছর ও ২৭ (১) ধারায় তিন বছর কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে দুটি ধারায় পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড ও অনাদায়ে আরো তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। সাবিরা সুলতানার ১ কোটি ৭৮ হাজার ১৩৫ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াফত করারও আদেশ দেওয়া হয়। গত ১৭ জুলাই ঢাকার বিশেষ জজ আদালত ৭-এ আত্মসমর্পণ করে আপিলের শর্তে জামিনের আবেদন করেন তিনি। আদালত শুনানি শেষে জামিনের আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠান। গত ৬ আগস্ট তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান। পরে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে সাবিরা সুলতানা সাজা ও দণ্ড স্থগিত চেয়ে আবেদন করলে শুনানি গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। এরপর নিয়ম অনুসারে মামলাটি প্রধান বিচারপতির কাছে গেলে বিচারপতি মো. রইস উদ্দিনের একক হাইকোর্ট বেঞ্চে এটি শুনানির জন্য পাঠান। এর ধারাবাহিকতায় শুনানি শেষে দণ্ড স্থগিত করা হয় সাবিরা সুলতানার। সাবিরা সুলতানা ২০০৯ সালের ২৪ মে ৫৫ লাখ ৭৮ হাজার ১৩৫ টাকা সম্পদের হিসাব জমা দেন দুদকে। পরে দুককের অনুসন্ধানে দেখা যায় ৪৫ লাখ টাকার সম্পদের বিষয়ে ভিত্তিহীন ও মিথ্যা তথ্য দেওয়াসহ ১ কোটি ৭৮ হাজার ১৩৫ টাকার সম্পত্তি বৈধ আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ। পরে ২০১০ সালের ২০ জুলাই দুদকের উপ-পরিচালক সৈয়দ আহমেদ বাদী হয়ে ধানমন্ডি থানায় মামলা দায়ের করেন। একই বছর ২৫ জুলাই অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ২০১১ সালের ৯ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১