আপডেট : ০৩ December ২০১৮
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের চিঠি পাওয়া একজন প্রার্থী ছাড়া বাকি সবার মনোনয়নপত্র বৈধ বলে গতকাল রোববার জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কুড়িগ্রাম-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও সাবেক সংসদ সদস্য জাকির হোসেনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয় ‘অসম্পূর্ণ ও তথ্যের ঘাটতি’ থাকায়। তবে দলটির নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোট ও মহাজোটের শরিক রাজনৈতিক দলগুলোর বেশ কয়েকজনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। শরিক দলের শীর্ষ নেতার মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় সেসব আসনে জোটের প্রার্থী নিয়ে দুশ্চিন্তা কিছুটা বেড়েছে। তবে দলটি ‘স্বস্তি’ পাচ্ছে, দলের ‘বিদ্রোহী প্রার্থীদের’ মনোনয়ন নানা কারণে বাতিল হওয়ায়। ভোটের মাঠ থেকে সেসব প্রার্থীকে সরানোর ঝামেলায় দলকে আর যেতে হলো না। তবে দলের যেসব ‘স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী প্রার্থী’র মনোনয়ন বৈধ, দলের শীর্ষ নেতাদের কপালে তারা ভাঁজ ফেলছেন। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মহাজোটের প্রার্থীদের ছাড় দিয়ে যেসব সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগ এবার প্রার্থী দেয়নি, সেগুলোয় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীর বেশ কয়েকজনের মনোনয়ন বৈধ হয়েছে। ১৪ দলের শরিকদের জন্য ছেড়ে দেওয়া ১৩টি আসনের মধ্যে কয়েকটিতে আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়নি। সেসব আসনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করাতে দলকে বেগ পেতে হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের সূত্র জানায়, আসন্ন সংসদ নির্বাচনে দলের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন স্বতন্ত্র হিসেবে থাকা বিদ্রোহী প্রার্থীরা। মনোনয়নপত্র বাতিল হলেও আপিল করার সুযোগ আছে প্রার্থীদের। গতকালই অনেকে আপিলের ঘোষণা দেন। তাদের মধ্যে কেউ জয়ী হলে দলের জয়ে তারা ‘কাঁটা’ হয়ে দাঁড়াতে পারেন বলে শঙ্কা করছেন নীতিনির্ধারকরা। মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া প্রার্থীরা আগামী ৩, ৪ ও ৫ ডিসেম্বর ইসিতে আপিল করতে পারবেন। আপিলের ওপর শুনানি হবে ৬, ৭ ও ৮ ডিসেম্বর। বিশ্লেষণে এমনও দেখা গেছে, কয়েকটি আসনে মহাজোটের প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল, তবে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ। পটুয়াখালী-১ থেকে মহাজোটের বড় শরিক জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদারের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহজাহান মিয়া টিকে আছেন। ঢাকা-১৭ থেকে মনোনয়ন বাতিল হয়েছে ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আকবর হোসেন পাঠানের মনোনয়ন স্থগিত হলেও কাদের খানের মনোনয়নপত্র বৈধ। নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল কায়সার ও তার কাকা মোশারফ হোসেন। প্রয়োজনীয় তথ্য না দেওয়ায় আবদুল্লাহ কায়সারের মনোনয়ন স্থগিত করা হয়। দলীয় মনোনয়ন না থাকায় খাগড়াছড়িতে আওয়ামী লীগের দুই বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য যতীন্দ্র লাল ত্রিপুরা ও খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সমীর দত্ত চাকমার মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। রংপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী আসাদুজ্জামান বাবলুর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদ থেকে দেওয়া পদত্যাগপত্র জমা দিলেও গেজেট প্রকাশিত না হওয়ায় তার মনোনয়ন বাতিল করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও যুবলীগ নেতা মাহবুব আলম, সাতক্ষীরা-১ আসনে দলীয় মনোনয়ন না থাকায় বিএম নজরুল ইসলাম ও জনতা ব্যাংকের ঋণখেলাপি হওয়ায় বিশ্বজিৎ সাধু, হবিগঞ্জ-১ আসনে কেয়া চৌধুরী ও যশোর-৩ আসনে শাহীন চাকলাদারের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবিমুখ হয়ে স্বতন্ত্রপ্রার্থী আনিছুর রহমান, সৈয়দ তানভীর হোসেন, শাহজাহান আলম সাজু, সফিউল্লাহ, আশরাফ উদ্দিনের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে তাদের দাখিল করা এক শতাংশ ভোটারের সমর্থনসূচক স্বাক্ষরযুক্ত তালিকায় ত্রুটির কারণে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনে দলীয় মনোনয়নের সুপারিশপত্র না থাকায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মমিনুল হক সাঈদের মনোনয়নপত্রও বাতিল। মেহেরপুর-১ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মিয়াজান আলী, সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আবদুল মান্নান, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি ইয়ারুল ইসলাম ও কেন্দ্রীয় শ্রমিককল্যাণ লীগের সহ-সভাপতি হাবিবুর রহমানের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। মেহেরপুর-২ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এমএ খালেক, আওয়ামী লীগ নেতা আহমেদ আলী, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোখলেসুর রহমান মুকুল, জেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক নূরজাহান বেগম, জেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াসিম সাজ্জাদ লিখনের মনোনয়নও বাতিল। কুমিলল্লা-২ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল মজিদ, কুমিল্লা-৩ আসনে কুমিল্লা উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম সরকার, উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সদস্য সচিব আহসানুল আলম সরকার কিশোর, কুমিল্লা-৪ আসনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থী আবুল কালাম আজাদেরও মনোনয়ন বাতিল হয়েছে। লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য লায়ন এমএ আওয়ালের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক অঞ্জন চন্দ্র পাল। তিনি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক তরিকত ফেডারেশনের প্রার্থী ও ওই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। কুমিল্লা-১১ আসনে জাকের পার্টির প্রার্থী তাজুল ইসলাম বাবুলের মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে। নাটোর-৪ আসনে মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষর না থাকার কারণে ১৪ দলের শরিক জাসদের (ইনু) রনি পারভেজ আলমের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। কুমিল্লা-২ আসনে জাসদ প্রার্থী বড়ুয়া মনোজিৎ ধীমান ও মনোনয়নপত্রে স্বাক্ষর না থাকায় নাটোর-১ আসনে সাম্যবাদী দলের বীরেন্দ্রনাথ সাহা, নরসিংদী ২-আসনে হলফনামা না থাকায় জাসদের প্রার্থী জায়েদুল কবিরের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। বিকল্পধারার মহাসচিব মেজর অবসরপ্রাপ্ত আবদুল মান্নানের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে লক্ষ্মীপুর-৪ আসন থেকে।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১