আপডেট : ২৯ November ২০১৮
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে বেশ কিছু মনোনয়নপ্রত্যাশীর কাছ থেকে অর্থ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদারের বিরুদ্ধে। টাকা দিয়ে মনোনয়ন না পাওয়ায় ওই মনোনয়নপ্রত্যাশীদের মধ্যে হতাশা ও তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। টাকা ফেরত দেওয়ার দাবিতে দলের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে বিক্ষোভও করেন তারা। তবে এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, একটি কুচক্রী মহল হীন উদ্দেশ্যে জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে মনোনয়ন বাণিজ্যের অপপ্রচার চালাচ্ছে। চক্রটি ভাড়া করা মানুষ দিয়ে পার্টির নেতাদের বিরুদ্ধে বিষোদগার করছে। গতকাল বুধবার ১১১ আসনে প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করেছে জাতীয় পার্টি। দলের মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার স্বাক্ষরিত এ তালিকা প্রকাশ করা হয়। আগামী ৯ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের সময় মহাজোটের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করা হবে। তবে এর আগে জাপা মহাসচিব বলেছিলেন, আমরা ২২০ জনকে জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে মনোনয়নের চিঠি দিয়েছি। গতকাল প্রকাশিত ১১১ জনের তালিকায় থাকা কয়েকজনও মনোনয়ন পেতে অর্থ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন সাংবাদিকদের। নীলফামারী-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য শওকত চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, তার কাছ থেকে পার্টির চেয়ারম্যান ও মহাসচিব মোটা অঙ্কের ‘চাঁদা’ নিয়েছেন। চেয়ারম্যানকে ৬০ লাখ টাকা দেওয়ার পরও মনোনয়ন নিয়ে টালবাহানা করা হচ্ছে। এরশাদের বনানী কার্যালয়ের সামনে দাঁড়িয়ে তিনি হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আমার টাকা ফেরত দিয়ে স্যারকে (এরশাদ) এবং হাওলাদারকে সৈয়দপুর যেতে বলবেন। না হলে পুলিশও তাদের রক্ষা করতে পারবে না, বলে গেলাম।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমি তাকে দেখে নেব। তাকে ৬০ লাখ টাকা দিয়েছি। যখন যা চেয়েছেন সব দিয়েছি, কোন অনুষ্ঠানে টাকা দিইনি? যখন সৈয়দপুর গেছেন ওনার জন্য কী করিনি? আমার টাকা ফেরত দিতে বলিয়েন।’ পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এরশাদ সাহেব একবার বলছেন এককভাবে নির্বাচন করব, আরেকবার বলছেন মহাজোটে যাব। এভাবে দল হয়? দলটাকে নষ্ট করে ফেলেছেন তিনি। দলটাকে কক্ষচ্যুত করেছেন তিনি নিজেই। জাতীয় পার্টির ১১১ জন প্রার্থীর তালিকায় নীলফামারী-৪ আসনে শওকত চৌধুরীর পাশাপাশি আদেলুর আদেলের নাম দেখা যায়। আদেলুরের নাম দেখে আরো ক্ষুব্ধ হন শওকত চৌধুরী। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী জামাল রানা বলেন, মনোনয়ন দিতে মহাসচিব ১ কোটি টাকা চেয়েছেন। দিতে পারিনি, তাই মনোনয়ন দেননি। তিনি আরো বলেন, এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার এবারের নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়ার নামে কোটি কোটি টাকা বাণিজ্য করেছেন। সবার আগে নিজের এবং স্ত্রী নাসরিন জাহান রত্নার মনোনয়ন নিশ্চিত করেছেন। এরপর যারা টাকা দিয়েছেন তাদের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। যারা টাকা দেননি তারা জনপ্রিয় হলেও মনোনয়ন পাননি। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী কাজী মামুনুর রশীদ বলেন, আমাদের যদি মনোনয়ন দেওয়া নাই-ই হবে, তাহলে কেন এত টাকা নিল। এত টাকাইবা খরচ করানো হলো কেন। তিনি এ সময় টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি জানান। জয়পুরহাট-২ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী জাতীয় ছাত্রসমাজের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম রিপন বলেন, আমি নির্বাচনের জন্য প্রায় কোটি টাকার মতো খরচ করেছি। মনোনয়ন যদি না-ই দেওয়া হবে তাহলে এভাবে আমার ক্ষতি করার মানে কী? একই অভিযোগ করেন সিরাজগঞ্জ-৩ আসনের শেখ শরিফুল ইসলামও। মনোনয়নের জন্য টাকা লেনদেনের অভিযোগ তুলে গাজীপুর-৫ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী গাজীপুর মহানগর সহ-সভাপতি গাজী ওবায়দুল কবির মজনু বলেন, মনোনয়ন ফরমের দাম ২০ হাজার টাকার পরিবর্তে ২২ হাজার টাকা নিয়েছে। আবার দুই হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে ১ কোটি টাকা চেয়ে অনেকের কাছে মনোনয়ন বিক্রি করছে। তাহলে তার (এরশাদ) মতো নেতার কাছে আমি কেন আসব? ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে এবার মনোনয়ন দেওয়া হয় অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূইয়াকে। তিনি পার্টির চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা। অথচ তার শ্বশুর অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক মৃধা এ আসন থেকে জাতীয় পার্টির হয়ে পর পর দুইবার এমপি নির্বাচিত হন। জিয়াউলের অভিযোগ, তাকে বঞ্চিত করে টাকার বিনিময়ে তার জামাতা রেজাউলকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এর প্রতিবাদে জিয়াউল হকের সমর্থকরা গত মঙ্গলবার ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী কাজী মামুনুর রশীদ এবং জয়পুরহাট-২ আসনের আবুল কাশেম রিপনও ‘মনোনয়নবাণিজ্যের’ অভিযোগ করেন। তবে পরে মহাসচিবের সংবাদ সম্মেলনে যে প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করা হয়, সেখানে তাদের নাম দেখা যায়। মনোনয়নবাণিজ্যের অভিযোগ তুলে বেশ কয়েকজন দল ছেড়েছেন। এর মধ্যে ফেনী জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি ও পার্টি চেয়ারম্যানের যুববিষয়ক উপদেষ্টা রিন্টু আনোয়ার ইতোমধ্যে দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। লালমনিরহাট-২ আসন থেকে মনোনয়ন না পাওয়ায় মঙ্গলবার বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণবিষয়ক যুগ্ম সম্পাদক ও লালমনিরহাট জেলা শাখার সদস্য সচিব রোকনউদ্দিন বাবুল। এদিকে গতকাল বুধবার দলের চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এক অনির্ধারিত সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, একটি কুচক্রী মহল হীন উদ্দেশ্যে জাতীয় পার্টির বিরুদ্ধে মনোনয়নবাণিজ্যের অপপ্রচার চালাচ্ছে। এর সঙ্গে সত্যের কোনো সম্পর্ক নেই, অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। জাপা একটি বড় দল, সবাইকে মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব নয়। আবার মহাজোটের কথা বিবেচনায় রেখেও ছাড় দিতে হচ্ছে। তাই অনেকেই মনোনয়ন না পেয়ে ক্ষোভে অসত্য এবং বানোয়াট অভিযোগ তুলছেন। দলের নেতারাই এমন অভিযোগ করছেন জানানো হলে হাওলাদার পাল্টা তাদের বিরুদ্ধেই একই ধরনের অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, পয়সা খেয়ে, কোনো জায়গা থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে এটা করতে পারে। এটা কোনো একটি স্থান থেকে এসেছে, আমাকে ও দলকে হেয় প্রতিপন্ন করতে। কোনো একটি লোক এটা করাচ্ছে।’
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১