বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২০ November ২০১৮

সিডরে ভেসে যাওয়া শহিদুল ফিরলেন ১১ বছর পর

সিডরে ভেসে যাওয়া শহিদুল ছবি : বাংলাদেশের খবর


আকাশের অবস্থা কিছুটা খারাপ হলেও অশুভ চিন্তা আসেনি মাথায়। অন্যান্য দিনের মতোই সেদিনও ভগ্নিপতি পান্না ফরাজীর নৌকা নিয়ে সাগরে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন শহিদুল। সঙ্গে ছিলেন মাসুম ছিদ্দিক ও সেলিম নামের আরো দুইজন। আরেকটি নৌকায় ছিলেন শহিদুলের বাবা ফুলমিয়া মোল্লা। পরিবারের সদস্যদের কথাও দিয়েছিলেন তারা, মাছ ধরা শেষ হলেই বাড়ি ফিরে আসবেন। সেই কথা আর রাখা হয়নি তাদের। ২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর রাতের ভয়াল ঘূর্ণিঝড় সিডরে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস তাদের ভাসিয়ে নিয়ে যায়। সে সময় নিখোঁজ আরো শত শত জেলের সঙ্গে তাদের নামও ওঠে সরকারি খাতায়। এদের মধ্যে একজন শহিদুল। পরিবারের সদস্যরাও আশা-নিরাশায় বুক বেঁধে একসময় হতাশ হয়েছেন। ছেড়ে দিয়েছিলেন তাদের পাওয়ার আশা। অপেক্ষার প্রহর গুনে গুনে ক্লান্ত শহিদুলের স্ত্রীও ঘর বাঁধেন অন্যজনের সঙ্গে। তবে সকলকে চমকে দিয়ে নিজ পরিবারের ফিরে এসেছেন সেই শহিদুল।

শহিদুলের বাড়ি বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলার খোন্তাকাটা ইউনিয়নের দক্ষিণ আমড়াগাছিয়া গ্রামে। তবে আপাতত তিনি রয়েছেন উপজেলার রায়েন্দা বাজারে ভগ্নিপতি পান্না ফরাজীর বাড়িতে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, শহিদুলকে পেয়ে পরিবারের সকলেই উচ্ছ্বসিত। দীর্ঘদিন পর প্রিয়জনকে কাছে পেয়ে আবেগে আত্মহারা। তবে শহিদুল অনেকটা নির্বিকার। অনেকটা মানসিক ভারসাম্যহীন। কথাবার্তায় এলোমেলো ভাব। সবকিছু ভুলে যাচ্ছেন একটু পরপর।

সিডর কী তা স্মরণে নেই শহিদুলের। সিডরে কোথায় ছিলেন, কী ঘটেছিল তাও বলতে পারছেন না। তার অসংলগ্ন কথায় যা জানা যায়, ভারতের পাটগ্রাম নামক এলাকায় রশিদ খানের বাড়িতে থাকতের তিনি। সেখানে গরু রাখা আর বাড়ির কাজ করতেন। এরপর সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। সীমান্তে তাকে কেউ আটকায়নি। এসবও তার ভারসাম্যহীন মনের কথা। তবে সঠিক করে বলতে পারছেন শুধু নিজের নামটাই।

শহিদুলের ফেরা সম্পর্কে তার বড় বোন মঞ্জু বেগম জানান, স্থানীয় আমড়াগাছিয়া বাজারে শহিদুল নামে এক পাগল ঘোরাফেরা করছে এমন খবর পেয়ে গত ১২ নভেম্বর বাজারে ছুটে যান তিনি। গিয়ে দেখেন বাসস্ট্যান্ড যাত্রীছাউনিতে ঘুমিয়ে আছে শহিদুল। তার কপালের বাম পাশে কাটা দাগ, হাতের আঙুলে বড়শি ঢুকে যে ক্ষত হয়েছিল সেগুলো দেখেই ভাইকে শনাক্ত করেন মঞ্জু। সেখান থেকে উদ্ধার করে বাড়িতে এনে পাগলবেশে থাকা লম্বা চুল, দাড়ি কেটে সিডরে হারিয়ে যাওয়া শহিদুলকে আবিষ্কার করেন।

শহিদুলের ভগ্নিপতি পান্না ফরাজী জানান, শহিদুলের দুই মেয়ে এবং দুই ছেলে। বড় মেয়ে পুতুল (২০) এবং মুকুলের (১৮) বিয়ে দিয়েছেন তারা। ছেলে মাসুম (১৭) মাদরাসায় হাফেজি পড়ছে। ছোট ছেলে মাসুদ (১১) সিডরের সময় তার মায়ের গর্ভে ছিল। সিডরে স্বামী শহিদুলকে হারিয়ে কষ্টে দিন চলছিল মাসুমা বেগমের। দীর্ঘদিনেও স্বামীর সন্ধান না পাওয়ায় গত কয়েক বছর আগে মাসুমা নতুন করে সংসার পেতেছেন। বর্তমানে তিনি কাজের সন্ধানে ভারতের বেঙ্গালুরু শহরে অবস্থান করছেন।

পান্না ফরাজী জানান, শহিদুলের ফিরে আসার খবর মাসুমাকে জানানো হয়েছে। তিনি উচ্ছ্বসিত এবং আনন্দিত। মাসুমা শিগগিরই শরণখোলায় ফিরে আসার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।

খোন্তাকাটা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন খান মহিউদ্দিন জানান, সিডরের রাতে শহিদুল এবং তার বাবাসহ আরো বেশ কয়েকজন নিখোঁজ হয়। শহিদুলকে ১১ বছর পর পাওয়া গেলেও অন্যদের খোঁজ আজো মেলেনি।

শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিংকন বিশ্বাস বলেন, সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে সিডরে জলোচ্ছ্বাসে নিখোঁজের তালিকায় শহিদুল মোল্লার নাম রয়েছে। ১১ বছর পর শহিদুল বাড়িতে ফিরে আসা আনন্দের সংবাদ। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে খোঁজখবর নিয়ে তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

২০০৭ সালের ১৫ নভেম্বর রাতে স্মরণকালের ভয়াবহ সিডরের আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে যায় বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী ও ঝালকাঠি জেলার বিভিন্ন গ্রাম। সিডরে জলোচ্ছ্বাসে এক এলাকার মানুষকে ভাসিয়ে নিয়ে যায় অন্য এলাকায়। দিনের পর দিন নদী-খালে গবাদিপশুর সঙ্গে মানুষের মৃতদেহ ভাসতে দেখা যায়। সিডরে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলা। প্রায় ৭০০ জনের বেশি নিহত হয়। নিখোঁজ হয় আরো অনেকে। সেই নিখোঁজদের একজন শহিদুল ফিরলেন দীর্ঘ ১১ বছর পর।

 


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১