বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ১৯ November ২০১৮

শিক্ষার্থীদের ভাবনায় নির্বাচন

যেমন সরকার দেখতে চাই


বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোকে বলা হয় ছাত্ররাজনীতির আঁতুড়ঘর। বর্তমানে দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলো নির্বাচনী আলোচনায় সরগরম হয়ে উঠেছে। প্রতিটি ক্যাম্পাসে বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে আলোচনা, ক্লাসের ফাঁকে আড্ডা, এমনকি খাবারের টেবিলে আলোচনার প্রধান বিষয় আগামী নির্বাচন। নিজের ভোট কাকে দেবে, তা নিয়ে ইতোমধ্যে বিশ্লেষণ শুরু করেছে বেশিরভাগ শিক্ষার্থী। আগামী সরকার মনের মতো হবে তো! শিক্ষার্থীদের মধ্যে উঁকি দিচ্ছে এমন নানা প্রশ্ন। নির্বাচন নিয়ে শিক্ষার্থীদের মনের ভাবনা কী? বিস্তারিত জানাচ্ছেন মো. শফিকুল ইসলাম-

সাদমান সাকিব

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সাদমান সাকিব। তিনি বলেন, আমার প্রত্যাশা তারুণ্যনির্ভর সরকার। যারা সমাজের তরুণদের কথা ভাববে এবং তাদের জন্য কাজ করবে। দেশের শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ বেকার। তাই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও তরুণ উদ্যোক্তাদের বিশেষ সুবিধা দিতে হবে সরকারকে। এমপি বা মন্ত্রী হওয়ার পর যাদের ভোটে নির্বাচিত হলেন তাদের ভুলে গেলে চলবে না। সবসময় জনগণের সেবা করবেন- এমন মন্ত্রী-এমপি চাই। বাংলাদেশের উন্নতি বেশি হচ্ছে শহরকেন্দ্রিক। গ্রামের দিকে উন্নয়নের ধারা তুলনামূলক কম। তাই আগামীতে দেশে গ্রামীণ উন্নয়নের জন্য আরো বেশি প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নের জন্য বিশেষ নজর দিতে হবে সরকারকে।

রায়হান ইসলাম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী রায়হান ইসলাম। তিনি বলেন, উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে দেখতে চাই ভবিষ্যতে। জনগণের ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসবে নতুন সরকার। তাদের কাছে প্রত্যাশা থাকবে, যে দলই ক্ষমতায় আসবে বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা যেন অব্যাহত থাকে। বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাসে দেখা যায়, বিএনপি ক্ষমতায় এলে আওয়ামী লীগের চলমান কাজগুলো বন্ধ করে দেয়। আবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে একই কাজ করে। কিন্তু এই ধারা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। বর্তমান সরকারের চলমান প্রকল্পগুলো কোনো কারণে স্থগিত করা যাবে না। দেশকে আরো সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আগামী দিনের সরকারের কাছে দাবি- চাকরিতে ৩৫ বা ৪০ শতাংশ কোটা চাই না। কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন দেখতে চাই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতর দিয়ে চলমান মেট্রোরেল প্রকল্প বাতিল করতে হবে।

অনুপম কুমার দাস

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী অনুপম কুমার দাস আগামীতে দেখতে চান তারুণ্যনির্ভর সরকার। তিনি বলেন, আমাদের দেশে ভোটের পরের একটি চিত্র হলো সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন। অতীতে দেখা গেছে, ভোটের মাধ্যমে যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারা কোনো না কোনোভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন করেছে। এমন একটা সরকার প্রত্যাশা করি যাদের হাতে সংখ্যালঘুরা নিরাপদ থাকবে। শান্তিতে বসবাস করবে। সংখ্যালঘুদের বসতবাড়িতে হামলা হবে না। জুলুম নির্যাতন করা হবে না। তিনি আরো বলেন, দেশের তরুণ সমাজ আজ মাদকের মধ্যে ডুবে গেছে। মাদকের বিরুদ্ধে সশস্ত্র বাহিনীর অভিযান প্রশংসীয়। কিন্তু ভবিষ্যতে মাদকমুক্ত বাংলাদেশ দেখতে চাই। মাদকের ছোবল থেকে দেশের তরুণ সমাজকে রক্ষা করার দায়িত্ব নিতে হবে আগামীর সরকারকে।

অনিশেষ রায়

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নৌযান ও নৌযন্ত্র কৌশল বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী অনিশেষ রায় উন্নয়নবান্ধব সরকার দেখতে চান আগামীতে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জন্য ২০২১ সাল ও ২০৪১ সাল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে ডেমোক্র্যাসির উন্নয়নের চাকা আরো সচল করতে হবে। অনেক প্রকল্প রয়েছে যা বাস্তবায়ন হলে দেশ আরো এগিয়ে যাবে। অতিরিক্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন না দিয়ে বরং কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। ট্রেনিংভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকে। রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে নতুন নতুন আইডিয়া বা প্ল্যান বের করতে হবে। রাজস্ব আদায়ের মধ্যে দিয়ে দেশকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করতে হবে। যাতে ভবিষ্যতে সাহায্যের জন্য বিদেশি রাষ্ট্রগুলোর কাছে হাত পাততে না হয়। প্রতিটি সেক্টর থেকে দুর্নীতি কমাতে হবে। দায়বদ্ধতা ও স্বচ্ছতা আনতে হবে। দুদককে আরো বেশি কার্যকর করে তুলতে হবে।

আজিজুল ইসলাম

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী আজিজুল ইসলাম। তিনি বলেন, সুন্দর একটি দেশ চাই। সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে মতের অমিল থাকবে স্বাভাবিক। তারপরও সবাই মিলে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মতো আরো বেশি ডিজিটাল বাংলাদেশ দেখতে চাই। যেখানে ইন্টারনেটের গতি হবে খুবই দ্রুত। শিক্ষাব্যবস্থা সময় উপযোগী এবং পুনর্গঠন করতে হবে। কারণ দশটি বিষয়ে সৃজনশীল হতে পারে না। আগামী দিনের সরকারের কাছে একটি প্রধান দাবি হলো পুলিশের হয়রানি বন্ধ করতে হবে। পণ্য ও দ্রব্যাদির ওপর থেকে ট্যাক্স কমাতে হবে। সোস্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারী জনগণের কথা ভেবে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের কিছু কিছু ধারা সংশোধন করতে হবে।

সাদিয়া রহমান

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাদিয়া রহমান। তিনি বলেন, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল সরকার দেখতে চাই। কথায় কথায় আইন পাস নয়। কারণ বেশি আইন পাস করলে তখন আইনের প্রয়োগ কমে যায়। মানুষ আইনের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে। বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে। এই স্বাধীনতাকে টিকিয়ে রাখা এবং নিরাপত্তা দেওয়া প্রয়োজন। আইনের শাসন ছাড়া স্বাধীনতা বেঁচে থাকতে পারে না। তাই আইনের অধীনে হতে হবে সরকারকে। নতুন সরকারের কাছে দাবি- দেশের বিচার বিভাগকে সম্পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে। আইনের কাজে সরকার দলের হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে। কে কোন দল করে তা বিবেচনা করা থেকে বিরত থাকতে হবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ছাড়া আইনের শাসন একটি স্বপ্ন হয়ে থাকবে। দেশে গণতন্ত্রের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

ফারিয়া কান্তা

ঢাকা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী ফারিয়া কান্তা। তিনি বলেন, এদেশে ভোট মানে তো দেশ শাসনের অধিকার পাওয়া। কিন্তু আমরা আগামী দিনে ভালো ও সুন্দর একটি সরকার দেখতে চাই। যে সরকার হবে তারুণ্যনির্ভর সরকার। দেশের তরুণ সমাজের দিকে বিশেষ নজর রাখবে। স্বাধীনভাবে দেশের মানুষ যাতে চলাচল করতে পারে, বিশেষ করে মেয়েদের নিরাপদ চলাচলের দায়িত্ব নিতে হবে নতুন সরকারকে। দেশের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগের মাধ্যম শেয়ার মার্কেট। এই শেয়ার মার্কেটকে সিন্ডিকেটমুক্ত করতে হবে। ঢাকা শহরের যানজট দূর করার জন্য নতুন আইডিয়া গ্রহণ করতে হবে। এবারের নির্বাচনে যারা বিজয়ী হয়ে আসবে তাদের কাছে আমার এই প্রত্যাশা।

শাহীন শাহ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী শাহীন শাহ। তিনি বলেন, ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন। শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সরকার। জনগণের ভোটের সরকার। ভোটের মাধ্যমে যে দল ক্ষমতায় আসবে তারা যেন দেশের গণতন্ত্রের ধারা অব্যাহত রাখে। শিক্ষার্থীরা যেন তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে। আগামী দিনের সরকারের কাছে দাবি, রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। বিশেষ করে মা ও বোনেরা যেন কোনো ধরনের হয়রানির শিকার না হয়। নিরাপদ সড়ক আইন বাস্তবায়ন করতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বড় সমস্যা হলো আবাসিক ব্যবস্থা। শিক্ষার্থীদের এই সমস্যা দূর করার জন্য নতুন সরকারকে যথাযর্থ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

আবু ইউসুফ খান

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবু ইউসুফ। তিনি জানান, আগামীতে অর্থনীতির উন্নয়নে সহায়ক সরকার চাই। দেশের উন্নয়ন হলো অর্থনৈতিকভাবে কতটা শক্তিশালী দেশ। দেশের বড় সমস্যা হলো অর্থনৈতিক সমস্যা। অবকাঠামো উন্নয়নের পাশাপাশি সরকারকে এমন পলিসি বা প্রকল্প গ্রহণ করতে হবে, যাতে দেশের বেকার সমস্যা হ্রাস পাবে। অর্থনীতিতে দেশ আরো সমৃদ্ধ হবে। আমাদের চারপাশে নানা ধরনের সামাজিক সমস্যা রয়েছে। যেমন দুর্নীতি। দেখা যাচ্ছে, সরকারের আমলারা কোনো না কোনোভাবে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছে। তাই দলমত নির্বিশেষে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান করতে হবে সরকারকে। বেকারত্ব কমানোর জন্য যথাযর্থ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

ইসমাইল হোসেন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইসমাইল হোসেন। তিনি বলেন, নতুন ভোটার আমি। প্রথমবারের মতো ভোট দেব। তাই সবার থেকে একটু বেশি প্রত্যাশা। পছন্দের দল ও প্রার্থীকে ভোট দিতে চাই। ছাত্রবান্ধব সরকার দেখতে চাই আগামীতে। যারা ছাত্রদের অধিকারের কথা বলবে, বাস্তবায়ন করবে ছাত্রদের দাবিগুলো। ছাত্রদের হাত ধরেই এগিয়ে যাবে দেশ। শিক্ষাঙ্গনকে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে। বিশেষ করে প্রশ্নফাঁস বন্ধ করার দায়িত্ব নিতে হবে সরকারকে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সংশোধন করতে হবে। কারণ সোশ্যাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকে শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সবাই। এর কল্যাণে অনেক বড় বড় দুর্নীতির খরব আমরা জানতে পারি। পাশাপাশি গণমাধ্যমকে আগামীতে আরো বেশি স্বাধীনতা দিতে হবে।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১