আপডেট : ১৫ November ২০১৮
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএ ও অধিভুক্ত রাজধানীর সাত কলেজ এবং বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা একইদিনে নির্ধারণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষ। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা পড়েছেন বিপাকে আর বেশি সমস্যায় পড়েছেন বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। কারণ এ বিশ্ববিদ্যালয় দুটিতে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ নেই। তাদের পছন্দের ভর্তির স্থান হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কোনো কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স না পেলে রাজধানীর বড় ও গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কলেজগুলোতে বিজ্ঞান বিষয়ে ভর্তি হবেন তারা। কিন্তু একই দিন ও একই সময়ে এসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা হওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছেন তারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে বিবিএ ২৭তম ব্যাচের (যার সেশন ২০১৮-২০১৯) ভর্তি পরীক্ষা ছিল ৯ নভেম্বর সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সরকারি সাতটি কলেজের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক সম্মান শ্রেণিতে বিজ্ঞান ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষাও একই দিন। কলেজগুলোর কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ১০ নভেম্বর, বাণিজ্য ইউনিটের ১৬ নভেম্বর এবং বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ৯ নভেম্বর। কলেজগুলোর কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটের অধীনে ১১ হাজার ৬৩০, বাণিজ্য ইউনিটের অধীনে ৫ হাজার ২৩০ এবং বিজ্ঞান ইউনিটের অধীনে ৬ হাজার ৫০০টি আসন রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত সরকারি এ সাতটি কলেজ হচ্ছে— ঢাকা কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, তিতুমীর কলেজ, বাঙলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ। অপরদিকে রাজধানীর আরেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএসসি ইন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে লেভেল-১এ ভর্তিচ্ছুদের ভর্তি পরীক্ষা ৯ নভেম্বর সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। গত মাসের শেষ সপ্তাহে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন দেশের উচ্চশিক্ষার ওপর একটি প্রতিবেদন পেশ করে। তাতে দেখা যায়, সরকারি-বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই প্রকৌশল ও প্রযুক্তি শিক্ষার দিকে ছাত্রছাত্রীদের আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি দেশের জন্য অত্যন্ত একটি ভালো দিক। তবে বিজ্ঞান শিক্ষার দিকে আগ্রহ কম বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। এমন প্রবণতা ভবিষ্যতে নতুন নতুন উদ্ভাবনের জন্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে। প্রতিবেদনে আরেকটি পর্যবেক্ষণ এসেছে যে, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান আগের বছরগুলোর মতোই নিম্নগামী। ২০১৬ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে উচ্চশিক্ষার প্রসার ঘটলেও মান নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রিধারীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ এবং তাদের গুণগত মান আশানুরূপ নয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজ থেকে পাস করা স্নাতকদের শিক্ষার মান কাঙ্ক্ষিত নয়। বর্তমানে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে কলেজগুলোতে ২৮ লাখ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে, আর কলেজ রয়েছে ২ হাজার ২৬৯টি। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়েও আসনসংখ্যা শূন্য থাকছে, যা ইউজিসির পর্যবেক্ষণে বেরিয়ে এসেছে। জাতীয় ও উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় বাদে দেশের অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আসনসংখ্যা ৮৮ হাজার ৬৩৭টি। এর মধ্যে প্রতিবছর শূন্য থাকে ৩ হাজার ২৫১টি। মূলত বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে সমন্বয়হীনতা এই আসন শূন্য থাকার একটি অন্যতম কারণ। একজন শিক্ষার্থী যখন দেখতে পাবেন কোথায় তিনি চান্স পেয়েছেন, তখন তিনি সেখানেই ভর্তি হয়ে যাবেন। কিন্তু সমন্বয়হীনতার ফলে যেটি হয়, একজন শিক্ষার্থী কোথায় চান্স পাবেন তা তিনি জানেন না। তাই তার পছন্দের জায়গায় না হলেও ভর্তি হয়ে থাকেন। পরে যখন তার পছন্দের প্রতিষ্ঠানে চান্স পান তখন আবার সেখানে ভর্তি হন। ফলে পূর্ববর্তী প্রতিষ্ঠানের সিটটি খালি থাকে। এভাবে জাতীয় অপচয় হয়। আর শিক্ষার্থীর পরিবারের যে আর্থিক ও সময়ের অপচয় ঘটে, তা নিয়ে আমাদের কোনো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এতটুকু চিন্তা বা মাথাব্যথা নেই। এসব বিবেচনা থেকেই সম্মিলিত ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে জাফর ইকবাল স্যারসহ আমরা অনেকেই বিভিন্ন যুক্তিতর্ক এবং বাস্তব অবস্থা ও অভিজ্ঞতা বর্ণনা করেও আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষকে বোঝাতে পারিনি যে, কেন ভর্তি পরীক্ষাগুলো সম্মিলিতভাবে হওয়া উচিত। কিন্তু ঢাকার মধ্যে এত কাছাকাছি থেকেও দুই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের কথা, দেশের ট্রাফিক জ্যামের কথা, শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা এবং সর্বোপরি নারী শিক্ষার্থীদের কথা চিন্তা করে ভর্তি পরীক্ষা নিতে পারল না। কেন এত সমন্বয়হীনতা? সমস্যাটি কোথায়? আমরা কি পেছনের কথা ভুলে যেতে পছন্দ করি? বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে যারা শিক্ষকতা করেন, তারা কি বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক বাস্তবতা জানেন না? উন্নয়নের জোয়ারে দেশ যতই ভেসে যাক, ঢাকার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যেতে তো আমাদের চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা লেগেই যায়। একথা কি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অজানা! আমরা জানি অনেক বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ম করেছে, দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়া যাবে না। সেক্ষেত্রে বোঝাই যাচ্ছে একটি আসনের গুরুত্ব কত। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজেদের মধ্যে এ-বিষয়ে সমন্বয় করছে না। ভর্তি-ইচ্ছুকদের ভোগান্তি কমাতে কেন্দ্রীয়ভাবে অথবা আঞ্চলিকভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠানের পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের প্রতি ক’বছর আগেই আহ্বান জানিয়েছিলেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি। তিনি বলেছিলেন, ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য এক শহর থেকে অন্য শহরে যাতায়াত করতে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের বিরাট ভোগান্তিতে পড়তে হয়। শিক্ষার্থীদের জন্য উচ্চতর শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করা সবার দায়িত্ব। বিগত বছরগুলোর মতো এবারো বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের থাকা-খাওয়া ও যাতায়াতের বড় ধরনের সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষ বিষয়টি কবে ভাববেন? মেডিকেল কলেজগুলোর ভর্তি পরীক্ষা যেহেতু একই পরীক্ষার মাধ্যমে নেওয়া যায়, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ভর্তি পরীক্ষাও একটি সমন্বিত পরীক্ষার মাধ্যমে নেওয়া সম্ভব। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিষয়টিতে যেহেতু একমত হতে পারছে না, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে পারে, সমন্বয় সাধন করতে পারে। এই স্বাধীন দেশে আমাদের ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা এতটুকু সুযোগ ভোগ করার অধিকার রাখে। লেখক : প্রোগ্রাম ম্যানেজার, ব্র্যাক শিক্ষা কর্মসূচি masumbillah65@gmail.com
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১