আপডেট : ১১ November ২০১৮
ডাকাত সন্দেহে পুলিশ পেটানোর বদলা নিতে পুলিশি তাণ্ডবে জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার মাটিকুমড়া গ্রাম এখন পুরুষশূন্য। গ্রামজুড়ে নেমে এসেছে নিস্তব্ধতা। বেপরোয়া পুলিশের নির্যাতনভীতি আর আতঙ্কের এক অবর্ণনীয় পরিস্থিতি বিরাজ করছে সেখানে। আসামি আটক অভিযানের নামে ইতোমধ্যে ওই গ্রামের প্রায় ১০০ বাড়ি ভাঙচুর করেছে পুলিশ। পুলিশের এ তাণ্ডব চলে গ্রামের প্রায় প্রতিটি ঘরে। তাণ্ডবের ভয়াবহতায় নিজ গ্রাম ছেড়ে পার্শ্ববর্তী একাধিক গ্রামে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন অনেক নারী। এ বিষয়ে জেলা পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তার বক্তব্যেও আঁচ করা যায় নির্যাতনের ভয়াবহতার মাত্রা। অভিযান চালিয়ে গ্রামের ৪৪ জনকে আটক করেছে পুলিশ। এদিকে পুলিশ পেটানোর সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পুলিশ এ সময় পিটিয়ে গুরুতর আহত করেছে এক ইউপি সদস্যকে। ওই জনপ্রতিনিধি এখন আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি। চিকিৎসকের পরামর্শ সত্ত্বেও পুলিশের বাধায় উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকায়ও নিতে পারছে না স্বজনরা। বর্তমানে পুলিশ পুরো মাটিকুমড়া গ্রামটি ঘিরে রেখেছে। গ্রামে কেউ ঢুকতে অথবা বের হতে পারছে না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে সবুজ রঙের প্রাইভেটকারে করে সাধারণ পোশাকে মাটিকুমড়া গ্রামের মাদক ব্যবসায়ী জহুরুলে বাড়িতে যায় ৫-৬ জন পুলিশ। সেখানে তাদের কয়েকজন ইয়াবা সেবন করে। তাদের পোশাকে কোথাও পুলিশ লেখা ছিল না। জহুরুলের বাড়িতে রাতের বেলা বেশ কয়েকজন অজ্ঞাত লোক দেখে আশপাশের লোকজনের সন্দেহ হয়। অজ্ঞাত ব্যক্তিরা ভুয়া পুলিশ না ডাকাত— এ নিয়ে শুরু হয় গুঞ্জন। একপর্যায়ে গ্রামবাসীর কয়েকজন জহুরুলের বাড়ি গিয়ে অজ্ঞাত ব্যক্তিদের পরিচয় জানতে চায়। তারা প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে দুই রাউন্ড গুলি ছোড়ে। এতে স্থানীয় লোকজনের সন্দেহ বেড়ে যায় এবং তারা ভয়ে দ্রুত স্থান ত্যাগ করে স্থানীয় মসজিদের মাইকে প্রচার করে যে গ্রামে ডাকাত পড়েছে। এ ঘোষণায় গ্রামবাসী জড়ো হয়ে তাদের গণপিটুনি দেয়। এতে প্রাইভেটকার চালকসহ ৬ পুলিশ সদস্য আহত হয়। এ ঘটনা জানার পর পর ওই রাতেই জেলা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ এসে মাটিকুমড়া গ্রামে তাণ্ডব চালায়। তারা স্থানীয় মেম্বার ফারুককে মোবাইল ফোনে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে বেদম প্রহার করে। পুলিশের সন্দেহ, মেম্বার ফারুক গ্রামবাসীকে জড়ো করে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে। পুলিশি প্রহারে তার শারীরিক অবস্থা এখন আশঙ্কাজনক। তাকে বৃহস্পতিবার রাত ৪টা ৫০ মিনিটে আড়াইশ শয্যার যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য ফারুককে ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দিলেও পুলিশ ফারুককে ঢাকায় নিতে দেয়নি বলে অভিযোগ করে তার পরিবার। মেম্বার ফারুকের ওপর নির্যাতনের পর পরই পুলিশ পুরো গ্রাম ঘিরে ফেলে। তাণ্ডব চালায় গ্রামের প্রায় প্রতিটি ঘরে। একই সঙ্গে পুলিশ ভাঙচুর করে প্রায় ১০০ বাড়িঘর। এ সময় পুলিশ মাটিকুমড়া গ্রাম থেকে ৪৪ জনকে আটক করে। ঝিকরগাছা থানার ওসি আবদুর রাজ্জাক আটকের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় ঝিকরগাছা থানায় দুটি মামলা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, পুলিশের ওপর হামলার সঙ্গে জড়িতরা আটক না হওয়া পর্যন্ত অভিযান অব্যাহত থাকবে। পুলিশ গত শুক্রবারও মাটিকুমড়া গ্রামে অভিযান চালায়। গ্রামবাসীর অভিযোগ, পুলিশের তাণ্ডবে মাটিকুমড়া গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। পুলিশের তাণ্ডবে ভীত বেশ কিছু বাড়ির নারীরাও বাড়িঘর ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছে পাশের গ্রাম কুমরচান্দা, সানন্দাকাঠি ও নাইরায়। এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আনসার আলি বলেন, একটা ঘটনা ঘটলে অবস্থা তো বোঝেনই কী হয়। এ ঘটনায় বেশকিছু আটক হয়েছে। তবে আটকের সংখ্যাটা এই মুহূর্তে বলা যাচ্ছে না। হামলায় জড়িতদের রেখে নিরপরাধ লোকদের ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১