বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ১০ November ২০১৮

খরচ মাত্র ১৬ বিক্রি ৩৮ টাকা

অস্বাভাবিক মুনাফা প্যাকেটজাত লবণে

প্যাকেটজাত লবণ


৬ টাকা কেজির অপরিশোধিত (অবিচূর্ণ) লবণ সনাতন পদ্ধতিতে ৪ টাকা খরচে পরিশোধন করেই বিক্রি করা যায় ১৪ টাকায়। আর সেটা সবচেয়ে উন্নত প্রক্রিয়া ভ্যাকুয়াম ইভাপোরেশন পদ্ধতিতে পরিশোধনের পর আয়োডিনযুক্ত ও প্যাকেটজাত করলে কেজিপ্রতি আরো খরচ পড়বে ৬ টাকা। সবমিলে ১৬ টাকার লবণ বাজারে ক্রেতারা কিনছেন ৩৮ টাকা দরে। লবণের এ অতিমুনাফা নতুন নয়। বাজারজাতকারীর পাশাপাশি এ ব্যবসায় মধ্যস্বত্বভোগীরাও প্রচুর বাড়তি লাভের সুযোগ পাচ্ছেন তদারকির অভাবে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে জমি কমায় প্রতিবছর কমছে দেশে লবণ উৎপাদন।  এখন বছরে প্রায় ২০ লাখ টন চাহিদার বিপরীতে লবণের উৎপাদন দাঁড়িয়েছে সাড়ে ১৪ লাখ টন। তবে ঘাটতি মেটাতে পণ্যটির ‘নিষিদ্ধ আমদানিনীতি’ স্থগিত করে গত দুই বছরে সাড়ে সাত লাখ টন লবণ আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু ঢালাওভাবে বন্ধ মিলমালিকসহ কিছু অসাধু ব্যবসায়ী এ লবণ আমদানির সুযোগ পাওয়ায় ক্রেতাপর্যায়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যটির মূল্য কমেনি।

এদিকে বাজারে এখন ভ্যাকুয়াম পদ্ধতিতে পরিশোধিত সবচেয়ে ভালোমানের প্যাকেটজাত লবণের দাম কেজিপ্রতি ৩৮-৪০ টাকা। যেটা গত দুই বছর আগেও ২৫ টাকার মধ্যে ছিল। দেশে উৎপাদন কমে আসার পর থেকে দফায় দফায় লবণের দাম বেড়ে এ পর্যায়ে উঠেছে।

কয়েকজন মিল মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসব প্যাকেটজাত লবণে কেজিতে অতিরিক্ত ৬ টাকা বেশি খরচ হয়। এর মধ্যে কক্সবাজার থেকে প্রতিবস্তা লবণ পরিবহনে ব্যয়, লবণ চূর্ণ ও প্রক্রিয়াকরণ করার ব্যয়সহ আয়োডিন মেশাতে এবং প্যাকেটজাতকরণ অন্তর্ভুক্ত।

তারপরও বাজারে এসব লবণের দাম এত বেশি কেন জানতে চাইলে লবণ মিল মালিক সমিতির সভাপতি নূরুল কবির বলেন, প্যাকেটজাত লবণের ব্যবসা করছে দেশের অনেক বড় প্রতিষ্ঠান। তারা যে দাম নির্ধারণ করছে সেটা কমানোর জন্য সরকারও অনেক চেষ্টা করেছে, পারেনি।

তিনি আরো জানান, ভ্যাকুয়াম ইভাপোরেশন পদ্ধতিতে প্রতি বস্তা অবিচূর্ণ লবণ প্রক্রিয়াজাত করতে ৫০ শতাংশ অপচয় হয় এমন তথ্য দিয়ে কোম্পানিগুলো বেশি দাম নিচ্ছে। যেটা সঠিক নয়। এ পদ্ধতিতে ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ অপচয় হয়। এর সঙ্গে কোম্পানিগুলো বিশাল বিনিয়োগ, যন্ত্রপাতি পরিচালন ব্যয়সহ বিজ্ঞাপন ব্যয় যোগ করেই প্যাকেটজাত লবণের দাম নির্ধারণ করে। এ কারণে দাম বেশি হয়।

লবণের দাম অযৌক্তিক এমন তথ্য রয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়েও। একটি সূত্রে পাওয়া কমিশনের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, দেশে প্রতিকেজি লবণের উৎপাদন খরচ ৬ টাকা। বিপরীতে আমদানিতে ব্যয় ৫ টাকা ৭০ পয়সা। এ অবস্থায় কমিশন লবণ আমদানিতে মোট করভার ৮৯ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০৫ শতাংশ করে আমদানি উন্মুক্ত করার সুপারিশ করেছে। কমিশনের মতে, এতে দেশীয় চাষিরা সুরক্ষা পাবেন, পাশাপাশি অসাধু বাণিজ্য বন্ধ হবে।

এদিকে এখন দেশে সনাতন পদ্ধিতিতে উৎপাদিত লবণ (মোটা দানা) বিক্রি হচ্ছে ১৪ টাকা দরে। কক্সবাজারের লবণচাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাঠপর্যায়ে প্রতিমণ (৪০ কেজি) লবণ সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা। এ হিসাবে প্রতিকেজি লবণের দাম পড়ে ১২ টাকা ৫০ পয়সা। আর সেখানকার ম্যানুয়াল মিলে উৎপাদিত প্রতি বস্তা (৭৫ কেজি) আয়োডিনযুক্ত লবণ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৫০ টাকায়। এ হিসাবে প্রতিকেজি লবণের দাম পড়ছে ১৪ টাকা।

কক্সবাজার লবণ চাষি কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক কায়সার ইদ্রিস বলেন, অটোমিলগুলো লবণে অস্বাভাবিক মুনাফা করছে। ম্যানুয়াল লবণের থেকে প্যাকেটজাত লবণ আড়াই গুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে কারসাজি করে। কিন্তু সব ব্যয় হিসেবে নিলেও দুই লবণের খরচের পার্থক্য ৬ টাকার বেশি হবে না।

দেশে লবণ বাজারজাত হচ্ছে ভ্যাকুয়াম, মেকানিক্যাল ও সনাতন- এ তিন পন্থায়। এর মধ্যে ৬০ শতাংশ লবণই পরিশোধন হয় হয় ভ্যাকুয়াম ও মেকানিক্যাল পদ্ধতিতে। এ দুই পন্থায় পরিশোধিত লবণের বাজারের ৮০ শতাংশ দখল করে আছে প্রায় ৩০টি প্রতিষ্ঠান।

এদিকে লবণ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর তদারকি করছে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক)। এ বিষয়ে সংস্থাটির পরিচালক (বিপণন) মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘মিল মালিকরা আমাদের কথা শোনে না। কারণ আমরা উৎপাদন পর্যায়ের নিয়ন্ত্রক, বিপণন পর্যায়ের নয়।’

তিনিও জানান, সবচেয়ে ভালোমানের লবণ উৎপাদন থেকে শুরু করে এতে আয়োডিন মেশানো, প্যাকেজিং ও আনুষঙ্গিক ব্যয় হিসাব করলে এর সর্বোচ্চ বিক্রয়মূল্য ২৫ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। এর চেয়ে বেশি দাম হওয়ার কোনো যৌক্তিকতাই নেই। অথচ দীর্ঘদিন থেকে অযৌক্তিক বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে পণ্যটি।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১