বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ০৮ November ২০১৮

অতিথি পাখি শিকারে এবার বাঁশি

খুলনার দাকোপ উপজেলার এক শিকারী রাতে ধান খেত থেকে শিকার করেছে এসব অতিথি পাখি প্রতিনিধির তোলা ছবি


ঋতু পরিক্রমার হিসাবে শীত মৌসুম শুরু হতে মাসাধিককাল বাকি থাকলেও খুলনার দাকোপ উপজেলার জলাশয়গুলোতে এখনই আসতে শুরু করেছে পরিযায়ী পাখিরা। অন্যান্য বছরের মতো এবারো হিমালয় ও সাইবেরিয়াসহ শীতপ্রধান দেশগুলো থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি আসছে সুন্দরবন সংলগ্ন এ অঞ্চলে। তবে এসব অতিথি পাখি আর পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে পাখি শিকারিরা। আইনের তোয়াক্কা না করে নগদ অর্থের লোভে অভিনব কৌশলে অতিথি পাখি নিধনে তৎপর হয়ে উঠেছে তারা। পাখি ধরতে নতুন কৌশল হিসেবে শিকারিরা কাজে লাগাচ্ছে বাঁশির সুর। শিকারের পর আকারভেদে এসব পাখি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি করছে তারা। একশ্রেণির শৌখিন মানুষ পরিবেশের কথা চিন্তা না করে এসব পাখি কিনে নিচ্ছে কেবলই রসনাবিলাসের জন্য।

শীতপ্রধান দেশগুলোতে তীব্র শীতের সময় পরিযায়ী পাখিদের জন্য অতিমাত্রায় খাদ্যসঙ্কট দেখা দেয়। একদিকে তুষারপাত অন্যদিকে খাদ্যসঙ্কটের কারণে পাখিদের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে। তখন বাঁচার তাগিদে হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে এসে অপেক্ষাকৃত কম শীতের এই বাংলাদেশকে সাময়িক আবাসভূমি হিসেবে বেছে নেয় এসব পাখি। শীত শেষ হলে আবার তারা নিজেদের দেশে ফিরে যায়। এবারো তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। ইতোমধ্যে উপজেলার বিভিন্ন খাল-বিল ও জলাশয় হাজার হাজার অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠেছে। এদের মধ্যে বালি হাঁস, বক, জলপিপি, কোম্বডাক, সরালী, কাস্তেচাড়া, পাতাড়ি হাঁস, পানকৌড়ি, কাদাখোঁচা, হুরহুর, খয়রা, সোনা রিজিয়া অন্যতম। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে শতাধিক শিকারি রাতের বেলা অবাধে পাখি শিকার করে ভোরের আলো ফোটার আগেই তা বিক্রি করছে। পরিবেশের শত্রু এসব শিকারি রাতে জলাশয়ের পাশে ফাঁদ পেতে রেখে ধানক্ষেতে বসে পাখির ডাকের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বাঁশি বাজায়। এতে বিভ্রান্ত হয়ে অনেক পাখিই সেখানে উড়ে এসে শিকারির ফাঁদে পড়ে আটকে যায়। এ ছাড়া শিকারিরা নাইলনের সুতা দিয়ে তৈরি ছোট-বড় ফাঁদ পাখির চলার পথে পেতে রাখে। রাতে পাখিরা যখন উড়ে বেড়ায় তখন ওই ফাঁদে শত শত পাখি আটকা পড়ে। আবার চোখে আলো ফেলে, কেঁচো দিয়ে বড়শি পেতে, কোচ মেরে ও কারেন্ট জাল পেতেও পাখি শিকার করে থাকে কিছু শিকারি। শিকারিরা এক রাতেই নিধন করে কয়েকশ অতিথি পাখি। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন এসব দেখেও না দেখার ভান করে থাকে।

পরিযায়ী পাখি শিকারে পাখির ডাকের সঙ্গে মিলিয়ে বাঁশি তৈরির অভিনব এ কৌশল সম্পর্কে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় পারচালনার এক শিকারি জানান, তালপাতার সঙ্গে স্কচটেপ জড়িয়ে মোটরসাইকেলের হাইড্রোলিকের কভারের এক মাথায় সুপারগুলু লাগিয়ে রাবারের সাহায্যে তৈরি করা হয় অভিনব ওই বাঁশি।

সরেজমিন গিয়ে চালনা বাজারের সুতা ও মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশের দোকানগুলোতে দেখা গেছে অসাধু শিকারি ওই বাঁশি তৈরির জন্য দোকানিদের কাছ থেকে এসব সরঞ্জাম কিনছে।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা পরিতোষ রায় বাংলাদেশের খবরকে বলেন, তার কাছে এখন পর্যন্ত অতিথি পাখি নিধনের কোনো অভিযোগ আসেনি। কিন্তু এভাবে পাখি শিকার করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ দাবি করে তিনি বলেন, এটি বন বিভাগের দায়িত্ব। তবে ঘটনা সত্য হলে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১