আপডেট : ০৭ November ২০১৮
রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষী প্রচারণা বন্ধের অঙ্গীকার করলেও তা রাখতে পারেনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক। ফেসবুক বলছে, বিদ্বেষী প্রচারণা বন্ধ করা তাদের দায়িত্ব হলেও এ ক্ষেত্রে তারা সেটি করতে ব্যর্থ হয়েছে। তবে এ বিষয়ে নতুন করে পদক্ষেপ নেওয়ার কথাও বলেছে প্রতিষ্ঠানটি। ফেসবুকের বিরুদ্ধে মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিধনের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহূত হওয়ার অভিযোগ উঠেছিল বহু আগেই। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠন ও সংবাদমাধ্যমে উঠে আসা সেসব অভিযোগ স্বীকারও করে নিয়েছিল ফেসবুক। তারপর বিদ্বেষী প্রচারণা বন্ধে যথাযথ পদক্ষেপের অঙ্গীকার করেছিল তারা। সম্প্রতি এক মার্কিন মানবাধিকার সংস্থা অভিযোগ তুলেছে, ফেসবুক ব্যবহারের মধ্য দিয়ে বিদ্বেষী প্রচারণা এখনো চলছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান বলছে, ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগও স্বীকার করে নিয়েছে। তারা মেনে নিয়েছে, বিদ্বেষী প্রচারণা বন্ধ করা তাদের দায়িত্বের অন্তর্গত। রোহিঙ্গাদের নিজ দেশের জনগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকার করে না মিয়ানমার। তাদের ‘বাঙালি মুসলমান’ আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশের বাসিন্দা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায় দেশটি। ১৯৮২ সালে দেশটি তাদের নাগরিকত্ব নিয়ে নতুন আইন কার্যকর করে। বিতর্কিত ওই বর্ণবাদী নাগরিকত্ব আইনে মিয়ানমারের প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার নাগরিকত্ব অস্বীকার করা হয়। তাদের বিরুদ্ধে চালানো হয় বিদ্বেষী প্রচারণা ও ঘৃণা। সাম্প্রতিক সময়ে এই ঘৃণা সৃষ্টি করতে ফেসবুকের ব্যবহূত হওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। ২০১৭ সালে জাতিসংঘ এক প্রতিবেদনে দাবি করে, রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দিতে এবং তাদের ফেরার সব পথ বন্ধ করতে আরসার হামলার আগে থেকেই রোহিঙ্গাবিদ্বেষী প্রচারণার মধ্য দিয়ে পরিকল্পিত সেনা অভিযান শুরু হয়েছিল। সে সময় অ্যামনেস্টির এক প্রতিবেদনেও ‘রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের সামরিক প্রচারণা’কে সেখানকার সঙ্কটের জন্য দায়ী করা হয়। চলতি বছর এপ্রিলে দ্য গার্ডিয়ানের এক অনুসন্ধানেও দেখা যায়, রাখাইন সঙ্কটে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ঘৃণাযুক্ত বক্তব্য ছড়ানোর ক্ষেত্রে নির্ধারণী ভূমিকা ছিল ফেসবুকের। রয়টার্সের অনুসন্ধানেও রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের নেপথ্যের ঘৃণাবাদী প্রচারণা ঠেকাতে ফেসবুকের ব্যর্থতার কথা উঠে আসে। নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সেনাবাহিনীর নিয়োজিত কর্মীরা ফেসবুক ব্যবহার করে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়িয়েছে। সম্প্রতি মার্কিন মানবাধিকার সংস্থা বিজনেস ফর সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি (বিএসআর) তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, ফেসবুক মিয়ানমারের জনগণকে ঘৃণা এবং সহিংসতা ছড়ানোর জন্য তাদের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করতে দিচ্ছে। বিএসআর বলছে, সামাজিক যোগাযোগের এ মাধ্যমটি মিয়ানমারে অপ্রতিরোধ্য সঙ্কটের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে। তারা বলছে, স্থানীয়ভাবে যারা ফেসবুকের হয়ে কাজ করছেন, তারা হয়তো কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে কাজ করতে সক্ষম। তবে সে ক্ষেত্রে তাদের সেনাবাহিনীর তোপের মুখে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে বলে কাজটি সহজ নয়। চলতি বছরের এপ্রিলেই মিয়ানমারে জাতিগত নিধনে ফেসবুকের ব্যবহূত হওয়ার অভিযোগ স্বীকার করেন প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা ও প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ। এবার নতুন করে ওঠা বিএসআর-এর অভিযোগ প্রসঙ্গে ফেসবুকের প্রোডাক্ট পলিসি ম্যানেজার আলেক্স ওয়ারোফকা একটি বলেন, ওই প্রতিবেদনটি এই বছরকে প্রাধান্য দিয়ে করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, আমাদের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে মিয়ানমারে যে জাতিগত বিভেদ এবং সহিংসতা ছড়ানো হচ্ছে, তা প্রতিরোধে আমাদের পক্ষ থেকে যথেষ্ট ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। আমরা স্বীকার করছি, এ নিয়ে আমরা আরো বেশি কিছু করতে পারি এবং আমাদের তাই করা উচিত। বিজনেস ফর সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি তাদের প্রতিবেদনে মিয়ানমারে এমন সমস্যা সমাধানে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরেছে। ফেসবুকের কন্টেন্ট পলিসি আরো কঠোর করা, সরকার আর নাগরিক সমাজের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানো, দেশটিতে ফেসবুকের কার্যক্রমের অগ্রগতি নিয়ে থাকা অতিরিক্ত তথ্য প্রকাশের সুপারিশ করেছে তারা।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১