আপডেট : ০৪ November ২০১৮
নানা ধরনের গুঞ্জন, আলোচনা আর ধোঁয়াশা কাটিয়ে অবশেষে প্রযুক্তিপ্রেমীদের মুখে হাসি ফুটল। উন্মোচিত হলো মার্কিন প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপলের নতুন পণ্য ম্যাকবুক এয়ার সিরিজের নতুন ল্যাপটপ, তৃতীয় প্রজন্মের নতুন আইপ্যাড প্রো, অ্যাপল পেনসিল আর বহুল প্রত্যাশিত ম্যাক মিনি। গত ৩০ অক্টোবর নিউইয়র্কের ব্রুকলিন একাডেমি অব মিউজিকে নতুন এই পণ্যগুলো উন্মোচন করা হয়। আগের সংস্করণগুলোর তুলনায় নতুন এই পণ্যগুলোর ডিজাইনেও এসেছে বেশ কিছু পরিবর্তন। এছাড়া নতুন কিছু ফিচারও যুক্ত হয়েছে এই পণ্যগুলোতে। নতুন এই অ্যাপল পণ্যগুলোর নানা দিক নিয়েই বিস্তারিত লিখেছেন মাসুদ রানা ম্যাকবুক এয়ার ২০১৭ সালে নতুন স্পেসিফিকেশন যোগ হলেও ২০১০ সালের পরে ম্যাকবুক এয়ার ল্যাপটপের ডিজাইনে কোনো পরিবর্তন হয়নি। তবে চলতি বছর উন্মোচিত হওয়া নতুন ম্যাকবুক এয়ারে ফিচার যুক্ত হওয়ার পাশাপাশি এর ডিজাইনেও অনেক পরিবর্তন এসেছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক এর ফিচারগুলো সম্পর্কে- রেটিনা ডিসপ্লে : নতুন ম্যাকবুক এয়ারের প্রধান আকর্ষণ রেটিনা ডিসপ্লে। এই প্রথম ম্যাকবুক এয়ার ল্যাপটপে ১৩.৩ ইঞ্চি রেটিনা ডিসপ্লে ব্যবহার হয়েছে। যার রেজ্যুলেশন ২৫৬০ বাই ১৬০০ পিক্সেল। এটির আসপেক্ট রেশিও ১৬:১০। এই ডিসপ্লে আগের থেকে ৪৮ শতাংশ বেশি রঙিন। এছাড়া ডিসপ্লের চারপাশের বেজেল আগের থেকে ৫০ শতাংশ পাতলা, যা ডিভাইসটিতে বাড়তি সৌন্দর্য যোগ করেছে। টাচ আইডি : নতুন ম্যাকবুক এয়ারে যোগ হয়েছে টাচ আইডি। ল্যাপটপের কিবোর্ডের ওপরে ব্যবহার হয়েছে এই টাচ আইডি। কোম্পানির নিজস্ব টি-২ চিপের সাহায্যে চলবে এই সিকিউরিটি ফিচার। এই টি-২ চিপ ল্যাপটপের এনক্রিপশন কি, স্টোরেজ, ফিঙ্গারপ্রিন্ট ডাটা এবং বুট ফিচারকে নিরাপদ রাখে। ফলে এই ডিভাইস ব্যবহারকারীদের তথ্যকে নিরাপদ রাখতে সহায়তা করবে। আরো স্লিম : সম্পূর্ণ রিসাইকেলেবেল মেটেরিয়াল ব্যবহারের জন্য অ্যালুমিনিয়ামের পরিবর্তে একটি বিশেষ অ্যালয় ব্যবহার হয়েছে এই ল্যাপটপে। প্রায় সাড়ে ১৩ ইঞ্চি ডিসপ্লের নতুন এই ম্যাকবুক এয়ার পুরনো ১২ ইঞ্চির ম্যাকবুকের চেয়েও হালকা। ১৫ দশমিক ৬ মিমি চওড়া নতুন ম্যাকবুক এয়ার ল্যাপটপটির ওজন মাত্র ১.২৫ কেজি। উন্নত প্রসেসর : নতুন এই ল্যাপটপে থাকছে ১.৬ গিগাহার্টজ ডুয়েল কোর ইন্টেল কোরআই৫ প্রসেসর, ৮ গিগাবাইট (জিবি) এলপিডিডিআর র্যাম, যা বাড়ানো যাবে ১৬ গিগাবাইট পর্যন্ত। গ্রাফিক্স সুবিধা দিতে রয়েছে ইন্টেল ইউএইচডি গ্রাফিক্স ৬১৭ জিপিইউ। এছাড়া নতুন এই ম্যাকবুক এয়ারে থাকছে ১২৮ জিবি এসএসডি স্টোরেজ। অন্যান্য ফিচার : আগের চেয়ে ২০ শতাংশ বড় নতুন ফোর্স ট্র্যাকপ্যাড, তৃতীয় জেনারেশনের ব্যাকলিট বাটারফ্লাই কিবোর্ড, তিনটি মাইক্রোফোন স্টোরিও স্পিকার, দুটি ইউএসবি টাইপ-সি থান্ডারবোল্ট থ্রি পোর্ট, যা ল্যাপটপে পাওয়ার পৌঁছাবে। এই পোর্টগুলো ৫কে ডিসপ্লে পর্যন্ত সাপোর্ট করে। এছাড়া নতুন ম্যাকবুক এয়ারের বাঁদিকে ডিসপ্লের ওপরে রয়েছে একটি ফেসটাইম এইচডি ক্যামেরা এবং এতে তিনটি মাইক আছে, যা উন্নত ভয়েস রিকগনিশন সুবিধা দিতে সক্ষম। একবার সম্পূর্ণ চার্জে টানা ১২ ঘণ্টা ব্রাউজিং এবং ১৩ ঘণ্টা আইটিউনসে মুভি দেখার সুবিধাসম্পন্ন নতুন ম্যাকবুক এয়ারের দাম পড়বে ১ হাজার ১৯৯ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ১ লাখ ৫৯৬ টাকা। গোল্ড, সিলভার ও স্পেস গ্রে রঙের নতুন এই ম্যাকবুক এয়ার বিক্রি শুরু হবে আগামী ৭ নভেম্বর থেকে। আইপ্যাড প্রো ম্যাকবুক এয়ারের সঙ্গেই নতুন ডিজাইন, কম বেজেল ও ফেস আইডি সুবিধা নিয়ে তৃতীয় প্রজন্মের নতুন আইপ্যাড প্রো উন্মোচন করেছে অ্যাপল। আইপ্যাডের নতুন সংস্করণের এই ডিভাইসটিতে ডিজাইনের পাশাপাশি ফিচারেও আছে নতুনত্ব। লিক্যুইড রেটিনা ডিসপ্লে : ম্যাকবুক এয়ারের সঙ্গে নতুন ‘আইপ্যাড প্রো’ ট্যাবলেট পিসিতে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনটি এসেছে এর স্ক্রিনে। ১১ ইঞ্চি ও ১২.৯ ইঞ্চি স্ক্রিনের দুটি মডেলেই লিক্যুইড রেটিনা ডিসপ্লে সত্যিই মনোমুগ্ধকর। তবে নতুন এই স্ক্রিনে কোনো হোম বাটন নেই। হোম বাটন না থাকলেও এতে রয়েছে আইফোন ১০এস এবং ১০এস ম্যাক্স অ্যাক্টিভেশন মোড- যার মাধ্যমে হোম বাটন স্পর্শ না করেই আপনি স্ক্রিনে স্ক্রল করতে পারবেন। ফেস আইডি : যেহেতু নতুন আইপ্যাড প্রোতে কোনো হোম বাটন থাকছে না, তাই ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরও কাজ করবে না। তাই এটিতে টাচ আইডির পরিবর্তে অ্যাপল যুক্ত করেছে ফেস আইডি। অ্যাপল দাবি করেছে, এই ফেস আইডি সিস্টেম অত্যন্ত নিরাপদ। ইউএসবি-সি : আইপ্যাড প্রোতে যুক্ত করা হয়েছে সার্বজনীন ইউএসবি-সি। যার ফলে এই আইপ্যাডটির সঙ্গে ৫কে রেজ্যুলেশনের ডিসপ্লেসহ বিস্তৃত পরিসরে অনেক ডিভাইস দ্রুত যুক্ত করা যাবে। এই ইউএসবি-সি সংযোজকটি অনেক বেশি শক্তিশালীও বটে। এছাড়া এই ট্যাবলেটটি ব্যাটারি খোলা অবস্থায় চার্জ করা যাবে। এ১২এক্স বায়োনিক প্রসেসর : চলতি বছর অ্যাপল নতুন প্রজন্মের আইওএস অপারেটিং সিস্টেমচালিত যতগুলো ডিভাইস বাজারে এনেছে, তার সবগুলোতেই নতুন প্রজন্মের প্রসেসরও যুক্ত করা হয়েছে। নতুন আইপ্যাড প্রোর ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। নতুন এই ট্যাবলেটগুলোতে ব্যবহার করা হয়েছে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে শক্তিশালী এ১২এক্স বায়োনিক প্রসেসর। ‘এ১২এক্স’ বায়োনিক প্রসেসরে থাকছে ৩৫ শতাংশ দ্রুতগতির সিঙ্গেল-কোর এবং ৯০ শতাংশ দ্রুতগতির মাল্টি-কোর সিপিইউ প্রসেসিং ক্ষমতা, যা পূর্ববর্তী আইপ্যাড প্রোর তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ দ্রুত গ্রাফিক্স কর্মক্ষমতা দিতে সক্ষম। অ্যাপল দাবি করেছে, নতুন আইপ্যাড প্রোর প্রসেসরগুলো গ্রাফিক্স কর্মক্ষমতার দিক থেকে ‘এক্সবক্স ওয়ান এস’-এর সঙ্গে তুলনীয়। বাড়তি স্টোরেজ ক্ষমতা : আইপ্যাড প্রোর নতুন দুটি সংস্করণ থাকছে ৬৪ গিগাবাইট ফ্ল্যাশ স্টোরেজে। আগের সংস্করণগুলোতেও স্টোরেজ ক্ষমতা একই ছিল। তবে আরো বেশি স্টোরেজ ক্ষমতার আইপ্যাড প্রো পাওয়া যাবে। সেক্ষেত্রে ব্যয় বাড়বে। ১১ ইঞ্চি ও ১২.৯ ইঞ্চি স্ক্রিনের ৬৪ গিগাবাইট আইপ্যাড প্রোর প্রারম্ভিক মূল্য যথাক্রমে ৭৯৯ ও ৯৯৯ ডলারে হলেও ১ টেরাবাইট স্টোরেজ ক্ষমতার সংস্করণগুলোর প্রারম্ভিক মূল্য প্রায় দ্বিগুণ, যথাক্রমে ১,৫৪৯ ডলার ও ১,৭৪৯ ডলার। নতুন অ্যাপল পেন্সিল তৃতীয় প্রজন্মের নতুন আইপ্যাড প্রোর দুটি সংস্করণের সঙ্গেই উন্মোচন করা হয়েছে নতুন অ্যাপল পেন্সিল। তবে আগের সংস্করণের আইপ্যাড ব্যবহারকারীদের জন্য খারাপ খবর হলো, এই নতুন পেন্সিলগুলো শুধু নতুন ডিভাইসগুলোতেই কাজ করবে। আর নতুন আইপ্যাডে কাজ করবে প্রথম প্রজন্মের পেন্সিলগুলো। তবে দ্বিতীয় প্রজন্মের পেন্সিল দিয়ে ছবি আঁকা, নোট লেখা, স্কেচ, রঙ করা ও ই-মেইল মার্ক করা যাবে। আগের অ্যাপল পেন্সিলগুলো লাইটেনিং পোর্টের মাধ্যমে চার্জ করতে হতো। তবে নতুন পেন্সিলগুলোকে আর আলাদা করে চার্জ করার প্রয়োজন হবে না। কারণ, নতুন আইপ্যাড প্রোর ওপরে রাখলেই ম্যাগনেটিক অ্যাটাচমেন্টের মাধ্যমে পেন্সিলটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চার্জ হবে। এছাড়া নতুন পেন্সিলটি টাচ করে বিভিন্ন টুলও পরিবর্তন করা যাবে। যেমন পেন্সিলটি ডবল ট্যাপ করলে তা ইরেজারের কাজ করবে। আগের অ্যাপল পেন্সিলটির চেয়ে ৩০ ডলার বেশি ধরে নতুন পেন্সিলটির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১২৯ মার্কিন ডলার বা ১০ হাজার ৮২৩ টাকা। ম্যাক মিনি ২০১৪ সালের পর কমপ্যাক্ট কম্পিউটারের নতুন কোনো সংস্করণ বাজারে আনেনি অ্যাপল। তাই অনেকেই মনে করেছিলেন, অ্যাপল বোধহয় ম্যাক মিনির উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। এই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে ম্যাকবুক এয়ার ও আইপ্যাড প্রোর সঙ্গে নতুন মডেলের ম্যাক মিনির দেখা মিলল ব্রুকলিন একাডেমি অব মিউজিকে। নতুন এই ম্যাক মিনিটির ডিজাইন অনেকটা আগের সংস্করণের মতো হলেও পরিবর্তন আনা হয়েছে এর হার্ডওয়্যারে। নতুন ম্যাক মিনির বেসিক সংস্করণে রয়েছে কোয়াড কোর ইন্টেল কোরআই৩ প্রসেসর। তবে ইন্টেল কোরআই৭ প্রসেসরেও মিলবে এটি।। ব্যবহার করা যাবে সর্বোচ্চ ৬৪ গিগাবাইট র্যাম। স্টোরেজ সুবিধা দিতে রয়েছে ১২৮ গিগাবাইট ফ্ল্যাশ স্টোরেজ সুবিধা। নিরাপত্তার জন্য আছে টি-২ চিপ। এতে রয়েছে চারটি ইউএসবি সি-টাইপ, একটি এইচডিএমআই ও দুটি ইউএসবি-এ পোর্ট। এছাড়া রয়েছে চিরচেনা ৩.৫ এমএম হেডফোন জ্যাক। এর সঙ্গে মিলবে ১০ গিগাবাইট ইথারনেট অপশনের সুবিধা। ডিভাইসটির মূল্য শুরু হয়েছে ৭৯৯ মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশি টাকায় ৬৭ হাজার ৩৬ টাকা। ইতোমধ্যে প্রি-অর্ডার শুরু হলেও অন্যান্য পণ্যের মতো ম্যাক মিনিও পাওয়া যাবে আগামী ৭ নভেম্বর।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১