বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ৩০ October ২০১৮

ধর্মঘটে সরবরাহ বন্ধ

হুহু করে বাড়ছে পণ্যের দাম

হুহু করে বাড়ছে পণ্যের দাম সংগৃহীত ছবি


পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটে অচল হয়ে পড়েছে দেশের পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থাও। এ কারণে রাজধানীর বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ কমে গেছে। হুহু করে দাম বেড়েছে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা সবজি-মাছসহ অন্যান্য পণ্যের। ব্যবসায়ীরা বলছেন, যেকোনো পদের সবজির দরই কমপক্ষে কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। আর কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে আরো অস্বাভাবিক হারে। এ ছাড়া মাছের দামও কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেশি বিক্রি হচ্ছে।

তবে চাল ডাল তেল পেঁয়াজের মতো অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম এখনো বাড়েনি। কিন্তু চট্টগ্রাম বন্দরসহ দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর থেকে আমদানিপণ্য বাজারে আনা-নেওয়া প্রায় বন্ধ রয়েছে। সড়কপথে ধর্মঘট থাকায় আমদানি পণ্যবাহী কোনো ট্রেইলার বা ট্রাক বন্দর থেকে গন্তব্যে বের হয়নি। এতে দেশের আমদানিকারকরাও তাদের পণ্য নিয়ে বিপাকে রয়েছেন। যার প্রভাব দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে। সঙ্গে দেশের বিভিন্ন মোকাম থেকে কাঁচা পণ্য শহরের বাজারে সরবরাহ করতে না পারায় ওইসব এলাকায় সেসব পচে নষ্ট হচ্ছে। লোকসান গুনতে হচ্ছে কৃষকদের।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাইকারি সবজি ব্যবসায়ী ফিরোজ শাহ বাংলাদেশের খবরকে বলেন, ধর্মঘটের কারণে গত দুই দিন উত্তরবঙ্গ থেকে ট্রাক আসেনি বললেই চলে। এতে সবজির সরবরাহ একেবারেই কমে গেছে। এ কারণে সবজির দাম বেড়েছে। এখন যেসব সবজি বাজারে মিলছে এসব আগে থেকে মজুত করা। অন্যান্য ধর্মঘটে যাত্রী পরিবহন বন্ধ থাকলেও পণ্য পরিবহন চলত। কিন্তু এবার তা কার্যত বন্ধ রয়েছে।  

রামপুরা বৌবাজারে পরিস্থিতি জানতে চাইলে খুচরা সবজি ব্যবসায়ী রেজাউল করিম বলেন, শনিবার রাতে কারওয়ান বাজার থেকে প্রতি কেজি পটোল পাইকারি ৩৫ টাকা দরে কিনেছিলাম। আজ সেটা ৫২ টাকা দরে কিনেছি। যা ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একইভাবে প্রতি কেজি ভেণ্ডির (ঢেঁড়স) পাইকারি দর ৩২ থেকে এখন ৪০ টাকা। এখানে সেটা ৫০ টাকায় বিক্রি করছি।

তিনি বলেন, প্রতিটি সবজির দাম কমপক্ষে ১০ থেকে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে দু’দিনে। অল্পস্বল্প বাড়ার মধ্যে রয়েছে বেগুন, উস্তা, ঝিঙা, চিচিঙ্গা আর বরবটি। এসব এখন খুচরায় ৬০ টাকা কেজি। কিন্তু ৮০ টাকার শিম এখন ১২০ টাকা হয়েছে। প্রতিটি কপি ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৬০ টাকায় উঠেছে। আর কাঁচা মরিচের দাম ১০০ থেকে মানভেদে ১২০ টাকা কেজি।

বাজারে মাছের দাম কেজিতে ৫০ টাকার মতো বেড়েছে। তবে বাজারে ক্রেতা কম বলে খুচরা পর্যায়ে প্রভাব সবজির তুলনায় সীমিত। সোমবার থেকে নিষেধাজ্ঞা শেষে মাছের বাজারে ইলিশ মাছ আসার কথা থাকলেও ধর্মঘটের কারণে রুপালি মাছের তেমন ব্যাপকতা লক্ষ করা যায়নি। মাছ আহরণ হলেও তা রাজধানীর বাজারে পৌঁছায়নি বলে জানান মাছ ব্যবসায়ীরা।

সঙ্গে একইভাবে বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ১৫০-১৬০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। যা আগের থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেশি। খিলগাঁও বাজারে বিক্রেতা এজাজ হোসেন বলেন, কাপ্তান বাজার ও কারওয়ান বাজারে মুরগি নিয়ে আসা ট্রাকের সংখ্যা অনেক কমেছে। সরবরাহ সঙ্কটের কারণে এই পণ্যের হঠাৎ এ দাম বৃদ্ধি।

রাজধানীতে পণ্যের এই ঊর্ধ্বমূল্য হলেও ধর্মঘটে ব্যতিক্রম চিত্র গ্রামগঞ্জের হাটবাজারে। উত্তরবঙ্গের জয়পুরহাট জেলার আক্কেলপুর কাঁচাবাজার থেকে প্রতিদিন রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য এলাকায় সবজি সরবরাহকারী আলমগীর হোসেন বাবু মোবাইল ফোনে প্রতিবেদককে জানান, এসব এলাকার মোকামে প্রচুর কাঁচা পণ্য পচে নষ্ট হচ্ছে। গত দু’দিন কোনো ট্রাক পণ্য পরিবহন করেনি। এ কারণে ওইসব মোকামে সবজির দাম একেবারেই কমে গেছে। লোকসান দিচ্ছে কৃষকসহ আড়তদাররা।

অপরদিকে ধর্মঘটের কারণে দু’দিন রাজধানীর অধিকাংশ পাইকারি বাজারে ক্রেতা সমাগম কমে গেছে। পরিবহন সমস্যার কারণে দেশের অন্যান্য এলাকা থেকেও আসছে না পাইকাররা। আবার সারা দেশে রাজধানী থেকে পণ্য সরবরাহও করা যাচ্ছে না। এতে ছোট ছোট ব্যবসাকেন্দ্রসহ ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর গুদামে পণ্য জমে গেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান আবার শঙ্কার কারণে উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে। গতকাল রাজধানীর বিশেষায়িত পাইকারি বাজার গুলিস্তান, নবাবপুর, বঙ্গবাজার, বাবুবাজার, ইসলামপুর, মৌলভীবাজার, বেগমবাজার, শ্যামবাজার, সদরঘাটসহ বিভিন্ন বাজারে ক্রেতার আনাগোনা ছিল বেশ কম।

দেশের আমদানি ও রফতানি বাণিজ্যের প্রধান বন্দর চট্টগ্রামসহ অন্যান্য বন্দরে পণ্য খালাস অব্যাহত থাকলেও সেখান থেকে দেশের কোথাও সেসব সরবরাহ হচ্ছে না। একইভাবে রফতানি পণ্যবাহী কোনো যান বন্দরে প্রবেশ করতে পারেনি। ফলে দেশের আমদানি ও রফতানিকারকরা প্রয়োজনীয় সরবরাহ কিংবা সংগ্রহ করতে না পারায় কয়েকশ কোটি টাকা লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছেন বলে দাবি করেন।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১