আপডেট : ২৬ October ২০১৮
গাছগাছালির মোহনীয় প্রকৃতির নয়নাভিরাম এক পর্যটনকেন্দ্র দিনাজপুরের সিংড়া ফরেস্ট। ব্যস্ততম শহরের কোলাহল থেকে মুক্তি পেতে নিরিবিলি পরিবেশে মায়াবী হাতছানির এক অনুপম দৃশ্যসমৃদ্ধ এ ফরেস্ট ঠিক যেন স্বর্গের মতো। তাই বিশেষ করে শীত মৌসুমে এখানে প্রকৃতিপ্রেমিকদের আনাগোনা বেড়ে যায়। দিনাজপুর জেলা শহর থেকে সড়কপথে ৪০ কিমি উত্তরে বীরগঞ্জ উপজেলার মধ্যে এর অবস্থান। বীরগঞ্জ শহর থেকে এর দূরত্ব প্রায় ৫ কিমি। একসময় এটি বাঘ, নীলগাই, হরিণ, নানা প্রজাতির বানরসহ বিভিন্ন বন্য জীবজন্তুর অবাধ বিচরণের অভয়ারণ্য ছিল। যা দর্শনার্থী ও পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। নদীর দু’পাড় দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় দু’পাশে বিভিন্ন প্রজাতির বাহারি গাছের দেখা মেলে। শালবনের ভেতরের আগর আর বাঁশ-বেতের বাগানও দর্শনীয়। বনের গভীরে যেতে চোখে পড়বে প্রাচীন পত্রঝরা সিংড়ার বনাঞ্চল শালবন। তবে শাল ছাড়াও জারুল, তরুল, শিলকড়ই, শিমুল, মিনজিরি, সেগুন, গামার, আকাশমণি, ঘোড়ানিম, সোনালু, গুটিজাম, হরীতকী, বহেড়া, আমলকী এবং বিভিন্ন ধরনের নাম-না-জানা উদ্ভিদ ও লতাগুল্ম রয়েছে। এ ছাড়া খরগোশ, শেয়াল, বেজি, শূকর, বানরসহ বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, সাপ ও পতঙ্গ দেখা যায় এই বনে। দিনাজপুর জেলা সদর থেকে বীরগঞ্জ হয়ে সড়কপথে এখানে আসা যায়। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ চিত্তবিনোদনের জন্য বা পিকনিক করার জন্য এখানে আসে। দেশি পর্যটকদের ভিড় লক্ষ করা যায় শীত মৌসুমে। এ ছাড়া বছরের সব সময়ই পর্যটকরা আসেন। দিনাজপুর হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা স্টাডি ট্যুরে আসে এখানে। ভ্রমণপিপাসুদের থাকার জন্য রয়েছে একটি ছোট পরিসরে রেস্ট হাউজ, যদিও এখনো সেটি আধুনিকতার ছোঁয়াবঞ্চিত। পিকনিক স্পট রয়েছে দুটি। বিভিন্ন স্থান থেকে বহু মানুষ পিকনিক করার জন্য ছুটে আসেন। বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১৮৮৫ সালে বনটি অধিভুক্ত করা হয় এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে বন বিভাগের অধীন বলে গেজেট প্রকাশ হয়। ২০১০ সালে বীরগঞ্জের ভোগনগর ইউনিয়নের ৮৫৫.৫০ একর ভূমির ওপর অবস্থিত এই বনের ৭৫৫.৫০ একর জমিকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করেছে বন বিভাগ। সিংড়া মৌজার নামানুসারে বনটির নামকরণ করা হয়েছে সিংড়া ফরেস্ট। এই গহীন অরণ্য ধীরে ধীরে লোকালয়ে পরিণত হতে থাকলে গাছ চুরি বাড়তে থাকে এবং সংরক্ষণের অভাবে গাছগাছালি কমতে থাকে। তবে বন বিভাগ নতুন করে এর জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। জানা গেছে, এ বনকে বিশেষভাবে আকর্ষণীয় করে তুলেছে এর মধ্য দিয়ে বয়ে চলা নর্ত নদী। যদিও নদীটি মরা খাল ছাড়া আর কিছু নয়। তবে নদীটি খনন করে নদীর মাঝামাঝি একটি সেতু তৈরি করলে এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাশাপাশি পর্যটকদের আরো দৃষ্টি কাড়বে। প্রয়োজনের তুলনায় বন বিভাগের লোকবল একেবারেই কম। এ বিষয়ে বন বিভাগের বন বিট কর্মকর্তা মো. হারুনুর রশিদ জানান, সিংড়া ফরেস্টকে আরো গহীন অরণ্যে পরিণত করতে ২০১৭ সালের জুন থেকে ৯০ হাজার গাছ লাগানোর পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে ২০ হাজার গাছ লাগানো হয়েছে। এ ছাড়া বনের চারপাশে আদিবাসীদের নিয়ে ৯টি বন রক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে রাবার ড্যামের মাধ্যমে বারো মাস নর্ত নদীকে সজীব রাখা, একটি টাওয়ার স্থাপন, শিশুপার্ক তৈরি, দর্শনার্থীর বসার চেয়ার তৈরি ও সুন্দর একটি ফটক নির্মাণসহ কিছু সংস্কারমূলক কাজ শুরু হলেই এখানে দর্শনার্থীর সংখ্যা তিন থেকে চারগুণ বৃদ্ধি পাবে।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১