কারাবন্দি সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি, নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পাহাড়সম মামলাসহ নানা ইস্যুতে দিশাহারা বিএনপি। এরই মধ্যে চলছে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি। কারা চূড়ান্ত প্রার্থী হবেন, তা প্রায় গুছিয়ে এনেছে দলটি। মাঝেমধ্যে চলছে ঘষামাজা। এমনটাই জানিয়েছেন দলটির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারা। তারা বলেন, সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে ৭ দফা দাবি পেশ করা হয়েছে। দাবি আদায়ের জন্য আজ সিলেটে ফ্রন্টের পক্ষ থেকে সমাবেশ রয়েছে। এরপর চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতে সমাবেশ করবেন তারা।

এদিকে দলের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের নেতারা নির্বাচন নিয়ে এমনটা জানালেও তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা রয়েছেন চিন্তিত। বাংলাদেশের খবরের সঙ্গে আলাপকালে তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে যেভাবে মামলা দেওয়া হচ্ছে তাতে নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে এজেন্ট দেওয়া দুষ্কর হয়ে পড়বে। কারো কারো প্রশ্ন, এভাবে নির্বাচনে গিয়ে বিএনপির কী লাভ হবে? নির্বাচনে অংশ নিয়ে ফল কতটা ঘরে তোলা যাবে? এ নিয়ে তারা রয়েছেন উদ্বেগের মধ্যে।

বিএনপির নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বিএনপি একটি বড় রাজনৈতিক দল। বড় রাজনৈতিক দল হিসেবে আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দলটির প্রস্তুতি রয়েছে। প্রার্থী তালিকাও চূড়ান্ত করার কাজ চলছে।

তৃণমূল নেতাকর্মীদের উদ্বেগের বিষয়ে বিএনপির এই নীতিনির্ধারক বলেন, তাদের এই উদ্বেগ থাকবে না। শিগগিরই পরিস্থিতি পাল্টাবে। তখন তৃণমূল নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে সবাই একযোগে ঝাঁপিয়ে পড়ব নির্বাচনে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দফতরসংশ্লিষ্ট এক নেতা বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বিএনপির ৩০০ আসনের প্রার্থী তালিকা প্রায় চূড়ান্ত। লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বিভিন্ন সময়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। সে মোতাবেক প্রার্থী তালিকায় ঘষামাজা চলছে। সময় হলে প্রার্থী তালিকা সবাই জানতে পারবেন।

বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বাংলাদেশের খবরকে বলেন, তাদের সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারে আছেন। সম্প্রতি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বড় উৎসব দুর্গাপূজায় মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় নিজেদের সুবিধামতো সময়ে ঘুরে এসেছেন। যারা পারেননি তারা ফোনে ফোনে যোগাযোগ রক্ষা করেছেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এত ব্যস্ততার মধ্যেও নিজ নির্বাচনী এলাকা ঠাকুরগাঁওয়ে ঘুরে এসেছেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক সাংগঠনিক সম্পাদক বাংলাদেশের খবরকে বলেন, দলের নেতাদের সমন্বয়ে একাধিক কমিটি রয়েছে। কমিটির প্রধানরা নিজ নিজ কমিটির নেতাদের নিয়ে তাদের মধ্যে বণ্টনকৃত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। লন্ডনে অবস্থানরত ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বিভিন্ন সময়ে এসব কমিটির নেতাদের নানা নির্দেশনা দিচ্ছেন। এমন দুই-তিনটি কমিটি রয়েছে নির্বাচনসংশ্লিষ্ট। কেউ মনোনয়নের বিষয় দেখছেন, কেউ ইশতেহারের বিষয় দেখছেন। এভাবে যে যার কাজ করে যাচ্ছেন। এছাড়া ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এসব কমিটি ভোটের সময়ে ভোটকেন্দ্রে তাদের দায়িত্ব পালন করবে।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট রয়েছে। এর বাইরে গত ১৩ অক্টোবর বিএনপি, গণফোরাম, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্যের সমন্বয়ে গঠিত হয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ঐক্যফ্রন্টের সঙ্গে বিএনপির জাতীয় সংসদের আসন ভাগাভাগি হবে কি না জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট নির্বাচনী জোট। আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট হলো সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি আদায়ের ফ্রন্ট। ফ্রন্টের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে যাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। তাই বিএনপি ২০-দলীয় জোটকে নিয়েই নির্বাচনে অংশ নেবে। সেভাবেই বিএনপি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির নির্বাহী কমিটির সম্পাদক ও চাঁদপুর জেলা বিএনপির এক নেতা বাংলাদেশের খবরকে বলেন, জেলা পর্যায়ের সাংগঠনিক ইউনিট থানা, পৌর, উপজেলা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার হিড়িক পড়েছে। নেতাকর্মীরা নিজ ঘরে থাকতে না পেরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এ অবস্থায় কীভাবে তারা নির্বাচন করবেন? কোন প্রক্রিয়ায় নির্বাচনী কাজে সম্পৃক্ত হবেন। আগে তো তাদের এলাকায় থাকতে হবে। তৃণমূলের বেশিরভাগ নেতাকর্মী ঢাকায় স্বজনদের ঘরবাড়িতে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। কেউ কেউ হাইকোর্ট থেকে জামিন নিতে চেষ্টা করছেন।