বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ২৪ October ২০১৮

আসছে নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনে মেগা প্রকল্প

বাংলাদেশে ভূমি ব্যবহার করে সৌর ও বায়ু থেকে আরো ৩ হাজার ৬৬৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে বলে ধারণা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক সংগৃহীত ছবি


সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় ২০১৫ সালের মধ্যে জাতীয় গ্রিডের অন্তত ৫ শতাংশ বিদ্যুৎ নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা ছিল। ২০২০ সালের মধ্যে এ হার ১০ শতাংশে উন্নীত করার কথা থাকলেও এ পর্যন্ত নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে আসছে মাত্র দেড় শতাংশ বিদ্যুৎ। ১৯৬০ সালে স্থাপন করা কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ২৩০ মেগাওয়াট বাদ দিলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে জাতীয় গ্রিডে যোগ হচ্ছে দেড়শ মেগাওয়াটের কম। এ অবস্থায় প্রাকৃতিক গ্যাস ও তরল জ্বালানিতে নির্ভরতা কমাতে ৩ হাজার ৪০০ কোটি টাকা ব্যয়ের বড় প্রকল্প নিচ্ছে সরকার। প্রকল্পের আওতায় ফেনীর উন্মুক্ত স্থানে সৌরপ্যানেল ও বায়ু থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা হবে। রাজধানীর বিভিন্ন বহুতল ভবনে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদন করা হবে সৌরনির্ভর বিদ্যুৎ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, প্রস্তাবিত প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিদেশি সহায়তা খুঁজতে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) চিঠি পাঠানো হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কিছু দাতা সংস্থার কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছে ইআরডি। ৪১ কোটি ৩৭ লাখ ডলারের প্রকল্পে ১৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার সহায়তা দিতে সম্মত হয়েছে বিশ্বব্যাংক। এতে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় হবে ১ কোটি ৬৫ লাখ ডলার। অবশিষ্ট অর্থ বিভিন্ন সংস্থার ঋণ, অনুদান এবং ব্যক্তি খাতের বিনিয়োগ হিসেবে পাওয়া যাবে।

প্রকল্পটিতে অর্থায়নের লক্ষ্য সামনে রেখে সম্প্রতি একটি অবস্থাপনপত্র তৈরি করেছে বিশ্বব্যাংক। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ যোগ করার পরিমাণ হতাশাজনক। তবে গ্রিড এলাকার বাইরে সৌরবিদ্যুৎ ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক সহায়তায় সরকারের প্রতিষ্ঠান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড (ইডকল) ইতোমধ্যে দেশের ৪০ লাখ পরিবারে সৌরপ্যানেলের মাধ্যমে বিদ্যুতের ব্যবস্থা করেছে বলে জানানো হয়েছে। এর ফলে দেশের ৫ দশমিক ৮০ শতাংশ পরিবার আলোর উৎস হিসেবে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে বলে জানিয়েছে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)।

বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ২০০৯ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশে বিদ্যুতের উৎপাদন ৪ হাজার মেগাওয়াট থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৪০০ মেগাওয়াটে। এ সময়ে বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ পাওয়া মানুষের সংখ্যা ৫০ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০ শতাংশে। এরপরও অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে মাথাপিছু বিদ্যুৎ ব্যবহারের পরিমাণ খুবই কম।

দেশে উৎপাদিত মোট বিদ্যুতের ৬৬ শতাংশ আসছে প্রাকৃতিক গ্যাস থেকে। নতুন আবিষ্কার না হলে ২০২০ সালের মধ্যে দেশের গ্যাসের মজুত শেষ হয়ে যাবে। এ অবস্থায় তরল জ্বালানি থেকে বিদ্যুতের উৎপাদন ৯ বছরে ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২২ শতাংশে উন্নীত করা হয়েছে। আর নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে আসছে মাত্র ৪৬১ মেগাওয়াট। মোট উৎপাদনের তুলনায় এ খাত থেকে আসছে প্রায় দেড় শতাংশ। অবশ্য একক খাত হিসেবে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকেই আসছে ২৩০ মেগাওয়াট। এর বাইরে ১৭৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে গ্রিডলাইনের বাইরের এলাকা থেকে। এর বাইরে দুটি সোলার ফটোভোল্ট থেকে ৩১ মেগাওয়াট ও নগর অঞ্চলে বিভিন্ন ছাদ থেকে আসছে আরো ১৫ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ। বাকি ১০ মেগাওয়াট আসছে বায়োগ্যাস থেকে।

বাংলাদেশে ভূমি ব্যবহার করে সৌর ও বায়ু থেকে আরো ৩ হাজার ৬৬৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে বলে ধারণা দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। আর বহুতল ভবনের ছাদ থেকে পাওয়া যেতে পারে ২ হাজার ৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। সব মিলে আরো ৬ হাজার ২৬৬ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বায়ু ও সৌরশক্তি থেকে উৎপাদনের তাগিদ দেওয়া হয়েছে প্রতিবেদনটিতে।

প্রস্তাবিত প্রকল্পটির আওতায় ফেনীর সোনাগাজীর সৌরপার্কে পরীক্ষামূলকভাবে ৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হবে। এ কাজে ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ (ইজিসিবি) মোট ৮ কোটি ৯৯ লাখ ডলার ব্যয় করবে। এতে বিশ্বব্যাংকের তহবিল থেকে ব্যয় হবে ৭ কোটি ৪২ লাখ ডলার। ইতোমধ্যেই অধিগ্রহণ করা ১ হাজার একর জমির মধ্যে এ কাজে ব্যয় হবে ১৭০ একর। পুরো জমিতে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে বিশ্বব্যাংক।


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১