আপডেট : ১৭ October ২০১৮
আন্তর্জাতিক বাজারের অজুহাতে কোনো ঘোষণা ছাড়াই গত সেপ্টেম্বরে হঠাৎ সিলিন্ডার গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে দেশি কোম্পানিগুলো। এতে দারুণ বিপাকে পড়েছেন লিকুফাইড পেট্রোলিয়াম গ্যাসের (এলপিজি) ব্যবহারকারীরা। বর্তমানে প্রতি সাড়ে ১২ কেজির একটি গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত ২০০ টাকা। বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি অক্টোবরের শুরু থেকে কার্যকর হয়েছে নতুন এ দর। এতে প্রতিটি সাড়ে ১২ কেজির গ্যাস সিলিন্ডারের দাম পড়ছে কোম্পানিভেদে ১২০০ থেকে ১২৫০ টাকা, যা গত মাসে ছিল ১০৫০ থেকে ১১০০ টাকা। একইভাবে ৩৫ কেজি ওজনের সিলিন্ডারের দাম ছিল সর্বোচ্চ ২৮০০ টাকা। কোনো কোনো কোম্পানি এর চেয়ে কম দামেও বড় গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করেছিল। কিন্তু সেই সিলিন্ডার এখন উঠেছে ৩৩০০ টাকা পর্যন্ত। গ্যাসের দাম হঠাৎ এমন বেড়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে গতকাল রামপুরা এলাকার নাসরিন আরা বলেন, যে বাসায় আছি সেখানে পাইপলাইনে গ্যাস সংযোগ নেই। তাই সিলিন্ডারে নির্ভরশীল। কিন্তু এভাবে যখন-তখন সিলিন্ডার গ্যাসের দাম বাড়ানো কাম্য নয়। বাড়তি এই ২০০ টাকার জন্য আমার হিসাবের সংসারে অতিরিক্ত চাপ পড়বে। তিনি মনে করেন, সরকার এ বিষয়গুলো নিয়ে উদাসীন বলেই কোম্পানিগুলো এভাবে অযৌক্তিক দাম বাড়ানোর সাহস পায়। এদিকে রাজধানীর কয়েকজন এলপি গ্যাস ডিলারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কাঁচামালের দাম বাড়লে সঙ্গে সঙ্গেই যে সিলিন্ডারের দাম বাড়ানো হয় এটি এক ধরনের ফাঁকি। কারণ এলপি গ্যাসের কাঁচামালের দাম প্রতি মাসের ১ তারিখে ঘোষণা করা হয়। তখন দেশেও এর দাম বাড়ানো হয়। কিন্তু সেই দামের কাঁচামাল দেশে এনে সিলিন্ডারজাত করে যখন গ্রাহককে দেওয়া হবে, তখনই তার দাম বেশি নেওয়া উচিত। দেশের বাজারে জি-গ্যাস ব্র্যান্ডের এলপি গ্যাস বিপণন করছে এনার্জিপ্যাক। এনার্জিপ্যাকের (জি-গ্যাস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়ুন রশিদ বলেন, গ্যাসের দাম বাড়ার প্রধান কারণ বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়া। এরপর আগে দেশে ৭৯ টাকা ডলারের বিনিময় হার থাকলেও এখন সেটা ৮৩ টাকা পেরিয়ে গেছে। সঙ্গে বেড়েছে গ্যাস আনার পরিবহন খরচও। তিনি আরো বলেন, এছাড়া ইস্পাতের মূল্যবৃদ্ধিতে সিলিন্ডারের উৎপাদন খরচও অনেক বেড়েছে। এরপরও এতদিন এ খাতে উদ্যোক্তারা লোকসান দিয়ে প্রতিযোগিতা করেছে ব্যবসা সম্প্রসারণে। কিন্তু সেটা আর সম্ভব হচ্ছে না। সবাই বাধ্য হয়ে দাম বাড়িয়ে লোকসান কাটিয়ে উঠতে চাচ্ছে। তারপরও প্রতিযোগিতার কারণে এসব ঊর্ধ্বগতির সমান্তরালে গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়নি। খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, দেশে কয়েক বছর ধরে বাসাবাড়িতে গ্যাসের নতুন সংযোগ বন্ধ। নতুন কোনো সিএনজি স্টেশনেরও অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না। শিল্পেও গ্যাসের সংযোগ রয়েছে সীমিত পর্যায়ে। এতে প্রতিবছর বাড়ছে দেশের এলপিজির চাহিদা। বর্তমানে দেশে এলপিজির মোট চাহিদা রয়েছে ৩০ লাখ টন। এর বিপরীতে সরবরাহ ক্ষমতা সর্বোচ্চ ৭ লাখ টন। এই বাড়তি চাহিদার সুযোগ নিয়েই দেশি কোম্পানিগুলো মনমতো গ্যাসের দাম বাড়িয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ ভোক্তাদের। এ এলপি গ্যাস শুধু আবাসিকেই নয়, খাবার হোটেল, যানবাহন, ক্ষুদ্র শিল্পসহ বহু খাতে ব্যবহার হয়। যানবাহনেও সিএনজির পাশাপাশি এলপিজি ব্যবহার শুরু হয়েছে অনেক এলাকায়। ফলে এলপিজির দাম বৃদ্ধি প্রভাব ফেলে অন্যান্য পণ্যের দামে। এ বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, হঠাৎ অস্বাভাবিক মাত্রায় এমন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়লে চরম বিপদে পড়েন ভোক্তারা। সরকারের এ বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটরিং করা উচিত। আর সেটা যৌক্তিক হলে ভোক্তা স্বার্থে অন্যান্য দেশের মতো এলপিজি খাতে ভর্তুকি দেওয়া প্রয়োজন। ভর্তুকি দেওয়ার কারণে আমাদের পাশের দেশগুলোতে গ্যাসের দাম অনেক কম। এদিকে বেসরকারির পাশাপাশি এলপিজির চাহিদার মাত্র ৮ শতাংশ জোগান দেয় বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) সহযোগী প্রতিষ্ঠান এলপি গ্যাস লিমিটেড। সরকারি এ প্রতিষ্ঠান সাড়ে ১২ কেজি ওজনের এলপি গ্যাসের প্রতিটি সিলিন্ডার এখনো ৭০০ টাকায় বিক্রি করছে। কিন্তু ২০০৯ সাল থেকে এ দামেই এলপি গ্যাস বিক্রি হলেও বাজারে সর্বত্র এ গ্যাস মেলে না এমন অভিযোগ বহুদিনের। চাহিদার অবশিষ্ট ৯২ শতাংশই জোগান দেয় বেসরকারি প্রায় ২০টি প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) কাছ থেকে লাইসেন্স নেওয়া। তবে তারা গ্যাসের দাম নির্ধারণ করেন নিজেদের মনমতো। দেশে তাদের দরদাম নিয়ন্ত্রণ ও তদারক করার মতো কোনো নীতিমালা নেই। কয়েক মাস আগে একটি নীতিমালা করার উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা এখনো আলোর মুখ দেখেনি।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১