আপডেট : ১৭ October ২০১৮
১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে মাথাপিছু আয় ছিল ১২৯ মার্কিন ডলার। ৪৫ বছরে তা ১২ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে এক হাজার ৭৫১ মার্কিন ডলারে। বিশ্বব্যাংকের নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি পাওয়ার পাশাপাশি উন্নয়নশীল দেশের কাতারে যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশ। তবে এখনো দারিদ্র্যসীমার নিচে দেশের তিন কোটি ৯১ লাখ মানুষ। এ কঠিন বাস্তবতায় আজ বুধবার সারা বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশে পালন করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক দারিদ্র্য বিমোচন দিবস। সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে ১৯৭৪ সালে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল সাড়ে ৮২ শতাংশ। সংস্থার সর্বশেষ খানা আয়-ব্যয় জরিপ অনুযায়ী, দেশে দারিদ্র্যের হার নেমে এসেছে ২৪ দশমিক ৩০ শতাংশে। বর্তমান জনসংখ্যা ১৬ কোটি দেশে দারিদ্র্যসীমার নিচে ১০ লাখের মধ্যে দরিদ্রের সংখ্যা তিন কোটি ৯১ লাখ। ৪৫ বছরে দারিদ্র্য হার ৫৮ শতাংশীয় পয়েন্ট কমলেও গরিব মানুষের সংখ্যা কমেছে মাত্র দুই কোটি ৩৯ লাখ। দারিদ্র্যের হার কমিয়ে আনা কঠিন হবে আশঙ্কা করে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, অর্থনৈতিক উন্নতির সুবাদে দেশের আর্থসামাজিক খাতে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। মানুষের জীবনযাত্রার মানও বেড়েছে। এর ধারাবাহিকতায় দারিদ্র্য কমে এলেও কিছু অঞ্চলে দারিদ্র্য রয়ে গেছে। ২০ শতাংশের কাছাকাছি নেমে এলে দারিদ্র্যের হার কমানো যেকোনো দেশের জন্য কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। অবশ্য আঞ্চলিক দারিদ্র্য নিরসনে অবকাঠামো খাতে বর্তমান সরকার ব্যাপক গুরুত্ব দিচ্ছে বলেও তিনি জানান। পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, ১৯৯০ সালে থেকেই মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশের ঘর ছাড়িয়ে সাড়ে ৪ শতাংশে উন্নীত হয়। গত অর্থবছর ৭ দশমিক ৮৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়। গত ১০ বছরের গড় প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৬ শতাংশের বেশি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক ড. একেএম নুরুন্নবী বাংলাদেশর খবরকে বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব। জন্মনিয়ন্ত্রণ, বাল্যবিয়ে ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ে সচেতনতা না থাকায় দরিদ্র পরিবারে দ্রুতই নতুন নতুন মুখ আসছে। এর ফলে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমছে না। দারিদ্র্য বিমোচনের গতি কমে আসার চিত্র লক্ষ করা যায় বিবিএসের এক হিসাবে। সংস্থাটির হিসাব বলছে, ২০১০ সালে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল সাড়ে ৩১ শতাংশ। পরবর্তী ছয় বছরে দারিদ্র্যের হার কমেছে ৭ দশমিক ২০ শতাংশ। এ হিসাবে দারিদ্র্য বিমোচনের বার্ষিক হার ১ দশমিক ৭০ শতাংশ থেকে ১ দশমিক ২০ শতাংশে নেমেছে। এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, আয় বৃদ্ধির সঙ্গে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমে না আসার মূল কারণ বৈষম্য। দুই বছরে ৪০ লাখের বেশি মানুষ শ্রমবাজারে এলেও কর্মসংস্থান হয়েছে মাত্র ১৪ লাখ। কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে না পারলে দারিদ্র্য কমানো সম্ভব হবে না। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক মোস্তফা কে মুজেরী বলেন, দারিদ্র্যের হার যত কমে আসবে, দারিদ্র্য বিমোচন ততই কঠিন হয়ে যাবে। ৫০ শতাংশ থেকে দারিদ্র্যের হার ৩০ শতাংশে নামিয়ে আনা কিছুটা সহজ। ৩০ থেকে নিচের দিকে দারিদ্র্যের হার কমানো কঠিন। সূত্র জানায়, ১৯৮৭ সাল থেকে প্রতিবছর দারিদ্র্য বিমোচন দিবস পালন করে আসছে জাতিসংঘ। এ বিষয়ে সফলতম দেশগুলোতে এর মূল অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। ২০১৬ সালের অক্টোবরে দারিদ্র্য বিমোচন দিবসের মূল অনুষ্ঠান ছিল বাংলাদেশে। ওই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বাংলাদেশ সফর করেন।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১