আপডেট : ১৪ October ২০১৮
এখন আর বিয়েতে কষ্ট করে কেউ কন্যার হাত রাঙানোর জন্য মেহেদি বাটে না। হাতের কাছেই আছে বিভিন্ন কোম্পানির কৃত্রিম মেহেদির টিউব। কিন্তু তাই বলে কি বাটা মেহেদির কদর শেষ? না, তা নয়। এখনো বিভিন্ন বয়সী নারী এমনকি পুরুষদের কাছেও বাটা মেহেদির কদর আছে। হাত আর পা রাঙানোর পাশাপাশি মেহেদি এখন ব্যবহার হচ্ছে মাথায় ও দাড়িতে অনেকটা ওষুধের মতো। কারো চুলে পাক ধরেছে তো মেহেদি লাগিয়ে মাথার চুলটা রাঙিয়ে নেন। মাথার খুশকি দূর করতে, নানা চাপে মাথা গরম হয়ে গেলে মাথাটা ঠান্ডা করতেও এটি ব্যবহার করেন অনেকে। তবে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের দুই ঈদে মেহেদির চাহিদা থাকে খুব বেশি। মেহেদি গাছের ফুল থেকে সুগন্ধি তেলও তৈরি হয়। রঙের জন্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এখন এই গাছের চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান ছাড়াও মিসর, সুদান, ইরান ও অস্ট্রেলিয়ায় মেহেদি চাষ হয়। গুল্মজাতীয়, শাখা-প্রশাখাযুক্ত চিরসবুজ এই গাছটি ৮ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। শীতকালে এর শাখা-প্রশাখার শীর্ষভাগে সাদা কিংবা হালকা গোলাপি রঙের থোকা থোকা অসংখ্য ফুল ফোটে। ক্রমবর্ধমান চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে সিরাজদিখান উপজেলার বালুচর ইউনিয়নের চান্দের এলাকায় দিন দিন মেহেদি চাষের কদর বেড়ে চলেছে। এখানকার গ্রামগুলোতে অন্যান্য শাকসবজি ও ফসলের মতোই সারা বছর বাড়ির আশপাশে বিস্তৃত পরিসর নিয়ে চাষ হচ্ছে মেহেদি। প্রতি বিঘা জমিতে উৎপাদিত মেহেদির গড় বিক্রয়মূল্য দাঁড়ায় ১৫ থেকে ১৮ হাজার টাকা। আর এক বিঘা জমির মেহেদি বছরে ৬ বার বিক্রি করা যায় খুব সহজেই। জমির মালিকরা বিভিন্ন চুক্তিতে মেহেদি চাষের জন্য ভাড়া দেন ক্ষুদ্র চাষিদের কাছে। মেহেদি গাছ বড় হলে বর্ষায় পানিতে কোনো ক্ষতি হয় না। তবে খরা মৌসুমে পানি দিতে হয়। শীত মৌসুমে মেহেদি তেমন বাড়ে না বলে কিছুটা সঙ্কটে পড়তে হয় ব্যবহারকারীদের। অনেকে এখানকার মেহেদি চাষিদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে ঢাকায় বিক্রি করেন। আবার কিছু মৌসুমি ব্যবসায়ী আছেন যারা শুধু ঈদে ব্যবসা করেন। ব্যস্ত মৌসুমে এ ব্যবসায় হাত লাগায় পরিবারের নারী, পুরুষ এমনকি স্কুলপড়ুয়া শিশুরাও। বালুচর ইউনিয়নের চান্দের চর গ্রামের মেহেদি চাষি মো. সেলিম মিয়া জানান, মেহেদি চাষে তেমন লোকসানের আশঙ্কা নেই। কারণ জমিতে একবার মেহেদির চারা রোপণ করার পর প্রয়োজনীয় পরিচর্যা করলে মেহেদি গাছ বেঁচে থাকে যুগের পর যুগ। চাষি মো. হানিফ জানান, যেকোনো জমিতে হাল দিয়ে মেহেদি চাষের উপযুক্ত করে মেহেদি চাষ করলে মাত্র দেড় মাসের মধ্যে তা কেটে বিক্রি করা যায়। মেহেদি ব্যবসায়ী আ. বারেক জানান, আমরা একসময় মাথায় করে মেহেদির আঁটি নিয়ে পুরান ঢাকার অলিগলিতে খুচরা ফেরি করে বিক্রি করতাম। তবে এখন আর সেভাবে বিক্রি করতে হয় না। এখন ঢাকার বাসাবো, খিলগাঁও, শান্তিনগর, মুগদা, মৌলভীবাজার, নয়াবাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় থাকা মেহেদির দোকানে আমরা পাইকারি দামে বিক্রি করি। আমরা প্রতি আঁটি পাইকারি দরে বিক্রি করি ৫ টাকায়, আর দোকানদার তা বিক্রি করে ১০ টাকায়। এক বোঝা মেহেদি বিক্রি করতে গেলে গাড়ি ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক খরচ হয় প্রায় ৮০০ টাকা, আর বিক্রি করা যায় ৪ হাজার টাকা। সিরাজদিখান উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুবোধ চন্দ্র রায় জানান, এখানকার বালুচর ইউনিয়নের চান্দের চরে প্রায় ১০০টি পরিবার মেহেদি চাষের সঙ্গে জড়িত। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে মেহেদি চাষিদের কোনো সরকারি অনুদান দেওয়া না হলেও মেহেদি চাষ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে উঠান বৈঠক করে চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হয়।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১