আপডেট : ০৬ October ২০১৮
বাজারে ইলিশ আর ইলিশ! ভ্রাম্যমাণ ইলিশ বিক্রেতার হাঁকডাকে সরগরম রাজধানীর অলিগলিও। গতকাল জুমার দিনে অনেক মসজিদের পাশেও বসেছিল ইলিশের বাজার। দাম আরো কমে আসায় ক্রেতারাও ব্যাকুল ইলিশের স্বাদ পেতে। সব মিলিয়ে এ যেন ইলিশের দেশে উৎসবের আমেজ। গতকাল বাজার ঘুরে দেখা যায়, আহরণ-বিপণন নিষেধাজ্ঞার আগে সরবরাহ বাড়ায় আরো কমেছে ইলিশের দাম। এখন যে দামে ইলিশ মিলছে, সেগুলোর দাম এ বছরের সর্বনিম্ন। এ কেনাবেচার পসরা শেষ হবে আজ। কারণ কাল ৭ অক্টোবর থেকে ইলিশ ধরার ওপর আসছে নিষেধাজ্ঞা, যা চলবে পরবর্তী ২২ দিন। এ সময় শুধু ইলিশ ধরা নয়, পরিবহন, মজুত-বিক্রিও বন্ধ থাকবে। গতকাল ধানমন্ডির ৭ নম্বর রোডে বাইতুল আমান মসজিদের জুমার নামাজের পর সেখানে সাতজন ভ্রাম্যমাণ ইলিশ বিক্রেতার দেখা মেলে। তারা যেন ছোটখাটো হাট বসিয়েছে সেখানে। মুসল্লিরাও কেউ দেখছেন, আবার কেউ কিনছেন। যারা কিনছেন তাদের অনেকের ফ্রিজে জায়গা নেই- এমনটা বলেন প্রতিবেদককে। তারপরও আগামী বেশ কিছুদিন আর ইলিশ মিলবে না, তাই বেশি বেশি কিনছেন। জাহির হাসনাইন নামে এক ক্রেতা বলেন, সকালেও যাত্রাবাড়ী গিয়েছিলাম ইলিশ কিনতে। সে বাজার থেকে এখানে দাম একটু বেশি। তবে ওখানে শুধু বড় মাছ কিনেছি। এখানে আবার ছোট মাছ দেখে কিনতে ইচ্ছে হলো। এখন মনে হচ্ছে মাছ কেনা একটা নেশা। এসব ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতার কাছে দামও সাধারণ পাড়া-মহল্লার বাজারের থেকে কিছুটা কম। তবে প্রশ্ন থাকে মান নিয়ে। গতকাল ঝুড়িতে কয়েকটি ইলিশ দেখিয়ে বিক্রেতা সফিকুল বললেন, এর প্রতিটির ওজন এক কেজির বেশি। প্রতি হালির দাম ২ হাজার ৮০০ টাকা। তবে আড়াই হাজার পর্যন্ত পেলে বিক্রি করে দেবেন। তার দাবি, কোনো বাড়তি খরচ না থাকায় ২শ’ টাকা হালিপ্রতি লাভ করবেন তিনি। ওই দামে বাজারে ইলিশ মিলবে না। এদিকে গতকাল রাজধানীর মাছের পাইকারি বাজার কারওয়ান বাজার ও যাত্রাবাড়ীতে প্রায় দিনভর ইলিশ কেনাবেচা চলেছে। স্বাভাবিক দিনে সকাল ৮-৯টার পর এসব বাজারে কেনাবেচা শেষ হয়। দুপুরে কারওয়ান বাজারে গিয়েও প্রায় অর্ধশত আড়তে মাছ বেচাকেনা দেখা গেছে। এসব আড়তে পাইকারির পাশাপাশি খুচরাও মিলছে ইলিশ। ওই বাজারে বরিশাল থেকে কিছু ইলিশ এনে বিক্রি করছেন মোনা মিয়া। তার কাছে এক কেজির কিছুটা কম ওজনের ইলিশের দাম প্রতিপিস ৬০০ টাকা। আর মাঝারি আকারের মাছ বিক্রি করছেন ৪০০ টাকা কেজি দরে। এদিকে খাদ্য হিসেবে শুধু নয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং ধর্মীয়ভাবেও বাংলাদেশের মানুষের কাছে ইলিশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। গতকালও তাই ইলিশ কিনতে দেখা গেছে অনেককে। কারণ হিন্দু সম্প্রদায়ের আসন্ন বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব দুর্গা পূজাতে বন্ধ থাকবে ইলিশের সরবরাহ। এ কারণে অনেকে আগেভাগে কিনছেন মাছটি। গতকাল রামপুরা বাজারে কথা হয় এমন এক ক্রেতা বিধান চন্দ্রের সঙ্গে। তিনি বলেন, পুজোর সময় ইলিশ তো লাগবেই। কিন্তু সেই সময় বাজারে ইলিশ বিক্রি বন্ধ থাকবে। তাই আগেভাগে কিনে রাখছি। এদিকে সরবরাহের তুলনায় ক্রেতা কম- এমন দাবি করে কারওয়ান বাজার মৎস্য আড়ত ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি কামাল হোসেন বলেন, যত মাছ আসছে সেই তুলনায় ক্রেতা কম। তিনি বলেন, কারওয়ান বাজারে চার শতাধিক আড়ত আছে। এর মধ্যে স্বাভাবিক সময়ে নিয়মিত ইলিশের কেনাবেচা হয় ৬০টির মতো আড়তে। এখন হচ্ছে শতাধিক আড়তে। এসব আড়তে প্রচুর মাছ আসছে প্রতিদিন। এদিকে মৎস্য অধিদফতর বলছে, এ বছর চকচকে রুপালি এই মাছের আহরণের পরিমাণ পাঁচ লাখ টন ছাড়িয়ে যেতে পারে, যার আর্থিক মূল্য হবে ৫০ থেকে ৬০ হাজার কোটি টাকা। গত বছর থেকে দেশে ধরা পড়া ইলিশের পরিমাণ, আয়তন ও ওজন বেড়েছে। ফলে ইলিশের দামও গত এক বছরে কেজিতে ১০০ থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। একসময় যে ইলিশ হয়ে গিয়েছিল উচ্চ মধ্যবিত্ত ও ধনীদের আহার, তা গত বছর থেকে মধ্যবিত্তের ক্রয়সীমায় চলে আসে। ২০১৫ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ইলিশের উৎপাদন ১ লাখ টন বেড়ে ৪ লাখ ৯৭ হাজার টনে দাঁড়ায়।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১