বাংলাদেশের খবর

আপডেট : ০৬ October ২০১৮

ইসলামী আন্দোলনের মহাসমাবেশ

সংসদ ভেঙে নিরপেক্ষ সরকার গঠনের দাবি

রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গতকাল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসমাবেশে বক্তব্য দেন দলটির আমির ও চরমোনাইয়ের পীর সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম ছবি -বাংলাদেশের খবর


নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে জাতীয় সংসদ ভেঙে দিয়ে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নিয়ে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠনসহ ১০ দফা দাবি জানিয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দীতে আয়োজিত জাতীয় মহাসমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে এই দাবি জানান সংগঠনের আমির ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম।

দুর্নীতি, দুঃশাসন, সন্ত্রাস ও মাদকমুক্ত কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে এ মহাসমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

এদিকে, সাম্প্রতিককালে রাজধানীতে অনুষ্ঠিত অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সমাবেশের তুলনায় এই সমাবেশে লোকসমাগম ছিল তুলনামূলক বেশি। মহাসমাবেশ বাদ জুমা হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই নেতাকর্মীরা হাতপাখা প্রতীক নিয়ে মিছিলসহকারে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হতে থাকে। বাদ জুমা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান জনসমুদ্রে পরিণত হয়। এক পর্যায়ে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা নেতাকর্মীদের উপস্থিতি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাড়িয়ে কাকরাইল মসজিদ, মৎস্য ভবন, জাতীয় প্রেস ক্লাব, দোয়েল চত্বর থেকে শাহবাগ মোড় পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে। ফলে এসব এলাকায় বেশ কয়েক ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে আশপাশের এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। মহাসমাবেশকে ঘিরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

বর্তমান জাতীয় সংসদ বহাল রেখে কোনো নির্বাচন দেশবাসী মেনে নেবে না বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, বর্তমান সরকার নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ফেলেছে। গত ১০ বছরে দেশে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। নির্বাচন কমিশন এবং প্রশাসন কেউই নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করছে না। আগামীতে মানুষ আর নির্বাচনের নামে তামাশা ও প্রহসন দেখতে চায় না। সংসদ ভেঙে দিয়ে ৯০ দিনের মধ্যে একটি দল নিরপেক্ষ নির্বাচনকালীন সরকারের অধীনে গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচন চায় দেশবাসী।

চরমোনাই পীর বলেন, দেশের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত। স্বাধীনতার পর মানুষ ভেবেছিল তারা শান্তিতে বসবাস করবে। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, এ পর্যন্ত যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারাই দুর্নীতিতে ডুবে গেছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে ইসলামকে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।

চরমোনাই পীর বলেন, অনেকেই বলে, ইসলাম ক্ষমতায় গেলে মানুষ শান্তি পাবে না। নারীরা ঘরের বাইরে বেরুতে পারবে না। আমরা স্পষ্ট করে বলছি, এ ধারণা ভুল। ইসলাম বিজয় হলে নারীরা আরো বেশি সম্মানিত হবে।

সবার অধিকার ফিরিয়ে দেওয়া হবে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, সংখ্যালঘু এবং পিছিয়ে পড়া ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অধিকার সুরক্ষা করব, স্বাধীন বিচারব্যবস্থা কায়েম করব এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করব। বাংলাদেশকে একটি উন্নত ও কল্যাণ রাষ্ট্রে পরিণত করব ইনশাআল্লাহ।

সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হলে এবারও ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়া হবে উল্লেখ করে ইসলামী আন্দোলনের আমীর বলেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য যদি সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হয় তাহলে আমরা ৩০০ আসনেই এককভাবে হাতপাখা প্রতীকে প্রার্থী দেব।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ১০ দফা দাবি হচ্ছে— তফসিল ঘোষণার আগে জাতীয় সংসদ ভেঙে দেওয়া, নিবন্ধিত সব রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন, বর্তমান নির্বাচন কমিশন বাতিল করে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন, তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করা পর্যন্ত সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন এবং নির্বাচনের দিন সশস্ত্র বাহিনীর হাতে বিচারিক ক্ষমতা প্রদান, নির্বাচনে সব দলের জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি করা, রেডিও-টেলিভিশনসহ সরকারি-বেসরকারি সব মিডিয়াকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেওয়া, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে সমস্ত হয়রানি বন্ধ করা, দুর্নীতিবাজদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা, ইভিএম ব্যবহার বন্ধ রাখা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সংহতি এবং জাতীয় সংসদ কার্যকর করার জন্য সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি প্রবর্তন করা। এ ছাড়া কোটা সংস্কার আন্দোলন এবং নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে গ্রেফতার সবাইকে মুক্তি দেওয়া এবং তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করা ও বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করা।

মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, এসব দাবি না মানলে আগামী ১২ অক্টোবর ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল, ১৪ অক্টোবর প্রতিটি জেলায় বিক্ষোভ মিছিল ও জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি প্র্রদান, ১৬ অক্টোবর রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি পেশ।

সমাবেশে বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলনের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রিন্সিপাল সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ মাদানী, মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম, আল্লামা নূরুল হুদা ফয়েজী, মহাসচিব প্রিন্সিপাল মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন প্রমুখ।

 


বাংলাদেশের খবর

Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.

বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com

অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com

ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১