আপডেট : ০৫ October ২০১৮
আগামী ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ কিংবা জানুয়ারির শুরুতে একাদশ সংসদ নির্বাচন হবে। এ ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতির সঙ্গে সঙ্গে রাজনীতিতেও চলছে নানা চড়াই-উতরাই। সবকিছু ছাপিয়ে চলছে দলে দলে নানা কৌশলী লড়াই। মাঠের সরব রাজনীতির পাশাপাশি পর্দার আড়ালে সক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলোর শীর্ষ নেতারা। তারা তৎপর নির্বাচনী বৈতরণী পার হওয়ার কর্মকৌশল প্রণয়নে। নিজেদের লাভের বিষয়টি মাথায় রেখে প্রতিটি দলই ব্যস্ত সময় পার করছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ভোটের আগে রাজনীতিতে নতুন মেরুকরণ শুরু হয়েছে। মধ্য অক্টোবরেই এই নতুন মেরুকরণ চূড়ান্ত রূপ নেবে। ড. কামাল হোসেন, অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, আ স ম আবদুর রব ও মাহমুদুর রহমান মান্নার জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সঙ্গে বিএনপি শামিল হওয়ার পর বৃহত্তর ঐক্যের সূচনা হয়। সরকারবিরোধী এই বৃহত্তর ঐক্যের মধ্যে বিভক্তির সুর বেজে উঠেছে। এত দিন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন জামায়াতের বিষয়ে আপত্তি তুলেছিলেন। নতুন করে তার সুরের প্রতিধ্বনি হয় বিকল্পধারার চেয়ারম্যান অধ্যাপক বি. চৌধুরীর কণ্ঠে। ফলে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যে জামায়াত ও বিকল্পধারা নিয়ে দুই পক্ষের মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। সরকারের প্রতি ৩০ সেপ্টেম্বর ডেডলাইন দিয়ে বৃহৎ পরিসরে নেওয়া কর্মসূচিও সামনে এগোয়নি। ড. কামাল বিদেশ থাকায় এরই মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে অনিশ্চয়তা। বিকল্পধারার সঙ্গে ঐক্যের বিষয়ে বিএনপির অভ্যন্তরে আপত্তি উঠেছে। দলের বড় অংশের দাবি, বিকল্পধারার কোনো ভোটব্যাংক নেই; বরং ভোটের মাঠে জামায়াতের রিজার্ভ ভোট রয়েছে। রাজনৈতিক এই কঠিন সমীকরণের মুহূর্তে নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিয়েও বিশ্লেষকদের মধ্যে মতভেদ দেখা দিয়েছে। বৃহত্তর ঐক্যের ফাটল ধরানোর মতোই সরকার কৌশলে বিএনপিকে ভোটের বাইরে রাখার চেষ্টা চালাবে। তবে অন্যরা বলছেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির মতো এবার নির্বাচনের কোনো সুযোগ নেই। যেকোনো পরিস্থিতিতেই বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে। রাজনৈতিক বিশ্লেষক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. আতাউর রহমান মনে করেন, এবারো কাঙ্ক্ষিত অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না। তিনি বলেন, রাজনীতিতে নানা খেলাধুলার পর মধ্য অক্টোবরে ভোটের ইস্যুতে ঐক্যের বিষয়টি চূড়ান্ত রূপ নেবে। তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মীজানুর রহমান মনে করেন, এবারের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে এবং তাতে দেশের সব দলই অংশ নেবে। তিনি বলেন, ভোটের রাজনীতি পুরোপুরি দ্বিধাবিভক্ত থাকবে; একদিকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট আর অন্যদিকে বাকি রাজনৈতিক দলগুলো। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের মতে, ভোটের রাজনীতির চূড়ান্ত মেরুকরণ হবে মধ্য অক্টোবরে। তবে বিকল্পধারার সঙ্গে বিএনপির সমঝোতার সম্ভাবনা নেই। জামায়াতে ইসলামীকে সঙ্গে নিয়েই তাদের নির্বাচনী যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হবে। অধ্যাপক আতাউর রহমান বাংলাদেশ রাষ্ট্রবিজ্ঞান সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আতাউর রহমান বাংলাদেশের খবরকে বলেছেন, রাজনীতিতে এখন খুবই গুরুত্বপূর্ণ সময়; চলছে অ্যালাইনমেন্ট ও রি-অ্যালাইনমেন্ট প্রক্রিয়া। ভোটের জন্য মধ্য অক্টোবরে রাজনীতির নতুন মেরুকরণ ঘটবে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ চাইবে আরেক টার্ম ক্ষমতায় থাকতে। তারা এবারের নির্বাচনে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে। দলীয় প্রধান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যেমন শক্তিশালী নেতৃত্ব রয়েছে, তেমনি রয়েছে উন্নয়নের রোডম্যাপ বাস্তবায়নে নতুন অঙ্গীকার। অন্যদিকে বিএনপির সমর্থক থাকলেও, নেই শক্তিশালী নেতৃত্ব। ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার রায় হলে তারা নতুন করে চাপে পড়তে পারে। অধ্যাপক আতাউর রহমান মনে করেন, বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের সূচনায় গণমানুষের মধ্যে যে ধারণার সৃষ্টি হয়েছিল, নানামুখী কর্মকাণ্ডে তার ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া হ্রাস পেয়েছে। তবে ‘ডিজঅর্ডারলি অর্ডার’র মতো বিএনপিকে মেক্সিমাম ছাড় দিয়ে ঐক্য টিকিয়ে রাখতে হতে পারে। তিনি বলেন, বিকল্পধারা দোটানায় থাকলেও আওয়ামী লীগের সঙ্গে যাওয়া তাদের জন্য কঠিন হবে। জাতীয় পার্টির অবস্থান নির্বাচনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। সেক্ষেত্রে সরকারবিরোধী বৃহত্তর ঐক্য হলে জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের কাছ থেকে বেশি সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা চালাবে। আওয়ামী লীগ সর্বোচ্চ ছাড় দিয়ে হলেও মহাজোটের ব্যানারে পুনরায় ক্ষমতায় যাওয়ার চেষ্টা করবে বলে মনে করেন অধ্যাপক আতাউর রহমান। তিনি জানান, বহুবিধ ছাড়ের সুযোগ নিয়ে ইসলামী দলগুলোর বেশিরভাগ সরকারের সঙ্গে জোটে থাকবে। ড. তারেক শামসুর রেহমান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও কলামিস্ট ড. তারেক শামসুর রেহমান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়ার ব্যানারে নয়, বিএনপি ২০-দলীয় জোটের আওতায়ই নির্বাচন করবে। বিকল্পধারার পরিবর্তে দলটি জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গেই ঐক্য ধরে রাখবে। তিনি বলেন, বিকল্পধারার নেতা মাহী বি চৌধুরীর কর্মকাণ্ডে বিএনপির মধ্যে তীব্র অসন্তোষ। বৃহত্তর ঐক্যের ক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে মাহীর সম্পর্ক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। ছেলের বিরুদ্ধে যেতে পারছেন না অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী। অধ্যাপক তারেক শামসুর রেহমান মনে করেন, ড. কামাল হোসেন আওয়ামী লীগবিরোধী অবস্থানে থাকলে, বিএনপি তাকে কিছুটা ছাড় দিতে পারে। উনি (ড. কামাল) দেশে না থাকায়, এ নিয়ে সঙ্কট রয়েছে। তবে মধ্য অক্টোবরের মধ্যেই ভোটকে সামনে রেখে রাজনৈতিক মেরুকরণ চূড়ান্ত হবে। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টির নেতৃত্ব দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছে। একপক্ষ সরকারের সঙ্গে মহাজোটে থাকার কথা বললেও অন্যরা সরকারবিরোধী জোটে কিংবা স্বতন্ত্র অবস্থান নিয়ে ভোটের পক্ষে। পরিস্থিতি সামাল দেওয়া না গেলে জাতীয় পার্টি আরেক দফা ভাঙনের মুখে পড়বে বলেও মনে করেন তারেক শামসুর রেহমান। অধ্যাপক মিজানুর রহমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মীজানুর রহমান বাংলাদেশের খবরকে বলেন, বিশাল আওয়াজ তুললেও বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য আর হচ্ছে না। বাস্তবে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্য হয় অনেকগুলো দল নিয়ে। কিন্তু এখানে দলছুট কিছু নেতার যে ঐক্য- তাতে জনগণের কোনো সাড়া নেই। ‘ত্রিভুজের দুই বাহু তৃতীয় বাহুর চেয়ে শক্তিশালী’- এই তত্ত্ব বাংলাদেশের রাজনীতিতে টিকবে না। তিনি মনে করেন, বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের নামে ‘কিংস পার্টি’র মহামিলনে বিএনপি শামিল হয়েছিল। ষড়যন্ত্র চক্রান্তে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার কিংবা কারো ডাকের অপেক্ষা ছাড়া তাদের কোনো সাংগঠনিক ভিত না থাকায় এ নিয়ে আওয়ামী লীগ বিচলিত নয়। অধ্যাপক মীজানুর বলেন, বিএনপির নেতৃত্বে সৃষ্ট শূন্যতা কাটাতে নানামুখী উদ্যোগ শেষ পর্যন্ত আলোর মুখ দেখবে না। বাস্তবে নির্বাচন হবে আওয়ামী লীগ বনাম অ্যান্টি আওয়ামী লীগ শক্তির মধ্যে। একদিকে থাকবে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট; আর অন্যদিকে আওয়ামী লীগবিরোধীরা। বিরোধী পক্ষ কোনোভাবেই সুবিধা পাবে না। কারণ নেতায় নেতায় ঐক্য হলেও ‘সাবেক নেতা’খ্যাত এসব মানুষের সঙ্গে জনগণ না থাকায় তাদের স্বপ্ন পূরণ হবে না বলেও মনে করেন তিনি।
Plot-314/A, Road # 18, Block # E, Bashundhara R/A, Dhaka-1229, Bangladesh.
বার্তাবিভাগঃ newsbnel@gmail.com
অনলাইন বার্তাবিভাগঃ bk.online.bnel@gmail.com
ফোনঃ ৫৭১৬৪৬৮১